শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ।। ৫ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
হজযাত্রীর জন্য চালু হচ্ছে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, থাকবে অ্যাপ কুয়েট শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন- ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ  আইন করে ভারতে মুসলিমদের অধিকার হরণ করা যাবে না: জমিয়ত করাচি-চট্টগ্রাম রুটে নৌযান চলাচলকে স্বাগত জানিয়েছে দুই পক্ষ: পাকিস্তান ২৬ এপ্রিল জমিয়তের কাউন্সিল, প্রাধান্য পেতে পারে তরুণ নেতৃত্ব কওমি সনদ বাস্তবায়ন  করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব: ধর্ম উপদেষ্টা কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতেই কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব: জামায়াত সেক্রেটারি গাজায় গণহত্যা ও ভারতে ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে জমিয়তের বিক্ষোভ ইয়েমেনে মার্কিন হামলায় নিহত অন্তত ৩৮ ভারতীয় মুসলিমরা এখনই না জাগলে অধিকার নয়, পরিচয়ও হারাতে পারে

'আমি যখন হ্যাপী ছিলাম তখন মানুষের হিংসার স্বীকার তেমন হইনি'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নাজনীন আকতার হ্যাপী : তিক্ত কথা বলতে চাইনা, তবুও বলতে হচ্ছে। ২০১৫ সাল! আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পরিবর্তনের বছর। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর! ২০১৫ সালের ২০ শে আগস্ট আমি এই আইডি থেকে সবাইকে এলান করেছিলাম একটা পোস্টের মাধ্যমে যে, “আমি মিডিয়া চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিচ্ছি এবং মেনে চলব ইনশাআল্লাহ।” মনের পরিবর্তন তো আরেকটু আগেই এসেছিল, তবে জানিয়েছিলাম ঐ দিন।

২০১৫ সালের আগস্ট মাসের আগ পর্যন্ত আমার জীবনযাপন, নিয়মনীতি ছিল সো কলড আধুনিক, বলা যায় অত্যাধুনিক। একজন নায়িকার জীবন যেমনটা হয়, আধুনিকতার আইডল হয় একজন মডেল/নায়িকা। নায়িকা জীবনের ক্যারিয়ার ছিল খুবই অল্প সময়ের।

হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ

২০১৩ সালের ২০ শে আগস্ট আমার প্রথম চলচিত্র " কিছু আশা কিছু ভালবাসা" মুক্তি পায় যেটা সবাই জানে। তারপর প্রাণ মিঃ নুডুলস, হাইকো এসি, প্রমি আমরস সহ বেশকিছু বিজ্ঞাপন, এবং "এক জীবন" ক্ষ্যাত ডিরেক্টরের একটি মিউজিক্যাল ফিল্মে কাজ করি,যেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

যেহেতু আমার টার্গেট চলচিত্র ছিল, তাই বিজ্ঞাপনের অনেক অফার পেলেও তা এড়িয়ে চলতাম, টিভি মিডিয়া থেকে দূরত্ব রেখে শুধু চলচিত্রে নিয়মিত হতে চাইতাম।

তারপর পরই দ্বিতীয় চলচিত্র "রিয়েলম্যান/সত্যিকারের মানুষ" (এটা ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল) শুরু করি এবং কাজ প্রায় শেষের পথে আসার পর জীবনে কিছু ভুলের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। অনেক ঝামেলায় অনিচ্ছাসত্বেও জড়িয়ে পড়লাম যা সবার জানা। তখন আমার কাজের চেয়ে বিতর্কিত বিষয়টির জন্য বেশি পরিচিত হলাম। সেটা ছিল আমার জন্য বিব্রতকর।

লজিং যুগের নীরব অবসান

যাইহোক, তারপর আবার সবকিছু সামলে উঠলাম এবং নতুন করে কাজ শুরু করলাম, সেসব ঝামেলার পর একটা মিউজিক্যাল ফিল্মে কাজ করলাম, সেটা রেকর্ড করেছিল, ঐটা ছিল "জানি তুমি আসবে ফিরে " শিরোনামে। যতদূর মনে পড়ে বাংলাদেশে প্রথম কত সময়ের মধ্যে যেন সর্বোচ্চ ভিউ হয়, যা দৈনিক সব পত্রিকাসহ অনলাইনেও শিরোনামে আসে।

এবং শখ করে একটা বিগবাজেট চলচিত্রে আইটেম সং এ পারফর্ম করি। তখনও পর্যন্ত আইটেম সং এ আমিই সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়েছিলাম যা তার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশী কোনো আর্টিস্ট নেয়নি, এটাও নিউজের শিরোনামে এসেছিল। তারপর অনেক অফারের ভেতর থেকে বেছে বেছে ১২ টা সিনেমা হাতে নিলাম।

আমার তখন উঠতি ক্যারিয়ার, ঐ জায়গাটা তৈরি করা অনেক মেয়ের স্বপ্ন থাকে। আমি ছুয়েছিলাম সেই স্বপ্ন! প্রচুর ফ্যানস ছিলো আমার, যেটা বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রামে গেস্ট হয়ে, এবং বিভিন্ন মোবাইল সেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফ্যানদের সাথে সরাসরি আলাপের মাধ্যমে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম। হাজার হাজার ছেলের ক্রাশও ছিলাম, চেহারা কুৎসিত ছিল না বলে।

তখন ভারতীয় অনেক বড় বড় আর্টিস্ট এবং বড় বড় প্রডাকশনের সাথে বেশ ভাল একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল, আমি বাংলাদেশের চলচিত্রে কাজ করার পাশাপাশি ভারতের চলচিত্রে কাজ করার পুরো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যাকে এক কথায় বলা যায় সেই ক্যারিয়ারের অনেক উপরে যাওয়ার সিড়ি পেয়েছিলাম।

একটা কথা বলে রাখা ভাল, আমার যোগ্যতা না থাকলে আমি চলচিত্রে নায়িকা হিসাবে কাজ করতে পারতাম না। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার ঐসব। ফাইজলামি না। ঐ পথের উন্নতির সর্বচ্চো ঘাটি হলো চলচিত্র, যেটা সবার স্বপ্ন থাকে।

শুটিং, মিটিং, ইন্টারভিউ, আড্ডা, বন্ধুবান্ধবী এভাবেই জীবন কাটছিল। জীবন মানেই ছিল আমার কাছে কেবলমাত্র উপভোগের বিষয়বস্তু। যখন যা খুশি করতাম! আরও উপভোগ্য ছিল তারকাক্ষ্যাতি পেয়ে৷ সেই জীবনে সব পাচ্ছিলাম, ক্ষ্যাতি, অর্থ, সাধারণ মানুষের ভালবাসা, এসবকিছু। এসব ছেড়ে কে আসতো চাইবে? কিসের টানে? কিসের লাভে?

তারপর হঠাৎ একদিন মনের ব্যাপক পরিবর্তন করলেন আল্লাহ তায়ালা। কিভাবে কিভাবে সেটা একটা দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছিলাম বেশ আগে। সেসব পুনরায় বলে এই লেখা আরও ভারী করতে চাচ্ছি না।

আমি তখন আমার অফিসিয়াল মোবাইল নাম্বার অফ করে দিলাম, নামাজ, পর্দাসহ শরীয়তের সব হুকুম মেনে চলতে লাগলাম, নিয়মিত তালিম, জামাতের নুসরত, ইসলামিক কিতাব পড়া,কোরআনের অর্থসহ তাফসির সব জানার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। এ

কটা মরুভূমিতে প্রচন্ড পিপাসায় থাকা মুসাফিরের মত আমিও ইসলাম জানা এবং মানার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে গেলাম। আমি আমার সাধ্যেমত চেষ্টা করতে লাগলাম।

তারপর সম্ভবত আমার কঠিন পরিক্ষা শুরু হলো, হঠাৎ এই পরিবর্তন কেউ সহজভাবে নিতে পারলো না। এর জন্য কত পরিমাণ কষ্ট সহ্য করেছি যা আমার রব জানেন শুধু। ঘরে বাইরে সবখানে অপমানিত হয়েছি। তনুও আল্লাহ আমাকে বিচলিত করেননি।

যেই ঘর গান বাজনা ছাড়া আর কিছু ছিলনা সেই ঘরে আমার আম্মুও এখন পর্দা করেন, কোনো টিভি নেই, কেউ মিউজিক শোনেন না, হারাম হালাল মেনে চলা হয়, ভাইটা মাদ্রাসার ছাত্র! এসব কি এমনি এমনি হলো? একটু চিন্তা করে দেখুন তো! আপনি চাইলেই কোনো কুরবানী ছাড়া আপনার ঘরের মানুষগুলোকে ইসলামের নিয়মের ভেতর আনতে পারবেন? আল্লাহর রহমত এবং হেদায়েত ছাড়া তা সম্ভব নয়।

আমি ইসলামের পথে এসে অনেক অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি, আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছেন। সরল পথ থেকে বিচ্যুত করেন নি। নানা ধরণের কষ্টের পরও আমার মনে হয়নি আগের জীবনেই ফেরত যাই। এত কষ্টের কি দরকার! আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ হেফাজত করেছেন।

আল্লাহ পাক আমার উসিলায় আমার নিজের চোখে দেখা অনেক মানুষকে হেদায়েত দিয়েছেন। আল্লাহু আকবর! আমাকে উসিলা করেছেন এটা আমার জন্য পরম ভাগ্যের বিষয়। এসব কখনো বলার কিছু মনে করিনি৷ কারণ আমার এখানে কোনো কৃতিত্ব নেই, আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে হেদায়েত দিতে পারে? আমি ভাগ্যবতী যে আল্লাহ আমাকে উসিলা করেছেন অনেক কিছুর, যার কোনো যোগ্যতা আমার নেই।

এবং এর বড় একটা অংশ ফেসবুকের। এখন সবাই ফেসবুক চালায়৷ কিতাব পত্রে ঝোক কম। অনেকের কাছে ইসলামের সাধারণ একটা কথা পৌছানোরও মাধ্যম নেই৷ আমার উসিলায় তাদের কাছে অনেককিছুই পৌছানোর চেষ্টা করি। অনেক এলিট ক্লাসের মানুষ আছে যারা না তালিমে বসে না ইসলাম নিয়ে কিছু জানার সময় পায় দুনিয়ার ব্যস্ততায়!

তাদের মধ্যে এই ফেসবুকের উসিলায় যদি একটা কিছুও জানাতে পারি সেটা আমার জন্যে অনেককিছু আলহামদুলিল্লাহ! কোন উসিলায় আমি নাজাত পাবো তা তো জানা নেই৷ এটাও হতে পারে আমার নাজাতের উসিলা। আমার এই আইডিতে ২ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি ফলোয়ার, তাদপর ভেতরে যদি ৫০ হাজার মানুষের কাছেও ইসলামের একটা কথাও ছড়াতে পারি সেটা কি অনেককিছু থেকে উত্তম নয়?

আমি বলছি না আমি ভাল মানুষ। আমি একটা ভাল মুসলমান হতে চাই। আমি শরীয়তের অনেককিছু মেনে চলি তার মানে এই না যে আমি সবকিছু সুন্দরভাবে মেনে চলতে পারি সবসময়, বা আমার দ্বারা ভুল হবে না বা আমি ফেরেশতা হয়ে গেছি! আল্লাহ মাফ করুন। আমি এমন বান্দা যে কিনা, ভুল করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। আমি কোনো পীরসাহেব হয়ে যায়নি।

কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

আমাকে কেবল আল্লাহ তায়ালা অন্ধকার একটা কুঠির থেকে আলোর পথের দিশা দিয়েছেন। হামাগুড়ি দিয়ে, পড়ে গিয়ে, ব্যথা পেয়ে হলেও এই পথ ধরে চলতে চাই৷ এই পথে এসে যেমন অগণিত মুসলিমদের ভালবাসা পেয়েছি তেমনি অনেক হিংসাকাতর মানুষের হিংসার স্বিকার হয়েছি, এখনো হচ্ছি।

আমি সরল মনে ভাবতাম যারা ফেসবুকে ইসলামিক পোস্ট দেয়,তারা অনেক ভাল হয়। এই ভেবে অনেকের সাথে দ্বীনীবোন হিসাবে মিশতে গিয়েছি এতে করে তাদের নোংরা মানসিকতার স্বিকার হয়ে বিভিন্ন কাজ দ্বারা শুধু কষ্ট পেয়েছি।

এজন্য আমি এখন আর কোনো ফেসবুকের দ্বীনীবোনকে আমার লিস্টে আনিনা, অনেককেই আনফ্রেন্ড করেছি এবং আরও করব ইনশাআল্লাহ! আমার উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের ভেতর দ্বীন প্রচার করা তারা তো দ্বীনী লেবাসের বিশাক্ত সাপ, তাদের বোঝানোর আমার ক্ষমতা নেই। আল্লাহর কসম, প্রকৃত দ্বীনদার মানুষেরা অনেক অন্যরকম হয়। আমি কয়েকজনকে পেয়েছি তারা জানেই না ফেসবুক কি জিনিস!

কথা হলো, আমি যখন হ্যাপী ছিলাম তখন মানুষের হিংসার স্বীকার তেমন হইনি। অথচ এখন আমাতুল্লাহ হতে চাই এখন দ্বীনী লেবাসধারী কিছু মানুষসহ হিংসায় পড়ে আমার ক্ষতি করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কত নোংরা খেলার স্বিকার যে আমি হয়েছি, এবং হচ্ছি তার ইয়ত্তা নেই।

আমার ভাল থাকা অনেকের চোখের বিষ! কেন? আল্লাহ সবাইকেই কিছু না কিছু নিয়ামত দেন। আপনার যেই নিয়ামত আছে সেটা আমার নেই,আমার ঢ়েটা আছে, সেটা আপনার নেই, এটাই তো স্বাভাবিক৷ তাই বলে উঠে পড়ে কারো ক্ষতি করতে লাগবো? আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে আপনি খুশি নন?

আমি আল্লাহর উপর পূর্ণ একিন রাখি। শত্রুরা সাময়িকভাবে ক্ষতি করে খুশি হয়, অথচ আল্লাহ তায়ালা বান্দার হক নষ্ট করলে যে সেটা বান্দার জিম্মায় থাকে তা শত্রুরা ভুলে যায়। আল্লাহর বিচার অনেক সুক্ষ হয়। আমি হয়তো ভুলে যাব কারা আমার ক্ষতি করেছে, আল্লাহ ভুলবেন না।তিনি ন্যায় বিচারক।

আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে হেফাজত করেন সবসময়। আমি জানি আল্লাহ আমার জন্য যা করবেন সেটাই সর্বত্তম। বাহ্যিকভাবে খারাপ হলেও সেটাই উত্তম। আমি আল্লাহকে পেয়েছি, আমার থেকে সব কেড়ে নিলেও তাকে কেউ নিতে পারবে না ইনশাআল্লাহ যদি না আল্লাহ চান! মাজলুমের দোয়ার সাথে আল্লাহর সাথে কোনো পর্দা থাকেনা। আমি মাজলুম আলহামদুলিল্লাহ!

(লেখকের নিজস্ব ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)

আরবীসহ বিভিন্ন ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ