সুফিয়ান ফারাবী ।।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইলেকশন কমিশন মাহফিলকে সাময়িক স্থগিত করে বা অনুমোদন না দিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। প্রার্থীরা ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ভোট চাইবেন, এই অভিযোগ এনে এমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
কিন্তু এটি গণমাধ্যমে আসার সাথে সাথে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। নির্বাচন করতে হলে মাহফিল কেন বন্ধ করতে হবে এমন প্রশ্ন ফেসবুকের পাতায় পাতায় ঘুরতে থাকে।
সেই সমালোচনাঝড়ের পর ইসির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এ ধরনের নির্দেশনাকে তারা তাদের পক্ষ থেকে অপপ্রচার বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে ধর্মপ্রাণ জনতা তা মানেনি এবং এর পেছনে কোনো দূরভিসন্ধি কাজ করছে বলেই মনে করছেন তারা।
এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তিন আলেম এবং ওয়ায়েজ।
খ্যাতিমান ওয়ায়েজ, মারকাজুত তারবিয়াহ’র মুহতামিম মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী বলেন, ইসির প্রজ্ঞাপনের কারণে মাহফিল বন্ধ হয়ে যায় নি। যেখানে উলামায়ে কেরামের শক্ত অবস্থান আছে, সেখানে মাহফিল হয়েছে। আর যেখানে উলামায়ে কেরাম প্রতিবাদ করতে পারেন নি, সেখানে মাহফিল হয় নি।
তিনি আরও বলেন, এখন মাহফিলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণেও কিন্তু সব জায়গায় মাহফিল হচ্ছে না বা হতে দিচ্ছে না৷
আমরা কওমি ফোরাম থেকে আল্লামা মামুনুল হক সাহেবসহ একটি সংবাদ সম্মেলনের ডাক দিতে চাচ্ছিলাম। এখন আপাতত এটি করবো না। তবে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবো ইনশাআল্লাহ।
একই সুরে কথা বলেন মারকাযুন নূর বোর্ড বাজার গাজীপুরের মুহতামিম মাওলানা রিজওয়ান রফিকী, এটা একটা ভাওতাবাজি। মাহফিল বন্ধের ঘোষণার পর আমার দুটি মাহফিল হতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। বিষয়টি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে মনে করি।
তবে এ কথা সত্য যে ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে নেতারা ভোট চান। অনেকে মনে করেন এটা ধর্মকে পুঁজি করে এক প্রকার বিনা খরচে প্রচার। সেটাও রোধ করা উচিৎ।
তিনি বলেন, মাহফিল কমিটি হয়তো সম্মানের খাতিরে নেতাদের বক্তব্যকে নিষেধ করতে পারেন না, কিন্তু মানুষ বিরক্ত হন।
কারণ মাহফিলে মানুষ দীনি কথা শুনতে আসে নেতারা সেখানে এসে নিজেদের জন্য ভোট চান। দেখা যায় বেশির ভাগ মানুষ হয়তো তাকে পছন্দ করে না। এ জন্য মাহফিলে নির্বাচনের প্রার্থীদের বক্তব্য দেয়া অনুচিত।
এ সম্পর্কে জামিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাজি বলেন, ইসি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সেটা ভালো করে যাচাই করা উচিৎ। তাহলে বন্ধ করে দিয়ে আবার চালু করার প্রয়োজন হতো না।
তবে মাহফিলে গিয়ে নেতারা ভোট চান, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। ইসি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারেন।
তিনি বলেন, দেশের ওয়াজ মাহফিল অত্যন্ত শৃঙ্খলার সঙ্গে দীন ও নৈতিকতা শিক্ষার জন্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসবে সরকার বা দেশবিরোধী কিছু বা নির্বাচনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কোনো কাজই হয় না।
তাই ইসিকে মাহফিল নিয়ে চিন্তা না করারও আহ্বান জানান তিনি।
দেরিতে হলেও ইসি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। এইজন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। মাহফিলকে কখনোই ভোট চাওয়ার জায়গা বানানো ঠিক নয়। কিছু জায়গায় দেখা যায় নেতাদের দাওয়াত না দিলে মাহফিলের অনুমতি মেলে না। তাদের নাম পোস্টারে বড় করে দিতে হয়। এটা আলেম সমাজ ও দেশের জন্য দুঃখজনক।
বলছিলেন উত্তরার বাইতুল মুমিন মাদরাসার মুহতামিম ও বিমানবন্দর জামে মসজিদের ইমাম মুফতি নেয়ামাতুল্লাহ আমিন।
তিনি আরও বলেন, মাহফিল থেকে মাদরাসা ফান্ডের বেশ আয়োজন হয়। যা দিয়ে মাদরাসাগুলো তিনচার মাস চলতে পারে। তাই এটা সাময়িকভাবে বন্ধ করাও অনুচিত। আর কেউ বন্ধ করতে চাইলে তাকে ধর্ম বিরোধী হিসেবে আখ্যা দিয়ে জনগণ তার কাজ সফল হতে দেবে না বলেই মনে করি।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ ধর্ম বিষয়ে সচেতন। তারা দীন জন্য সমস্ত ত্যাগ করতে রাজি আছে। সুতরাং তাদের ধর্মী ও দীনি অধিকার যেন রাষ্ট্র রক্ষা করে সেটি সবাইকে নজর রাখা উচিত। আশা করি এটি ঠিক থাকলে ধর্মীয় এ জনগোষ্ঠীর দ্বারা কখনোই কোনো অনৈতিক কাজ হবে না ইনশাল্লাহ।
‘স্কুলের ধর্মশিক্ষা আরো উন্নত করতে হবে’
আরআর