সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

বর্তমান প্রেক্ষিতে ইসলামি রাজনীতিকদের কাছে কিছু প্রশ্ন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা নকীব আরসালান
লেখক, শিক্ষক ও গবেষক

বর্তমানে যতগুলি রাজনৈতিক দল আছে- যেমন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ইত্যাদি সবাই পাশ্চাত্যের সেক্যুলার পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের অনুসারী।

সেক্যুলার মানে ধর্ম নিরপেক্ষতা, অর্থাৎ ধর্ম হল ঐচ্ছিক, ইচ্ছা হলে পালন করবে মন না চাইলে পালন করবে না। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় কোনো বাধ্যবাধকতা নাই।

খেলাফত ও রাজনীতি ইসলামী দৃষ্টিকোণ

আবার পুঁজিবাদ হল লাগামহীন অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা, এখানে ন্যায়- নীতি ইনসাফ মানবিকতা ইত্যাদির কোন স্থান নাই।

বস্তুত পাশ্চাত্য সমাজ গির্জার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার পর ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা পশ্চাতে নিক্ষেপ করে পার্থিব জীবনকেই মুখ্য করে নেয়। তাদের দর্শন হল জীবন একটাই, এই জীবনকে চরম ও পরম ভাবে উপভোগ করা।

এখানে ধর্ম ও নীতি নৈতিকতার কোনো দেয়াল থাকবে না। এই হল পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের মূল কথা।

পক্ষান্তরে ইসলামি রাজনীতির চরম ও পরম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মানবজাতির কল্যাণ। পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে স্রষ্টা তথা আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার কোনো ধারণা নাই। কিন্তু ইসলামি রাজনীতির প্রতিটা কথা কাজ ও পদক্ষেপ আল্লাহর দরবারে জবাবদিহিতার দায়ে আবদ্ধ।

গণতন্ত্র বুর্জোয়া শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করে কিন্তু মুস্তাদআফ- প্রলেতারিয়েতের প্রতি ফিরেও তাকায় না। পক্ষান্তরে ইসলামি রাজনীতির লক্ষই হল সমাজের দুর্বল, দরিদ্র ও অসহায় শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করা।

এটাই ইসলামের মূল বার্তা এবং রাসূল সা. থেকে নিয়ে পরবর্তী খলিফাগণের কর্মপদ্ধতি দ্বারা তা
প্রমাণিত। এই হল ইসলাম ও পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের পার্থক্য। আর এ কারণেই অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ পাশাত্য গণতন্ত্রকে কুফুরি মতবাদ বলে গণ্য করেন।

এখন অতিশয় দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় হল, বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলি ক্ষমতার জন্য পাশ্চাত্য ধারার গণতান্ত্রিক দলগুলোর সাথে জোট গঠন করছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি- এ প্রত্যেকটি দলের সাথে কিছু না কিছু ইসলামি দল জোটবদ্ধ হয়েছে।

এখানে ইসলামী দলগুলোর প্রতি কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে-

১. প্রশ্ন হল, পাশ্চাত্য ধারার গণতান্ত্রিক দলগুলোর সাথে তাদের জোট গঠন জায়েজ হচ্ছে কিনা? কারণ গণতান্ত্রিক দলগুলির সবাই সেক্যুলার পুঁজিবাদী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী- যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।

তবে ধার্মিক মুসলিমদের ভোট প্রাপ্তির লক্ষ্যে তারা একেক দল একেক রকম ব্যাখ্যা দেয়। যেমন
আওয়ামী লীগ বলে সেকুলার অর্থ ধর্মহীনতা নয়, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টি বলে তারা ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ব্যাখ্যা যাই দাঁড় করানো হোক মূলত সবাই পাশ্চাত্য গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আর এমন সেকুলার গণতন্ত্রের সাথে জোট গঠন জায়েজ কিনা ইসলামি দলগুলোকে তা স্পষ্ট ব্যাখ্যা করা দরকার।

২. রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ক্ষমতার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে ঐক্য গড়ে তুলে। তাহলে ইসলামি দলগুলি ক্ষমতার জন্য ঐক্য হতে পারছে না কেন? কেন তাদেরকে অন্যের তল্পিবাহক হতে হবে, অন্যের করুণার পাত্র হতে হবে, অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে?

অথচ ইসলামি দলগুলি ঐক্যবদ্ধ হলেই এদেশে একটা সময় ইসলামি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩. জোটবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির ওপর ঐশী কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। পক্ষান্তরে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য সর্বদিক দিয়ে ফরজ। যেমন ইরশাদ হচ্ছে-

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ - الظَّالِمُونَ -الْكَافِرُونَ

ক. অর্থাৎ যারা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী হুকুমত করে না তথা রাষ্ট্র পরিচালনা করে না তারা ফাসিক, জালিম, কাফির। আর ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্য ফরজ। (৫: ৪৭)

أَنْ أَقِيمُوا الدِّين َوَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ-

খ. তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর, কখনো বিভক্ত হয়ো না। অত্র আয়াত দ্বারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্য ফরজ করা হয়েছে।

গ. মুসলমানদের বিভক্তির কারণে আজ উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে। এমতাবস্থায় ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে উম্মাহর মুক্তির পথ নির্দেশ করা ফরজে আইন হয়ে গেছে।

কওমি মাদরাসা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার – বিস্তারিত জানুন

৪. ইসলামী দলগুলোর প্রতি সর্বশেষ প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক দলগুলি যদি শুধু ক্ষমতার জন্য জোটবদ্ধ হতে পারে তাহলে আপনারা কুরআনের ফরযিয়্যত, আল্লাহর সন্তুষ্টি, বৃহত্তর মানবতার কল্যাণ, ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তি, নিজেদের ক্ষমতা- এতগুলি বিষয়ের বোঝা মাথায় নিয়ে কেন জোটবদ্ধ হতে পারেন না?

আপনাদের উপর উম্মাহর কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ভর করছে। কাজেই আমরা ঐক্যের দাবি জানাই।

বস্তুত দুটি বিবাদমান গ্রুপের মীমাংসার জন্য তৃতীয় পক্ষের দরকার হয়, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্যও মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে পরস্পর বিরোধি ইসলামের যেসব ফেরকা আর রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে তাদের ঐক্যের জন্যও কোনো তৃতীয় পক্ষ দরকার।

আর এ মহান কার্য সম্পাদনের জন্য উলামায়ে কেরাম, ইসলামি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও চিন্তাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে।

‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ’ বা এ জাতীয় কোনো সংগঠন করে সকল ইসলামি দল ও ফেরকা ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বিশেষত মাদরাসার ছাত্র, ইসলামি দল ও ফেরকার সাথে যুক্ত ছাত্র সমাজকে আগে এগিয়ে আসতে হবে, স্ব স্ব দলের মুরুব্বিদের ঐক্যের জন্য বাধ্য করতে হবে।

কারণ এছাড়া ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তির কোন উপায় নাই। তাছাড়া বিভক্তির কারণে মুসলমানরা
ইহকালে লাঞ্চিত তো হচ্ছেই পরকালও সংকটাপন্ন।

যেমন ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার কাছে
সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে। (৬: ১৫৯)

অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে বিভক্তিবাদিদের সাথে রাসূলের সা. কোন সম্পর্ক থাকবে না।

রক্তনদী পেরিয়ে কুরআন পাঠ

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ