সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

কোথায় ফেঁসে যাচ্ছি, কোন ফাঁদে পা দিচ্ছি খেয়াল রেখ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মু. সগির আহমদ চৌধুরী

আল্লামা শাহ আহমদ শফী, মুফতী ইজরুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম, কওমি সনদ ও প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা ইত্যাদি যে পক্ষেই যাই কিছু না কিছু গুলিয়ে ফেলতে পারি এমন শঙ্কা থেকে নীরবতা অবলম্বনের পরামর্শ ছিল।

আসলে আমাদের জন্য জরুরি ছিল সতর্কতা অবলম্বনের; সমস্যার গভীরে গিয়ে এর মূল উপসর্গসমূহ অনুধাবন করা। তা না হওয়ায় আমরা অনেকে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছি; কার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবো কিংবা কার পক্ষে লড়াই করবো সেই সংকটে পড়েছি।

আবার অনেকে আছি বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কাউ কাউকে আমাদের অপছন্দ বলে তাদের বক্তব্যের খণ্ডিতাংশকে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছি এবং তাদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছি।

ইসলামি শিক্ষা সিরিজ: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিধান এবং বৈজ্ঞানিক অবদান

আর এর মাধ্যমে কারো বিরুদ্ধে মনের ক্ষেধ থাকলে সেটাও মিটিয়ে নিচ্ছি। একজন দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে এই তামাশার বিকৃত আস্বাদ আমাদের জন্য মোটেও শোভনীয় হচ্ছে না।

কওমি মাদরাসাসমূহের চেতনার মূল জায়গা হচ্ছে দারুল উলুম দেওবন্দ। ঐতিহ্যের সেই দেওবন্দ আন্দোলনের নিজস্ব, স্বকীয় ও স্বতন্ত্র চিন্তাধারা, মাসলাক ও মানহাজ রয়েছে। যা সব ধরনের বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত, মধ্যপন্থার অনুসারী এবং উম্মাহর ইসলাহে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ বলে প্রমাণিত।

সমস্যা হচ্ছে, আমরা কওমি মাদরাসাসমূহকে সেই চেতনার আলোকে, তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এবং তার স্বতন্ত্র দর্পনে দেখছি না। আমরা তাকে বিচার করছি বিভিন্ন রাজনীতিক নজরিয়াতে, রাজনীতিক স্বার্থবিবেচনায় তাকে বিশ্লেষণ করছি এবং রাজনীতিক মতলব থেকে তার ওপর নানা ধরনের সিদ্ধান্ত চেপে দিতে চাইছি।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী, মুফতী ইজরুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, হেফাজতে ইসলাম, কওমি সনদ ও প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা ইত্যাদি বিষয়ে কওমি অঙ্গনে যে অস্থির ও নাজুকতম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার এটাই একমাত্র কারণ।

শুরু থেকে বিএনপি এবং সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগের প্রভাব-বলয় সৃষ্টি, রাজনীতিক স্বার্থে ব্যবহার এবং দলীয় ধারা তৈরির জন্য কওমি অঙ্গনে একটা সক্রিয় প্রয়াস চলছে। মূল সমস্যাটা এখান থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর নামে যে-বাদানুবাদের কথা প্রসার করা হয়েছে এর বাহ্যিকতা কওমি মাদরাসাসমূহের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মনে হলেও বস্তুত এর সাথে দেওবন্দ আন্দোলনের মানহাজ-মাসলাক ও চিন্তাধারার সাথে কোনো সম্পর্ক নেই।

এখানে মূলত দু’জন বিশিষ্ট মনীষীকে সামনে রেখে কিছু বকধার্মিক ভক্তি-ভালবাসার দাবিদার লোক অত্যন্ত সন্তর্পণে কওমি মাদরাসার ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাবকে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।

একথা অত্যন্ত তিক্ত ও বিরক্তিকর হলেও সত্য যে, এ-ধরনের লোকগুলোই কওমি অঙ্গনে স্বতন্ত্র রাজনীতিক শক্তি গড়ে ওঠার সবচেয়ে গোঁড়া বিরোধী, বড় প্রতিবন্ধক এবং কঠিন বাধার সৃষ্টিকারী।

আপনি কোন পক্ষে যাবেন, কার বিরোধিতায় অবতীর্ণ হবেন। নিকট অতীত ঘেঁটে দেখুন, তাদের অধিকাংশই ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে চরম প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ করেছে।

আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সেবায় তাদের নিকট অতীতের ইতিহাস ও কলঙ্কজনক অবদানের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ইসলামী রাজনীতি বিনাশের প্রশ্নে একজোট হয়ে কোমার বেঁধে ঝাপিয়ে পড়তে কোনো দ্বিধা ছিল না তাদের।

কাজেই তাদের কারো বক্তব্য-বিবৃতিকে অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তামাশা আস্বাদন করার সুযোগ নেওয়া যাবে ঠিক, যা একজন দায়িত্বশীল মুসলিম হিসেবে কারো জন্য শোভনীয় নয়।

কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপিকে রাজনীতিকভাবে লাভবান করে দিচ্ছি কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের উচিত, আমরা কোথায় ফেঁসে যাচ্ছি, কোন ফাঁদে পা দিচ্ছি সে দিকে সযত্নে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং একই সঙ্গে এ-ক্রীড়নক চক্রকে চিনে রাখাও আমাদের জন্য অতীব জরুরি।

একশ্রেণির লোক হেফাজতে ইসলামকে কওমি স্বীকৃতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে, শাপলা ট্রাজেডিকে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনাকে মিশিয়ে ফেলছে। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, এই মিশেলটা করা হচ্ছে একান্তই রাজনীতিক স্বার্থে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।

হেফাজত ও কওমি মাদরাসা দুটো ভিন্ন প্রতিষ্ঠান, শাপলা ও স্বীকৃতি সম্পূর্ণ পৃথক বিষয়। সরকারের সঙ্গে এক ইস্যুতে বিরোধ, অন্য ইস্যুতে সমঝোতা হতে পারে না? কওমি মাদরাসার স্বীকৃতির ব্যাপারে বিএনপির আপত্তি ছিল না বটে, কিন্তু হেফাজতের তের দফার সঙ্গে কি বিএনপির ঐক্যমত ছিল?

একথা কি অবাস্তব যে, বিএনপি হেফাজতের আন্দোলনের বেনিফিশিয়ারি লাভ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তের দফার একটির সঙ্গেও তাদের নূন্যতম ঐক্যমত ছিল না। এখানেও তো এক ইস্যুতে ঐক্যমত এবং অপর ইস্যুতে মতভিন্নতা দেখতে পাই!

তাহলে গোলানো-মেশানের এ কারবার কেন? এটা ইচ্ছেত করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির স্বার্থ রক্ষার জন্য। শাপলার শহীদদের জন্য জলো জলো চোখ, ছিঁচকাঁদুনে মুখমন্ডল এবং মুখরোচক স্লোগান শুনছি আর দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু হাকিকত অনেকটা ভিন্ন, সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বিগত ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারই প্রথমবারের মতো কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী সরকার ওই বছরের ২৯ আগস্ট এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিল।

এ হিসেবে স্বীকৃতির সূচনা কৃতিত্ব বিএনপির, কথাটা আমাদের ভুলে যাওয়া চলে না। তবে এটি কার্যকর করার দায়িত্ব ছিল পরবর্তী সরকারের। দেরিতে হলেও বর্তমান স্বনির্বাচিত সরকার খোদগরজে সে-দায়িত্বই পালন করেছে।

কিন্তু এতে বিএনপির কৃতিত্ব কমে যায় কিনা সেই শঙ্কা থেকে কওমি অঙ্গনে বিএনপিস্বার্থের পাহারাদাররা বাধ সেধে বসে। প্রথম প্রথম বলাবলি করল, ‘স্বকীয়তা-স্বাতন্ত্র ও ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে স্বীকৃতি চাই না।’

রাজনীতিতে ধর্মীয় ইমেইজ তৈরি, ধর্মবিদ্বেষের বদনাম ঘোচানো এবং ইসলামের খেদমতে আওয়ামী লীগের অবদানের পর্দ্দ প্রস্তুতের প্রয়োজনে সরকার নাক-কান বন্ধ করে সব শর্ত মেনে নেয়।

জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে ইসলামী দলগুলো কতটা সতর্ক?

উরদু-ফারসি মেশানো নাম-ঘাট, উসুলে হাশতেগানা ও চার মূলনীতিসহযোগে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ঘোষণা করেন ওলামায়ে কেরামের এক সর্বোচ্চ মজলিসে।

যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ, সরকারের রাজনীতিক সমর্থক ও প্রতিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী এমনকি যারা দু’দিন আগেও চরম বিদ্বেষ পোষণ করতেন তাঁরাও হাজিরি দিয়েছিলেন। বিএনপি সমর্থকদের মাথায় যেন ঠাডা পড়ল।

তারা নতুন করে বলতে শুরু করল, ‘সরকার বোকা বানিয়েছে হুযুরদের, মুলো ঝুলিয়ে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতেই স্বীকৃতির নাটক ম স্থ করেছে। ঘোষণা দিলেও কার্যকর করবে না ইত্যাদি।’

অতঃপর ১৩ আগস্ট ২০১৮ (সোমবার) কওমি সনদের স্বীকৃতি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয় সরকার। এতে তাদের অশান্তি আর বেড়ে গেল, বলতে লাগল, ‘এটি খসড়া, চূড়ান্ত হয়নি এখনো, আভি রাস্তা বহুত দূর হে, জাতীয় সংসদে পাশ করবে না সরকার, দেখবে।’

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ছিল সংসদের শেষ অধিবেশন। যেকোনো কারণেই হোক সংসদ-অধিবেশনের কার্যতালিকায় কওমি সনদের স্বীকৃতি বিলটি ছিল না। আর এতেই তারা শুরু করে দেয় মায়াকান্না, ‘দেখেছ দেখেছ! বলেছিলাম না, সরকার বিলটি আইনটি পাশ করবে না?’

অবশেষে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বুধবার) এ-সংক্রান্ত ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর অধীন ‘কওমি মাদরসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমিল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান বিল ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

এরপর এলো আরেক বিড়ম্বনা: ‘১১ আইনে রাষ্ট্রপতির সম্মতি, নেই কওমি সনদের স্বীকৃতি বিল’— এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জ্ঞাপনের প্রতিযোগিতা।

শেষমেষ ৮ অক্টোবর ২০১৮ (সোমবার) মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ কওমি সনদের স্বীকৃতি আইনে স্বাক্ষর করেন এবং আইনটি চ‚ড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এখন তারা নতুনভাবে আর্ভিভূত হয়েছে, বুযুর্গির ভাব-আবরণে।

কান্না জুড়ে দিয়েছে কওমি তো গেল গেল বলে। অথচ এই মানুষগুলোর নিরান্নব্বই শতাংশই কওমি মাদরাসায় পড়াশোনা, এখানকার তরয-তরিকা, পঠন-পড়ন, নিয়ম-কানুন, নিসাব-নিযামকে ঘৃণ্য-গর্হিতভাবে অপছন্দ করে এসেছিল।

‘কওমি তো গেল গেল’ বলে যারা মায়াকান্না করছে এদের অধিকাংশই কওমি মাদরাসার পাঠ চুকিয়েই দ্রুত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা, ডিগ্রি ও কর্মসংস্থান জুটিয়ে নিয়েছে।

অবশ্য একথাও অস্বীকার করার কোনো জো নেই যে, আওয়ামী লীগ সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করেছে খোদগরজে, রাজনীতিক স্বার্থে, ক্ষমতাকেন্দ্রিক ফায়দার জন্যেই।

সরকার এ স্বীকৃতি অনেকটা জোর করে, ধরে-বেঁধে এবং যেচে গছিয়েছে কওমি মাদরাসাকে।

সরকারের নমনীয়তায় ওলামায়ে কেরামের যখন মনে হলো এ স্বীকৃতি নিতে ক্ষতি নেই, তখনই কেবল স্বীকৃতি তারা গ্রহণ করেছেন।

সবচেয়ে আনন্দ ও খুশির ব্যাপার হচ্ছে, এই একটি ক্ষেত্রে কওমি অঙ্গনের অধিকাংশ শিক্ষাবিদ, ওলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ও আকাবির উস্তাযবৃন্দ সকলেই ঐক্যমত পোষণ করেছেন।

এ অবস্থায় কওমিয়তের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার মতো ক্ষুদ্রদের অতিভাবনার কোনো প্রয়োজন নেই বলে আমার মনে হয়। যারা এ নিয়ে কান্না জুড়ে দিয়েছে, মনে করি এসব মায়াকান্না ছাড়া কিছুই নয়।

কারণ এতোগুলো বড় বড় মানুষ মিলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা গলত হতে পারে না, ঐক্যমতের ভিত্তিতে যদি ভুল সিদ্ধান্তও তারা নিয়ে থাকেন হয় তাহলে পরবর্তীতে তারা সঠিক সময়ে ভুল থেকে বেরিয়েও আসতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। কাজেই আপতত তাদেরই ওপর আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস জমিয়ে রাখলাম।

কওমির মুরব্বি ও অভিভাবকদের ওপর আস্থা রেখেছি বলেই হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীকে সংর্বধনা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বিরোধিতা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এ-সংবর্ধনার সঙ্গে ব্যক্তি আল্লামা শাহ আহমদ শফী, হেফাজতে ইসলাম কিংবা এককভাবে বেফাক বা দারুল উলুম হাটহাজারীর সম্পর্ক নেই।

১ অক্টোবর ২০১৮ হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত হাইয়াতুল উলিয়ার অন্তর্ভুক্ত ৬টি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের সর্বসম্মত উদ্যোগেই এ সংবর্ধনার সিদ্ধান্ত হয়েছ।

তবে একথা অবশ্যই অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীনভাবে বলবো, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনীতিতে যাদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব আছে তারা এই সংবর্ধনায় কিছুতেই অংশ নিতে পারেন না।

স্বীকৃতির ঘোষণা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে গণভবনে ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দের যাওয়া ঠিক হয়নি। সংবর্ধনার উদ্যোগ, অনুষ্ঠান এবং সেখানে অংশগ্রহণ সবই তাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

এটি আদর্শিক স্বাতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন, ইসলামের আদর্শিক মর্যাদা রক্ষায় এটি আবশ্যক, নেতৃত্বের ব্যক্তিত্ব সমুন্নত রাখতে এর অন্যথা হতে পারে না।

এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক তার পৃথক ব্যক্তিসত্তার অজুহাত কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, রাজনীতিতে আত্মমর্যদার প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেফাক-হাইয়াতুল উলিয়া থেকে পদত্যাগ করতে হলে সেটিই করা উচিত।

কারণ স্বতন্ত্র-স্বকীয়তা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে রাজনীতিতেই বেশি প্রয়োজন, অত্যাধিক দরকারি বিষয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই সংবর্ধনা নিয়ে ইতোপূর্বকার আওয়ামী বিরোধিতার নায়ক ও বীরখ্যাতিপ্রাপ্ত কতিপয় ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দের ঔৎসুক্যই বেশি নজর কাটছে।

সংবর্ধনার উদ্যোক্তা বা ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তারাই অগ্রগণ্য, সংখ্যায়ও সক্রিয়তায়ও। এখানে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান অযথাই ক্ষেপেছেন ব্যক্তি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ওপর।

শায়খের ওপর মাহমুদুর রহামনের ক্ষেপে যাওয়া এবং কওমি অঙ্গনের একটা অংশের পক্ষ থেকে মাহমুদুর রহমানের প্রতি সংহতি প্রকাশ বা তার বক্তব্যের প্রতিবাদের নিন্দাজ্ঞাপন থেকে স্পষ্ট বোঝা গেল, এ বিতর্ক-বিসংবাদ কওমি অঙ্গনে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির স্বার্থ সংরক্ষণের বির্তক।

প্রধান দুই রাজনীতিক দলের কিছু অনুচর কওমিকে ওই দু’দলের স্বার্থে ব্যবহারের প্রচেষ্টায় সক্রিয় রয়েছে এবং সর্বাত্মক কর্মপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমাদেরকে এদের থেকে সর্তক থাকতে হবে, এরা কওমিকে দেওবন্দের নজরিয়াতে না দেখে আওয়ামী লীগ-বিএনপির স্বার্থরক্ষার নীতির আলোকে বিচার করে।

এরা কওমি অঙ্গনের রাজনীতিক শক্তির উত্থানেরও কট্টর বিরোধী, উগ্র প্রতিবন্ধক এবং কঠিন বাধার সৃষ্টিকারী। এদের থেকে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমীন।

লেখক: আলেম ও সংগঠক

কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা প্রস্তুতি যেমন হবে!


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ