আবদুল্লাহ তামিম: ইউরোপের সবচে বড় মসজিদ জার্মানিতে অবস্থিত। দেশটির কোলেন শহরে নির্মিত এ মসজিদটি জার্মানির বৃহত্তম মসজিদ।
এটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোরও অন্যতম। মসজিদটি ‘কোলেন সেন্ট্রাল মসজিদ’ নামে পরিচিত।
সম্প্রতি মসজিদটি উদ্বোধন করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যিব এরদোগান। কোলনের কেন্দ্রীয় এ মসজিদ একটি মুসলিম সংস্থা নির্মাণ করেছে।
তাদের সাথে তুরস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে । ৩০ লাখ তুর্কি নাগরিক জার্মানিতে বাস করেন। তাদের বিশাল একটি অংশের বাস কোলনে।
জার্মানিতে প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯১৫ সালে। ইসলামি আর্কাইভের তথ্যানুযায়ী, জার্মানিতে ৩০০টির মতো মসজিদ রয়েছে।
কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন
দুই হাজার ৬০০টির মতো নামাজঘর রয়েছে, যেগুলোকে ছোটখাটো মসজিদ হিসেবে গণ্য করা যায়। আরো প্রায় ১৮০টি মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পের কাজ চলছে।
জার্মানিতে মুসলমানদের আগমনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় জার্মানিতে মুসলমানদের উত্থান ও ক্রমবৃদ্ধির কয়েকটি কারণ আছে।
মুসলিম স্পেন মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সাহিত্য, দর্শন-চিন্তা ইত্যাদি তত্কালীন ইউরোপে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।
তখনকার স্পেন ও জার্মানির মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কও বিদ্যমান ছিল। তার সূত্র ধরে ইসলামের সঙ্গে জার্মানির পরিচয়।
জার্মানরা ক্রুসেড যুদ্ধের কারণে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানার সুযোগ পায়। এই যুদ্ধে স্পেন ও জার্মানির রাজাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল।
আবার ৯৯৯ থেকে ১৫৯০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় ইউরোপের মতো জার্মানিতেও প্রাচ্যবিদদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মার্টিন লুথার বিকৃত অনুবাদ সত্ত্বেও কোরআন অধ্যয়ন করেছিলেন। তখন প্রাচ্যবিদরা ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা শুরু করেন।
তাদের কেউ কেউ ইসলামের সুমহান সাম্যনীতি, শিক্ষা ও মানবতার প্রতি মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
এ ছাড়াও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা ওসমানিদের (অটোম্যান) সঙ্গে মৈত্রী সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এ সুবাদেও তারা ইসলামের সঙ্গে কিছুটা পরিচিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ফলে ইসলাম সম্পর্কে তাদের নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে থাকে এবং কিছু জার্মান ইসলাম গ্রহণ করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের হাতে অনেক যুদ্ধবন্দি ছিল। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার।
এদের মাধ্যমেও জার্মান নাগরিকরা মুসলমানদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
মুক্তির পর তাদের অনেকে জার্মানিতে রয়ে যায় এবং সেখানে জীবনযাপন শুরু করে। ষষ্ঠত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কিছুসংখ্যক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জার্মানিতে গমন করে। এতে জার্মানিতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
জার্মানিতে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় ১৯৩২ সালে।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে কয়েকটি করে ইসলামিক সেন্টার ও মাদরাসা রয়েছে। যেগুলো জার্মান মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক দৃঢ়করণে ও জ্ঞানভিত্তিক যোগ্যতা এবং পুঁজি বৃদ্ধিতে, নতুন নতুন মাদরাসা-ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা, গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কিতাবাদি জার্মান ভাষায় অনুবাদের ক্ষেত্রে ও ধর্মীয় আবহ টিকিয়ে রাখতে বেশ সহায়তা করে যাচ্ছে।
১৯৯৭ সাল থেকে জার্মানির মসজিদগুলোতে বার্ষিক ‘উন্মুক্ত মসজিদ দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে।
যাতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য-শোভা তুলে ধরা হয় এবং বিভিন্নভাবে ইসলামের যথার্থতা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
আরো পড়ুন-
সারা বিশ্বে ৪৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকতে পারে ইন্টারনেট
মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনের ১০ দফা দাবি
অ্যারাবিক ক্যালিগ্রাফিতে ধর্মীয় প্রশান্তি অনুভূত করি: আফসানা মিমি