ফয়েজ উদ্দীন
বৃটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টে সিলেটের তিনটি নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেছে জমিয়ত। এই কৃতিত্ব শুধু জমিয়তের। তখনকার আসনটি ছিল বর্তমানের সিলেট-৪, ৫ ও ৬ আসন নিয়ে। (বিয়ানীবাজার উপজেলা থেকে শুরুকরে জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, ঘোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত)।
তৎকালীন বৃটিশ সরকারের আইন অনুযায়ী স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের ভোটে ১৯৩৮ সালে বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন তৎকালীন আসাম প্রদেশ জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক আল্লামা ইব্রাহিম চতুলী।
নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আসাম প্রাদেশিক পরিষদের শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬২ সালে এ আসন থেকে পাকিস্তান পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন জমিয়ত নেতা আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রহ.।
১৯৯১ সালে জমিয়তের সমর্থন নিয়ে ইসলামী এক্যজোটের ব্যানারে বর্তমান সিলেট- ৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন আল্লামা উবায়দুল হক উজীরপুরী রহ.।
তখনকার সময়ে বর্তমানের ১৪ দলীয় মহাজোটে থাকা দল আর ২৩ দলীয় জোটে থাকা দলগুলোর কারো জন্মই হয়নি। জমিয়তের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল শুধু মুসলিমলীগ।
জমিয়তই ছিল ভারতীয় ইসলামী আন্দোলিনের সুতিকাগার। আলেম উলামার ঘাটি হিসেবে পরিচিত এ এলাকার মানুষের কাছে নৌকা ধানের শীষের চেয়েও খেজুর গাছ দামি।
সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী পূর্ব সিলেটের এ এলাকায় নিকট অতীতের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে সিলেট-৪ আসনে একেবারে অল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে ২য় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয় জমিয়ত।
আর সারা দেশের বিভিন্ন জেলার মতো সিলেট ৫ ও ৬ আসনে ধারাবাহিকভাবে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এই সংগঠন। বর্তমানে এ তিন আসনের একাধিক নেতা স্থানীয় জন প্রতিনিধি।
বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট উপজেলায় জমিয়তের দুই নেতা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও ঘোয়াইনঘাট উপজেলায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল এ কাফেলা ।
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী প্রথম বারের মতো দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। এতে কেউ বিজয়ী না হলেও বিশাল সংখ্যক জন সমর্থন আদায়ে জমিয়তকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান তারা।
জোটের রাজনীতিতে সময়ের ব্যবধানে ৪ দল, ১৮ দল, ২০ দল, ২৩ দলীয় জোট আর ঐক্যফ্রন্ট যাই বলা হয়- মাঠে ময়দানে সক্রিয় ছিল জমিয়ত। সরকার দলের দমন নির্যাতন সহ্য করে হলেও আসনগুলোতে জোটের অন্যান্য শরিকদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে জমিয়ত।
কানাইঘাট ও ঘোয়ানঘাট উপজেলায় ২৩ দলীয় জোটের সেক্রেটারী সহ এই এলাকার সবকটি উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠন। তাই কালের বিবর্তনে জমিয়ত তার হারানো অতীত যে কোনো মূল্যে ফিরিয়ে আনতে তৎপর রয়েছে।
ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংসদে এলাকার মানুষের পক্ষে দেশ ও জাতির স্বার্থে কথা বলেছেন জমিয়তের প্রতিনিধিগণ। সুতরাং এ তিন আসন জমিয়তের এমন দাবিতে আজও তৎপর জমিয়তের নেতৃবৃন্দ।
আমাদের যৌক্তিক দাবি এ তিন আসন জমিয়তকে ছাড় দিতে হবে। ব্যতিক্রম হলে জোটই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আতাউর রাহমান, সিলেট-৫ আসনে জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ও সিলেট-৬ আসনে জেলা জমিয়ত নেতা মাওলানা আসআদ উদ্দীন আল মাহমুদকে জোটের প্রার্থী চায় জমিয়ত৷
সুতরাং জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই চিন্তা মাথায় রেখেই সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, সিলেট জেলা জমিয়ত