আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক
সৌদী নাগরিক, সাংবাদিক জামাল খাশোগি সৌদি আরবে সরকারি চাকরি করতেন। রাজ পরিবারের কাছাকাছি ছিলেন। একসময় বাদশাহী শাসনের সমালোচক হয়ে উঠেন।
সমালোচকদের সৌদিতে থাকা হারাম। দেশ ছাড়লেন, আমেরিকা গেলেন, ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা শুরু করলেন, সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে বেড়াতে লাগলেন।
সৌদিতে বসবাসরত নিজ পরিবার থেকে এক সময় আলাদা হয়ে গেলেন। ডিভোর্স সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক করতে সৌদি দূতাবাসে (তুরস্কের ইস্তানবুলে) জমাও দিলেন।
দূতাবাস থেকে একদিন ফোনে ডাকা হল। বলা হলো, আপনার কাগজপত্রে ভুল আছে, ঠিক করার জন্য আসতে হবে।
২০১৮ এর ২ অক্টোবরের দুপুর সোয়া একটায় তিনি তার তুরষ্কের বাগদত্তা (হবু বউ) কে বাইরে রেখে এবং তার কাছে স্মার্ট ফোনটি দিয়ে একটি অটো রেকর্ড এর ঘড়ি পরে দূতাবাসে ঢুকেন। হবু বউকে বলে যান আমার কিছু হলে রাষ্ট্রীয় অমুক উপদেষ্টাকে জানাবে।
তিনি আর বেরিয়ে আসেন নি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী একই সময়ে সৌদি থেকে আগত কিলিং স্কোয়াডের ১৫ জন সদস্য যারা আগে থেকেই দূতাবাসে অবস্থান করছিলেন, তাদের কর্তৃক রাষ্ট্রদূতের পাশের পাঠকক্ষে ৭ মিনিটেই তাকে হত্যা করা হয়।
গোংগানী বা চিৎকারের শব্দ তার ঘড়ির মাধ্যমে বাইরের ফোনে চলে যায়। জীবিত অবস্থায়ই তাকে কয়েক টুকরা করা হয়। শেষ খবর এরকমই। দুনিয়াজোড়ে মিডিয়ায় এখন এটাই হট নিউজ।
মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন; সুখ দুঃখের ঘর সংসার
জামাল খাশোগি হত্যার খবর প্রতিদিন আপডেট হচ্ছে। তাই সঠিক ঘটনা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, নতুন নতুন আপডেটে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত তুরষ্ক ছেড়ে রিয়াদ চলে গেছেন। তার বাড়ি পুলিশ সার্চ করেছে। হত্যার প্রমাণ এখন পুলিশের হাতে। যুবরাজের একজন নিকটজনসহ ৪ জনের নাম তারা জেনেছে। বলা যায় যুবরাজ ধরাই খেয়েছেন।
এবার আসি মেরুকরণ এর কথায়। জামাল খাশোগি হত্যার সাথে সাথেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবকে কঠিন শাস্তির হুমকি দিলেন। ইইউ, ইউএন, ফ্রান্স কড়া সমালোচনায় মেতে ওঠে, রিয়াদের আসন্ন বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেমিনারে যোগদান বাতিল করা হল, বৃটিশ ধনকুবেররাও তাদের বিনিয়োগ বাতিলের ঘোষণা দিলেন।
তুরস্ক তাদের হাতে আটক মার্কিন গুপ্তচরকে ছেড়ে দিয়ে মার্কিন সম্পর্ক ঝালাই করে নিল।
এমন কঠিন অবস্থায় সৌদি আরব পাল্টা হুমকি দিয়ে আমেরিকাকে কাঁপন ধরিয়ে দিল।আমেরিকার অস্ত্রচুক্তি বাতিল, চিনের মুদ্রা ব্যবহার, রাশিয়ার সৈন্য ডেকে আনার বিষয়গুলো যখন সামনে চলে আসল, আমেরিকা যেন প্রমাদ গুনল।
ট্রাম্প সুর বদলাতে শুরু করলেন। তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেওকে জরুরি সৌদি পাঠালেন। এবার ট্রাম্প বললেন, তিনি সৌদি বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের সাথে কথা বলে মনে করেন, এটি দুর্বৃত্তরা করেছে। এবার মার্কিন সিনেটররা চটে গেল। তারা ট্রাম্পকে, সৌদি আরবকে অস্ত্র না দিতে বলল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট কয়দিন আগে বলেছিলেন, তাদের সাহায্য ছাড়া সৌদি আরব দুই সপ্তাহও টিকবে না। জবাবে যুবরাজ বলেছিলেন মার্কিন সাহায্য ছাড়া আমরা দুই হাজার বছর টিকে থাকব।
এরকম বাকযুদ্ধের মধ্যেই খাশোগি ইস্যু ঘি ঢেলে দেয়। নাকি এটি কোনো চক্রান্ত বুঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। অবশ্য এত ঘিলু আমাদের নেই।
অনেকেই মনে করতে থাকেন, এবার সৌদি ইরানের কাছাকাছি চলে আসবে, তাদের ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাতের ইতি ঘটবে। তুরষ্ক ইরান সৌদি সম্পর্ক মজবুত হবে৷ ইত্যাদি ইকুয়েশন শুরু হল বুঝি৷ রাশিয়া এ সুযোগ গ্রহণ করবে। সৌদির পয়সায় ইসরায়েলকে পোষার দিন ঘনিয়ে আসছে।
কিন্তু না, মেরুকরণটি হতে গিয়েও হল না। আমেরিকা, আমেরিকাই। তাদের দেশ, দেশের স্বার্থে সবকিছুই করতে পারে। ট্রাম্প তাকেই হুমকি দিল, আবার তার কাছে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে পাঠাল৷
এখানে খাশোগি হত্যার গুরুত্ব হারাতে শুরু করল। এমন নির্লজ্জতা দেশের স্বার্থে পারে না শুধু মুসলিম দেশগুলো। এর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে মুহাম্মদ বিন সালমানের। চলমান নাটকের হিরো সে।
এর থেকে শিক্ষা নিয়ে সে ইয়েমেন ও কাতার এর সাথে সংঘাত বন্ধ করতে পারে। উত্তর কোরিয়ার কিম থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যায় না? দুই কোরিয়া একত্র হওয়ার পথে। কিম পারলে যুবরাজ মুহাম্মদ পারবে না কেন?
মনে রাখতে হবে, তার সময়ে বহু হাজি পদতলে মারা গেল, পরের বছর ক্রেন পড়ে কয়েকশ হাজি মারা গেল, এ বছর কাবার গিলাফ খুলে গেল, কিসের ইংগিত এগুলো?
বহু ইমামকে তিনি জেলে ভরেছেন, সমালোচকদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছেন। এগুলো কোন ভালো কাজ নয়।
মুহাম্মদ ইবনে সালমান সমালোচকদের হত্যামিশন বন্ধ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে একত্র করে তথা ইয়ামেন-কাতারের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে একটি নজির স্থাপন করে ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে নাম লিখাতে পারেন।
বাংলাদেশকে তো তিনি সবার আগে কাছে পাবেন। আল্লাহ তৌফিক দিক।
খাশোগি ইস্যু; সৌদির বিরুদ্ধে কী করতে পারেন এরদোগান?
-আরআর