শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

ওয়াজে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় না; বাধা দিলে ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা যুবায়ের আহমাদ
কলামিস্ট ও মুফাসসিরে কুরআন

ওয়াজ মাহফিল এদেশের মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় জ্ঞানের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং আবহমান বাংলার শত শত বছরের সংস্কৃতি। ওয়াজ মাহফিল মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, জঙ্গিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে সমাজকে মুক্ত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে।

আলহামদুল্লিাহ এ বছরই অন্তত ১০টি মাহফিলে মাদক ও ধূমপানের রিরুদ্ধে দেড় ঘন্টার করে বক্তব্য পেশ করেছি। কয়েকটি মাহফিলে নারী অধিকার, নারীর প্রতি বৈষম্য রোধ ও সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে আলোচনা করেছি।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনের সরকরের আমলেই নির্বাচন কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে ওয়াজ মাহফিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। এবারও বিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি।

তবে যা করা হয়েছে তাতে বিভিন্ন কৌশলে ওয়াজের ব্যাপারের এতটাই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে, ওয়াজের স্বাধীন ধারা ব্যাহত হবে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ইতোমধ্যে যেসব ওয়াজ-মাহফিলের তারিখ নির্ধারণ করা আছে, সেগুলো করা যাবে।

এখানে বলা হয়েছে, যেসব মাহফিলের তারিখ নির্ধারিত হয়ে গেছে, সেগুলোতে বাধা দেবে না বরং সেগুলোর অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু দু:খজনক হলো, ঘোষণা হলো এক রকম অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক পূর্বে তারিখ হওয়া বেশ কিছু মাহফিল অনুমতি না পাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ওয়াজ মাহফিল কাওকে ক্ষমতায় বসানোর জন্যও না, কাওকে ক্ষমতা থেকে নামানের জন্যও না। এটা নিছকই ভ্রাম্যমান ক্লাস। জুমার পূর্বের বয়ানও এক ধরণের ওয়াজ। এসব ক্লাসের ওপর কৌশলে নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা কি ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন নয়?

নির্বাচন কমিশন চাইলে এ মর্মে নির্দেশনা জারি করতে পারত, ‘কোনো প্রার্থী ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ভোট চাইতে পারবে না। কোনো বক্তা কোনো প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য রাখতে পারবে না।’

নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হয় এমন কোনো বক্তব্য না দেওয়ার ব্যাপারে বলতে পারত। কিন্তু তা না করে ওয়াজের ওপর পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা! নামাজ রোজা ইবাদত, তেমনি নামাজ রোজা ও ইসলামের বিষয়ে জ্ঞানার্জনের মাহফিলও ইবাদত। ইবাদতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অধিকার কারো নেই।

৯০ ভাগ মুসলমানের এ দেশে ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে এই অনাকাঙ্খিত কৌশলী নিষেধাজ্ঞার ফলে এদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন হবে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। কড়াকড়ি ইসি আরোপ করলেও সাধরণ জনগণ মনে করবে সরকার তাদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে।

সরকার কওমি স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের ‘ইসলামের পক্ষে’ প্রমাণের যে চেষ্টা করেছে তা বৃথা যাবে। জনগণ মনে করবে, সরকারই কৌশলে এ কাজ করিয়েছে। সেজন্য নিজেদের ইমেজ রক্ষায় সরকারের উচ্চ মহলেরও এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।

হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ওয়াজ মাহফিলের ওপর এ ধরণের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি লক্ষ করেও হেফাজতে ইসলাম বা এমন প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনগুলো কার্যকর কোনো ভূমিকা নেয়নি। কেউ আপনার জামা ধরে টান দিলে যদি আপনি কিছু না বলেন, প্রতিবাদ না করেন তাহলে আরেকদিন আপনার জামা খুলে নিয়ে যাবে। তখন কিছুই করার থাকবে না।

ধর্মীয় অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়াটা নিজেদের ওপর জুলুম। এ অধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চাই। মুরব্বি আলেমরা মজবুতভাবে একটু কথা বললেই আশা করি ইসির টনক নড়বে।

হেফাজতে ইসলামসহ প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবাদের ডাক দেওয়ার সময় এখনই। জাতির অভিভাকত্ব পালনকারী সচেতন আলেমদের সবগুলো জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে জরুরি একটি বিবৃতি প্রদানের অনুরোধ করছি।

এছাড়াও ঢাকায় একটি বড় মানববন্ধন করা যেতে পারে। তাতেও সমাধান না হলে বিজ্ঞ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করে ব্যাপারটি বোঝাতে পারেন। আশা করি কাজ হবে।

তাতেও কাজ না হলে এদেশের কোটি তাওহিদি জনতাকে নিয়ে এর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে হলেও এ ওয়াজের এ স্বাধীন ধারাকে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে।

যুবায়ের আহমাদের ফেসবুক ওয়াল থেকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ