শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘কারো দুর্নীতি ফাঁসের জন্য কম্পিউটার হ্যাক করা সাংবাদিকের উচিত নয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনী চাওয়া সম্পাদক পরিষদের দাবিগুলোর উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সোমবার (১ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ নিয়ে বিস্তারিত মতামত তুলে ধরেন।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুকের লেখাটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হল:

‘কিছু মহল থেকে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করা হচ্ছে। তাঁদের মূল আপত্তির জায়গা আইনটির বিশেষ কিছু ধারা। আইসিটি ডিভিশন যখন আইনটির খসড়াগুলো তৈরী করে তখন সেগুলো দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। সকলের সুবিধার্থে এই বিষয়ে আমার মতামত তুলে ধরছি:-

সরকারি অফিসের কম্পিউটারে হ্যাকিং এবং গোপনে নজরদারির ক্ষেত্রে আইনের দরকার জনগনের তথ্য ও গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থেই। এই আইনের আগে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আইনি ভিত্তি দেশে ছিল না। তাহলে এই আইনের সাহায্য ছাড়া কিভাবে হ্যাকিং ও তথ্য চুরির বিচার হবে?

সরকারি কম্পিউটারে জনগণের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নাগরিকদের অনেক রকম তথ্য সংগৃহীত থাকে। ব্যাংক হিসাব, স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য, জমির রেকর্ড সবকিছুই আজকাল ডিজিটালাইজ করে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এগুলো যদি হ্যাক করা হয়, তার দায়ভার কে নেবেন?

দায় কিন্তু তখন সরকারের উপরই আসবে। তাই, তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে আমি এই আইন প্রণয়নের সুপারিশ করি হ্যাকিং ঠেকানোর জন্য।

শুধু তাই নয়, সরকারি অফিসে ডিজিটাল নজরদারির মাধ্যমে জনগণের তথ্য সম্বলিত বিভিন্ন দলিল বা নথির ছবি বা ভিডিও তোলাও সম্ভব। গোপনে অডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমেও নাগরিকদের অনেক সংবেদনশীল তথ্যের আলোচনা শুনে ফেলা সম্ভব, এমনকি ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ডও।

এর মাধ্যমে হয়তো একজন সাংবাদিকের কাজ কঠিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কারো দুর্নীতি ফাঁস করার জন্য একজন সাংবাদিকের কি সরকারি অফিসের কম্পিউটার হ্যাক করে নাগরিকদের সংবেদনশীল তথ্য চুরির অধিকার থাকা উচিত?

পৃথিবীর কোনো দেশই কিন্তু বে-আইনিভাবে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ দেয় না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও না। সরকারি অফিসে গোপনে নজরদারি করা সবদেশেই আইন বহির্ভূত, সাংবাদিকদের জন্যও। সাংবাদিকদের তাদের তথ্য অন্যান্য সূত্র থেকে জোগাড় করতে হয়।

যেইসব কূটনৈতিক মিশন এই আইনটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন তাদেরকে আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই: সাংবাদিকরা কি আপনাদের দূতাবাসের ভেতরে গোপনে নজরদারি করার যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে পারবেন?

আরেকটি আপত্তির জায়গা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ নিয়ে যে ধারাটি, সেটি নিয়ে। আমরা দেখেছি কিভাবে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এর পর বিএনপি-জামাত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ঘটনাবলিকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

এই বিকৃতিকরণের পেছনে কারণ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতিষ্ঠিত করা। এইসবের বিরুদ্ধে কি কোনো আইন থাকা উচিৎ নয়? আমরা কি ভবিষ্যতে আবারও এই অপরাজনীতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই? আইনটির এই ধারার বিরুদ্ধে যারা বলছেন তারা আসলে বাঙালি নন। তারা গোপনে জামাত সমর্থক রাজাকার।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইনের উপর ভিত্তি করেই এই ধারাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। ১৬টি ইউরোপিয়ান দেশে হলোকাষ্টে ‘স্বীকৃত সংখ্যা’ থেকে কম মানুষ মারা গিয়েছে এই কথা বললেও কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে অনেক দেশ আছে যাদের দূতাবাসগুলো বাংলাদেশে আমাদের এই আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছে।

যেইসব ইউরোপিয়ান দূতাবাসগুলো আমাদের এই আইন নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন: আপনাদের হলোকাস্ট ডিনায়াল আইন থাকতে পারলে আমাদের কেন একইরকম আইন থাকতে পারবে না?

আমাদের আইন যদি জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকারের মানদণ্ডের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে আপনাদেরগুলো কিভাবে হয় ? এই ধারাটিতে কোনো ধরণের সংশোধন সম্ভব না।

এই আইনের কিছু অংশ অনলাইনে মিথ্যা বা গুজবের মাধ্যমে সহিংসতা বা ধর্মীয় উন্মাদনা উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে। আপনাদের মনে আছে, রামুতে, ফেসবুকে পবিত্র কোরানের পুড়িয়ে দেয়ার মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে পুরো একটি বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা আমাদের দেশে একাধিকবার ঘটেছে।

অতিসম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলনের সময়ও আমরা দেখেছি কিভাবে অনলাইনে গুজব রটানোর মাধ্যমে সহিংসতা উস্কে দেয়া হচ্ছিলো। এই আইন ছাড়া আমরা এই ধরণের সহিংসতা উস্কে দেয়ার ঘটনাগুলো কিভাবে প্রতিহত করবো?

আমাদের প্রচলিত ফৌজদারি আইনে এই বিষয়ে কিছুটা বিধান আছে। সেই আইনের আওতায় আপনি যদি এমন কিছু বলেন বা লিখেন যার কারণে কেউ অন্য কাউকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করে, তখন আপনার বিরুদ্ধে সেই আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়।

এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলে আপনাকে আসলেই কেউ হতাহত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের কি হতাহতের ঘটনা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ? নাকি এই ধরণের ঘটনা যাতে ঘটতেই না পারে সেই দিকে মনোযোগ দেয়া উচিৎ? এই ধরণের আইন পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান, যুক্তরাষ্ট্রেও আছে।

অনেক ইউরোপিয়ান দেশে, বিদ্বেষ ছড়ানো ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে আইন আছে, আমাদের এই আইনও সেইরকমই।

আরেকটি আপত্তির বিষয় যা শোনা যাচ্ছে তাহলে এই আইনের আওতায় অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য যে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে ও তল্লাশি চালানো যাবে।

ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন তখনই পরে যখন অপরাধ ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। কোনো অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সময় ঘটনাস্থল থেকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার ও তল্লাশি চালানো যায়। এটা ফৌজদারি আইনের মৌলিক বিষয় আমাদের দেশ সহ সব দেশেই। আপনি যদি কোনো চুরির বিষয়ে অভিযোগ করতে পুলিশকে ফোন করেন, পুলিশ কি তখন ওয়ারেন্ট এর জন্য বসে থাকে নাকি তাৎক্ষণিকভাবে চোরকে গ্রেফতার করে চুরির মালামালের খোঁজে তল্লাশি চালাবে?

ঠিক সেভাবেই পুলিশ যদি অনলাইন হ্যাকিং সম্পর্কে তথ্য পায় ও হ্যাকারের অবস্থান খুঁজে পায়, তাহলে ওয়ারেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ নাকি তাৎক্ষণিক তাকে থামানো উচিৎ?

যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশিরভাগ দেশেই পুলিশ যদি কাউকে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সময় অনলাইনে ট্র্যাক করতে পারে, তাহলে তাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে ও তল্লাশি চালাতে পারে।

শুধুমাত্র অপরাধ সংগঠিত হয়ে যাওয়ার পর যদি গ্রেফতার বা তল্লাশি চালাতে হয়, তখন ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন পরে। অপরাধ সংগঠিত হওয়ার সময় ধরা পড়লে কখনোই ওয়ারেন্ট এর প্রয়োজন পরে না।

সর্বশেষ, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা নিয়ে যে ধারা সেটা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। আমি একমত, এখানে আসলে আদালতকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সত্য আর মিথ্যা নির্ণয় করার। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস।

প্রেস ক্লাব, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কোনো সংগঠনই কিন্তু তাদের নিজেদের নৈতিকতার সনদ বা আচরণবিধি প্রয়োগ করতে পারেননি। সম্পাদক পরিষদের বর্তমান প্রধান মাহফুজ আনাম, যিনি টেলিভিশনের পর্দায় স্বীকার করেছেন ১/১১ এর সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রচারের কথা।

যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হলে তাকে বাধ্য করা হতো সাংবাদিকতা পেশা থেকে পদত্যাগ করতে। শুধু তাই নয়, তাকে আর কোনোদিন সম্পাদক বা সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতো না।

বাংলাদেশে কিন্তু সম্পাদক পরিষদ উল্টো তার পক্ষ নিয়েই তাকে তাদের জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করেছে। বিষয়টি আমাকে অবাক করে। যেহেতু, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র মিশন এই আইন নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে, আমি আশা করবো তারা মাহফুজ আনামের স্বীকারোক্তির পরেও একটি প্রথম সারির পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত থাকা নিয়েও তাদের মতামত জানাবেন।

তা নাহলে, তাদের কার্যকলাপ হবে একপেশে ও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার শামিল।

সিমের নম্বর ঠিক রেখে কম্পানি পরিবর্তন করবেন যেভাবে

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ