আলী আবদুল মুনতাকিম
প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক
বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই জানেন যে আলো বস্তুর মত দেখা যায় না, কোনো বস্তুর ওপর আলো পতিত হলে আমরা বস্তুটি দেখি, আলো দেখি না ৷ আলোকে ৩ টি গুণে যথা, প্রতিফলন, প্রতিস্বরণ ও অভিশোসন রূপে আমরা আপাত দৃষ্ঠিতে মনে হয় দেখি, অনুভব করি কিন্তু আলো আসলে দেখা অর্থে দেখা যায় না বা ধরতে পারি না।
যে বায়ু ফুসফুসে টেনে নিয়ে বেঁচে আছি, যে বায়ু সবচেয়ে স্বচ্ছ অথচ তার ওপর ভর করে ৬০০ টনের কার্গো বিমান আকাশে উড়ে, সে বায়ুকেও দেখি না বা ধরতে পারি না, কিন্তু জোড়ালো অনুভব করি। বিশ্লেষণ করি।
ডাবল স্ট্যন্ডার্ড-বইটি কিনতে ক্লিক করুন
প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করা যায়, দেখানো যায় না বা কোন ল্যাবে ব্যথা টেস্ট ও করা যায় না।আবেগে চোখে জল আসে, আবেগ দেখা যায় না, আবেগ মাপাও যায় না। হ্রদয়-মন কাঁদে আবার হাসে, হ্রদয়-মন কে দেখাও যায় না, ধরা যায় না, মাপাও যায় না।
বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিগ ব্যাং কেউ দেখে নাই, তাকে ধরা হয় নাই, ছোঁয়া যায় নাই, কোনো ল্যাব এ টেস্ট ও হয় নাই।
বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জি লেমেটার ১৯২৭ সালে যে বিগব্যাং এর তত্ত্বের কথা বলেন আধুনিককালে সদ্য প্রয়াত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং A brief history of time বইতে বিশদ ব্যাখ্যা দেন বিগ ব্যাংয়ের। সবাই বিশ্বাস করল কেউ প্রশ্ন তুলল না।
ব্ল্যাকহোল-হোয়াইট হোল ধরা-ছোঁয়া-দেখা ছাড়াই সবাই বিশ্বাস করছে। কারণ যথেষ্ঠ তত্ত্ব-উপাত্তের কথা বলা হয়।
মহাকাশবিদগণ ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে প্রমাণ পেয়েছেন অতিমাত্রার ভর বিশিষ্ট একটি ব্লাকহোলের যার ভর আমাদের সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন গুন বেশি এবং এটি আমাদের আকাশগঙ্গার মাঝখানে অবস্থিত।
আমাদের গ্যালাক্সিতে সম্ভবত ১০০ মিলিয়ন ব্ল্যাকহোল রয়েছে। জ্যোতি-বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি সেকেন্ডে একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। আরেক ধরনের ব্ল্যাকহোল হল সুপারমেসিভ ব্ল্যাকহোল।
তাদের গহবরে এক মিলিয়ন তারার ভর বা বিলিয়ন তারার ভরও থাকতে পারে। (এখানে বলে রাখি সুপার মেসিভ ব্ল্যাকহোলরা কোনো গ্যালাক্সির মিলিয়ন বা বিলিয়ন তারাকে একত্রে ধরে রাখে। আমাদের গ্যালাক্সিতেও কিন্তু একটি সুপার মেসিভ ব্ল্যাকহোল আছে। সেটির নাম Sagittarius A, যা আবিষ্কৃত হয়েছিল ৪০ বছর আগে।)
কেমন অাছে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুরা?
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল, দেখা না গেলেও, ধরা না গেলেও, ছোঁয়া না গেলেও, ৫ টি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য না হলেও বা আমার মগজে বুঝবার শক্তি না থাকলেও শক্ত যুক্তি ও সূত্র দিতে পারলে কোনো অস্তিত্বকে বিশ্বাস করা যায়, বা করতে হয়। বিজ্ঞানীদের কথা দিয়েই আমি দেখালাম।
তাহলে আল্লাহকে বিশ্বাস করবার জন্য তাকে দেখতে হবে, প্রমাণ লাগবে, পঞ্চ ইন্দ্রিয় এর গ্রাহ্য করা লাগবে, যুক্তি লাগবে, একটু এগিয়ে বললে তাকে সামনেই দেখা লাগবে, কথা বলা লাগবে, তাকে ছোঁয়া লাগবে, যেন মুসার উম্মতদের বা মহানবীর সময়ের কাফেরদের আবদারের মত।
নাস্তিকগণ ডিবেটিংয়ে এসে তাই আবদার করছে। এক নাস্তিক দিন কয়েক আগে দেখলাম বলছে, আমাকে পঞ্চ ইন্দ্রিয়’র মাধ্যমে গডকে বুঝতে হবে।
তার উদ্দেশে আমার কথা, ক্লাস টু/থ্রি’র ছাত্রকে মঙ্গল গ্রহের পাথফাইন্ডার এর অবতরণ এর মেকানিজম বা ব্ল্যাকহোল বুঝানো সম্ভব কিনা? না, কারণ তার মগজের ক্ষমতার বাইরে এগুলো।
তাই লক্ষ-কোটি মিল্কওয়ে বা গ্যালাক্সি বা পৃথিবীর স্রষ্টা নিয়ে বুঝবার মগজ তো আমার আপনার বা কোনো নাস্তিকের নাই। মানুষ ব্ল্যাকহোলের ধারণা থেকে বর্তমানে হোয়াইটহোলেরও খবর নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। স্ট্রিং থিওরি নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই।
আমরা জানতাম, বিজ্ঞানীরা বললেন- বস্তুর সর্বশেষ ক্ষুদ্র কণা অনু, তার পরের স্টেজের বিজ্ঞানীরা বললেন, তার পরে আছে পরমাণু, তার পরের স্টেজের বিজ্ঞানীগণ বললেন, না পরমাণুর পরে আছে ইলেকট্রন-প্রোটন-নিউটন।
পরের বিজ্ঞানীরা বললেন, না ইলেকট্রন-প্রোটন-নিউটন একই কণার তিনটি রূপ। সেটি ফোটন বা আলো। অবশ্য তা আমরা পরিষ্কার হব স্ট্রিং থিওরি’র গবেষণা শেষ হলে।
কুরান যে বলেছে আল্লাহ পাক হচ্ছেন, ‘নূরুন আলা নূর’ আলোর ওপর আলো। প্রতিটি বস্তুর পেছনে তিনিই আলো। এটার একটা ব্যাখ্যা কি নাস্তিক ভাইদের কাছে আছে? বিজ্ঞান যে সেদিকেই ছুটছে?
ইদানিং আল্লাহ পাক এর নামটি হাফেজ মুফতি মাসুদসহ তার বন্ধুরা বিকৃত করে নিচ্ছেন। বরং ঈশ্বর বলায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। ভাল কথা। কিন্তু মাসুদ দিন কয় আগে ঈশ্বরের যে বর্ণনা দিয়েছেন তার কথা গুরুত্ব দিতাম না যদি হাজারো ভিউয়ার এটা নিয়ে মন্তব্য না করত বা প্রশংসা না করত। যদিও লেখাটা ভুলে ভরা, তবুও তার মূর্খ প্রশংসাকারীর অভাব নেই।
এ পর্যন্ত বহু প্রশ্ন আমি মাসুদসহ তার বন্ধুদের করেছি, আমার একটি প্রশ্নেরও জবাব সে বা তারা দিতে পারেনি। কিন্তু তার ভিউয়াররা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছে এসবে৷ আজকের লেখাটা তাই তার ভিউয়ারদের উদ্দেশ্যে করেই লিখলাম।
মুফতি হাফেজ মাওলানা বর্তমানে নাস্তিক আব্দুল্লাহ মাসুদ লিখেছে, মানুষই তার ভগবান, দেবতা বা ঈশ্বরকে তার মত করে বানিয়েছে। তাই ভারতের ঈশ্বর একরকম, নেপালের একরকম, আরবের ঈশ্বর আরেক রকম। আসলে ঈশ্বর বলে কিছু নেই।
কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন
সে বলেছে আরবে ফুল ছিল না তাই ফুলের কথা কুরানে নেই। এবার তাকে বলি, এখন যদি বলা হয় আরবে কাঠাল ছিল না, তাই কুরানে কাঠাল নেই। ১৮০০০হাজার মাখলুকাতের জন্য একটি আয়াত করে লিখতে গেলে তো কুরানের ১৮০০০ আয়াত হত। এটা কি জরুরি ছিল?
ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। আগেই বলেছি, স্রষ্টার অস্তিত্বের বিষয় বুঝবার মগজ তাদের বা আমাদের নেই। সে বলেছে, মানুষ তার মত করে ঈশ্বর বানিয়েছে। তার এই কথা অসাঢ়, কারণ আল্লাহই মানুষকে নানা বর্ণে, গোত্রে, জাতিতে সৃষ্টি করেছেন মানুষেরই মঙ্গলের জন্য।
পবিত্র কুরানে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্ঠি করেছি, তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা (এর মাধ্যমে) একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার, কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমাদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ম ওই ব্যক্তি, যে (আল্লাহ তায়লাকে) বেশি ভয় করে। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা সব কিছু জানেন, সব কিছুর (পুঙ্খানুপুঙ্খ) খবর রাখেন। -সুরা হুজরাত
কুরানের আর একটি সর্বাধিক পঠিত বা পাঠরত ও গুরুত্বপূর্ণ আয়াত দিয়ে লেখাটি শেষ করছি,
‘তাদের বর্তমান ভবিষ্যতের সবকিছুই তিনি জানেন, তার জানা বিষয় সমূহের কোনো কিছুই (তার সৃষ্টির) কারো জ্ঞানের সীমা পরিসীমার আয়ত্বাধীন হতে পারে না, তবে কিছু জ্ঞান যদি তিনি কাউকে দান করেন (তবে তা ভিন্ন কথা)।’
আল্লাহর জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করা যাবে না যতক্ষণ তিনি অনু পরিমাণুর পারমিট না করেন। বামন নাস্তিক ভাইরা চাঁদকে দুই হাতে ধরে নামিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন।
লাভ নাই, আল্লাহপাক আল্লাহই আছেন৷ গোটা পৃথিবীকে যেখানে মাছির ডানাও মনে করা হয় না, সেখানে আমার আপনার অস্তিত্ব কোথায়? দয়া করে হেদায়াতের পথে আসুন।
নাস্তিক ভাইরা ফিরে আসুন; বিষয়গুলো ভাবুন!
-আরআর
[মালিবাগে চালু হয়েছে অত্যাধুনিক হিজামা সেন্টার। নবীজি সা. নির্দেশিত এ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে সুস্থ থাকুন। হার্টের রোগ, কিডনির, লিভারের ও স্ট্রোকসহ শরীরের বাত ব্যথার জন্য খুবই উপকারী হিজামা: যোগাযোগ ০১৮৫৮১৪১৮৪৬]