সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইস্তাম্বুলের অনন্য সৌন্দর্য ঐতিহাসিক সুলতান আহমদ মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আব্দুল্লাহ আফফান: ইউরোপে মসজিদের শহর নামে পরিচিত তুরস্কের ইস্তাম্বুল।

আন্তঃমহাদেশীয় শহর হওয়ায় এটি ইউরেশিয়ার শিল্প, সাহিত্য ও ইতিহাসের অন্যতম প্রধান মিলনস্থল। তাছাড়া ইস্তাম্বুলের সাথে জড়িয়ে আছে  মুসলমানদের সোনালী ইতিহাস। জড়িয়ে আছে বহু সুখ-দুঃখে বহু কথা।

ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত ও নয়নাভিরাম বসফরাস প্রণালীর তীর ঘেঁষে মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘সুলতান আহমেদ মসজিদ’।

বাংলাদেশে নির্বাচন

দৃষ্টিনন্দন নীল গম্বুজ ও মসজিদের দেয়ালের নীল রঙের টাইলসের কারণে এটি ‘ব্লু মস্ক’ বা ‘নীল মসজিদ’ নামে পরিচিত। অবশ্য এর অফিসিয়াল নাম ‘সুলতান আহমেদ মসজিদ’।

উসমানি সুলতান প্রথম আহমেদ ১৬০৯ থেকে ১৬১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির স্থপতি ছিলেন, তৎকালীন প্রখ্যাত প্রযুক্তি ও স্থাপত্যবিদ সেদেফকার মুহাম্মদ আগা।

কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে ‘হাজিয়া সুফিয়া মসজিদ’কে জাদুঘর বানিয়ে নিলে ব্লু মসজিদ ইস্তাম্বুলের প্রধান মসজিদে পরিণত হয়। মসজিদটিতে মুসল্লির ধারণক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার।

স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণশোভা: অটোম্যান (ওসমানি সালতানাত) স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদটির প্রযুক্তিগত সৌন্দর্য সত্যিই দারুণ ও চিত্তাকর্ষক। এটি মুসলমানদের জন্য শুধুমাত্র একটি মসজিদ নয়। বরং এটি ওই অঞ্চলের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় স্থাপত্য-নিদর্শন।

মসজিদটি তুর্কি স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ। মসজিদটির মূল একটি গম্বুজের পাশাপাশি আটটি মাধ্যমিক গম্বুজ রয়েছে। মূল গম্বুজটির উচ্চতা ৪৩ মিটার।

মসজিদের চার কোণে চারটি ও পেছনে আরো দুইটিসহ মোট ছয়টি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মিনারগুলো দূর থেকে দেখতে পেন্সিলের মতো মনে হয়। প্রধান চারটি মিনারের প্রতিটিতে স্তরবিশিষ্ট দূরত্বে তিনটি করে ব্যালকনি রয়েছে। আর অন্য দুইটিতে রয়েছে দুইটি ব্যালকনি।

মসজিদের মিনার ও গম্বুজগুলো নীল-সাদা সীসার গাঁথুনি দ্বারা আচ্ছাদিত এবং মিনার ও গম্বুজের ওপরের ভাগ সোনার প্রলেপযুক্ত তামায় নকশাকৃত।

অভ্যন্তরীণ স্থাপত্য: মসজিদের ভেতরের দিকের ছাদ এবং দেয়াল জুড়ে ২০ হাজার অত্যন্ত উঁচু মানের নীল রঙের আকর্ষণীয় টাইলস বসানো হয়েছে।

এছাড়াও হাতে নির্মিত ইজনিক সিরামিক টাইলস, প্রাচীন নিকিয়া রীতির বিভিন্ন কারুকাজের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরির পঞ্চাশটি টিউলিপ ডিজাইনের মাধ্যমে বেশ আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিমুগ্ধ করা হয়েছে।

ভেতরের পিলারগুলোতে ঐতিহ্যগত নকশা এবং গ্যালারি অঞ্চলের দেয়ালগুলোতে সাইপ্রেসীয় রীতিতে বিভিন্ন ফল-ফুলের চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। সুলতানের নির্দেশে অত্যন্ত মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল ভেতরের সামগ্রিক কাজে।

গম্বুজের ভেতরের কিছু অংশে নীল রং করা হয়েছে। এছাড়াও অত্যন্ত নিপুণভাবে ২০০টি স্বচ্ছ কাঁচ গম্বুজটিতে ছোট জানালা-খিড়কির মতো করে স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো দিয়ে প্রাকৃতিক আলো ভেতরে ঢুকতে পারে।

প্রতিটি মাধ্যমিক গম্বুজে ১৪টি করে জানালা এবং কেন্দ্রীয় গম্বুজে ২৮টি জানালা রয়েছে (৪টি নিয়মিত বন্ধ থাকে)।

জানালার রঙিন কাঁচগুলো ভেনিসের সিগনোরিয়ার পক্ষ থেকে সুলতানকে উপহার দেয়া হয়েছিল। দীর্ঘকালের শৈল্পিকতা হ্রাস পাওয়ায় অনেকগুলোই বর্তমানে পরিবর্তন করা হয়েছে।

ভেতরের দেয়ালগুলোর উপরিভাগে বাহারি কারুকাজ ও নকশাচিত্রের পাশাপাশি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। ক্যালিগ্রাফিগুলো তৈরি করেছেন, তৎকালীন সেরা ক্যালিগ্রাফার সাইয়িদ কাসিম গুবারি।

মসজিদের মেঝেতে উন্নতমানের দামী কার্পেট বিছানো। নিয়মিত সেগুলো পরিবর্তন করা হয়।

মসজিদের আয়তন ও কমপ্লেক্স: মসজিদটির দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট ও প্রস্থ ২১৩ ফুট। সুবিস্তৃত মসজিদ কমপ্লেক্সে আছে একটি মাদ্রাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার মাজার।

সপ্তদশ শতকের এই সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদ মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে আছে। মসজিদটির কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হলরুম। দেয়ালঘেরা সুপরিসর আঙিনায় রয়েছে কয়েকটি ফোয়ারা।

প্রতি বৃহস্পতিবার মসজিদের আঙিনা থেকে বসফরাস প্রণালীর (সরু জলপথ) স্বচ্ছ পানিতে সূর্যাস্ত দেখার জন্য প্রচুর লোকের সমাগম হয়।

আর রাতের বেলা বাতির আলো যখন মসজিদের মূল গম্বুজ, শাখা ও মাধ্যমিক গম্বুজ এবং মিনারগুলোর ওপর পড়ে, তখন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেটি দেখার জন্যও অনেকে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।

চোখজুড়ানো স্থাপত্যশৈলী, চমৎকার আবহাওয়া ও মসজিদ সংলগ্ন পার্কের সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে নীল মসজিদের আঙিনা সবসময় লোকে লোকারণ্য থাকে।

আরো পড়ুন-
এসেছেন আল্লামা শফী; হাইআতুল উলইয়ার বৈঠক চলছে
প্রিন্সিপাল হাবিব-আইয়ুব বাচ্চু, দুই তারকার মৃত্যু শোক প্রতিক্রিয়া; কী শিক্ষণীয়!


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ