আওয়ার ইসলাম: সম্প্রতি বাংলাদেগশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম লোকাল বাসে চড়েছিলেন। বাসের সিটে বসা তারানা হালিমের ছবি সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ঘটনার পর বহু মানুষ তারানা হালিমের পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
তবে যেসব সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারী তারানা হালিমের লোকাল বাসে চড়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন তাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তারানা তিনি।
এছাড়া সেদিন তিনি কেন লোকাল বাসে চড়েছিলেন, সামনের দিনে চড়বেন কিনা এসব বিষয়ে নিচের মতামত প্রকাশ করেছেন।
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে তারানা হালিমের ভেরিফায়েড পেজে তিনি 'তারানা হালিমের লোকাল বাস যাত্রা- উদ্দেশ্য কি?' শিরোনামে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেছেন।
আওয়ার ইসলামের পাঠকের উদ্দেশে তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে প্রকাশ করা হলো-
তারানা হালিমের লোকাল বাস যাত্রা- উদ্দেশ্য কী?
পুরো লেখাটা পড়ে মন্তব্য করবেন প্লিজ। আমি তারানা হালিম-একজন মানুষ, বাবা- মার সন্তান, একজন মা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি করি, পেশায় আইনজীবী (এমপি হওয়ার পর থেকে ছেড়ে দিয়েছি আইন পেশা), নবম ও দশম সংসদের এমপি।
এখন প্রতিমন্ত্রী। রাজনীতি আমার পেশা নয়। মানুষের জন্য কিছু করার বাসনা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়েই রাজনীতির পথচলা।
উত্তরাধীকার সূত্রে মোটামুটি সচ্ছল থাকার মতো অবস্থা আমার প্রয়াত বাবা-মা করে গেছেন। এমপি হিসেবে বরাদ্দকৃত সরকারি প্লটও নেইনি। এটুকু শুধু আমার back ground জানার জন্য একটি ভূমিকা।
'আমৃত্যু ঘুষ খাব না', 'মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের যোদ্ধা হিসেবে কাজ করব.', 'নীতির প্রশ্নে আপস করব না', 'বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও দলকে ভালোবাসব'; এগুলো আমার আমৃত্যু নীতি। এর কোনো উদ্দেশ্য, বিধেয় নেই; এর মধ্যে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাবও নেই। তৈল মর্দনের বদ মতলবও নেই। এটি সত্য। সত্য বলবই।
এত কথা লেখার কারণ হলো 'তারানা হালিম এর লোকাল বাস যাত্রা' নিয়ে অসংখ্য উৎসাহব্যঞ্জক কমেন্ট এর পাশাপাশি কয়েকটি মন্তব্যে আমার চোখ আটকে গেল। মন্তব্যগুলো দেখার আগে যে ভাবনা আমি ভাবিনি, আমার সেসব না ভাবা ভাবনাগুলো নিয়ে মানুষ ভাবল কীভাবে?
নেতিবাচক সমালোচনার কয়েকটি হলো, 'নির্বাচনের আগে স্ট্যান্টবাজি', 'অভিনয়', 'আবার মন্ত্রী হতে চায়'।
এক বাসে চড়েই এত কিছু পাওয়া যায় নাকি? জানতাম না তো!!
এবার আসল কথাগুলো লিখি-
৫ বছর আগে 'সড়ক নিরাপত্তা' বিষয়ক জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমি, আমার বোন ও আমার বোনের গড়া সংগঠনের সদস্যরা প্রেসক্লাব থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত হেঁটে গেছি।
শ্যামলীর কাছাকাছি যেতে আমার পায়ের গোড়লির ওপরের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় (এখনও শক্ত হয়ে গোল হয়ে আছে) অসহ্য ব্যথা হচ্ছিল তার পরও রিকশা বা ভ্যানে চড়িনি। হেঁটে গেছি আমিনবাজার ব্রিজ পর্যন্ত। কারণ আমি বলেছিলাম 'হেঁটেই যাব'।
৫ বছর আগেই মহান জতীয় সংসদে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক ৭১ বিধির নোটিশ দেই, সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। আমরা আইনমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবও দেই। যোগাযোগমন্ত্রীর কাছে 'ব্ল্যাক স্পট' চিহ্নিত করার প্রস্তাব দিলে দ্রুততার সঙ্গে তিনি তা ঠিক করে দেন।
আমি যখন মহান জাতীয় সংসদে হিজড়াদের 'তৃতীয় লিঙ্গ' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দৃষ্টি আকর্ষণী বিল আনি-তার আগে দুদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওদের বস্তিতে বসে থেকেছি।
জানি না, কোথা থেকে অসম্ভব চুলকানি শুরু হলো। ওরা বলল, ঘুণে ধরা বাঁশ থেকে কণা ওড়ে, তাতে অভ্যাস না থাকলে চুলকানি হয়। তাদের জীবনযাত্রা দেখার পরই নোটিশটি দিয়েছেলাম।
সোজা বিষয়কে সোজা হিসেবে দেখতে ভুলে যাচ্ছি কি আমরা? সব কাজের পেছনেই কি জটিল উদ্দেশ্য থাকতে হবে?
বাচ্চারা যখন সড়ক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছিল তখন অনেক বাচ্চারা পোস্ট দিয়েছিল মন্ত্রী, এমপিরা তো পাবলিক বাসে চড়ে না; কষ্ট বুঝবে কী করে।
রাজনীতিবিদরা কষ্ট বোঝেন দেখেই সড়ক তৈরি হয়, দাবি পূরণ হয়, ব্রিজ হয়, দেশ এগিয়ে যায়। দেশ স্বাধীনও কিন্তু ছিল একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম। আমাদের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৫ বছর জেলের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। আমরা যারা রাজনীতি করেছি এসি রুমে বসে করিনি। রোদে হেঁটেছি সবাই, ট্রাকে চেপে মাইলের পর মাইল গেছি, কখনো পুলিশের তাড়া খেয়েছি, রাসেল স্কয়ার-বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সারা দিন না খেয়ে থেকেছি সবাই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা এহেন গ্রাম নেই যেখানে যাননি। কখনো তিনি হেঁটেছেন, কখনো নৌকায় চড়েছেন; কষ্ট করেই রাজনীতি করেছেন।
৪৭-৫২, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ-সব দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংগ্রামেরই ফসল।কিন্ত সমাজের সব ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও আছে সেটাও স্বীকার করব।
আমি কিছু তথ্য দিয়ে রাখি-
সেদিন লোকাল বাসে কোনো সাংবাদিক আমার সঙ্গে ছিলেন না। যাত্রীরা খুশি হয়ে সেলফি তুলেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিকরা অফিসে থাকা আমার পিআরওকে ফোন দিয়েছে। উনি কথা বলেছেন।
অনেক সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমি সত্যটাই বলেছি যে, হ্যাঁ চড়েছি।
বাসের আসনে তেল চিটচিটে কভারটা পরিবর্তন করার, ইন্ডিকেটর লাইট ঠিক করার অনুরোধটা মালিককে বলার জন্য চালককে অনুরোধ করেছি।
এবার আমার যেহেতু একটি ফেসবুক পেজ আছে তাই আমিও লিখতে পারি এমন দাবি থেকে ক’টি প্রশ্ন করি-
* আমি যখনই সুযোগ পাব লোকাল বাসে যাব। কারো কোনো সমস্যা আছে?
* আমার কলিগরাও খুশি হয়েছেন। এতে অন্য কারো কোনো সমস্যা আছে?
* ছাত্ররা চেয়েছিল, ওই পোস্ট দেখে আমি লোকাল বাস এ চড়ে দেখেছি; সময় বেশি লাগে, বেশ গরম, ভেতরটা পরিচ্ছন্ন নয়। দেখাটা অন্যায় হয়েছে?
* আপনারা চেয়েছিলেন পাবলিক বাসে আমরা চড়ি, চড়েছি; কথা শুনলেও দোষ, না শুনলেও দোষ?
* যখন প্রায়ই আমি লোকাল বাসে যাতায়াত করব; মন্ত্রী থাকলেও করব, না থাকলেও করব, এমপি থাকলেও করব, না থাকলেও করব.....সমস্যা আছে?
আমরা 'কি হনু রে' ভাবি না। পদ-পদবি দুই দিনের। আমি কে? মানুষ কেমন? এটাই চিরস্থায়ী। আমি এভাবেই ভাবি। সমস্যা আছে?
[ বি:দ্র: এক সাংবাদিক ভাই গতকাল ফোন করে বলেছেন, আপা পরেরবার একটু আমিও যেতে চাই, বলেছি কেন নয়, সমস্যা আছে? ]
—তারানা হালিম
বাংলাদেশের স্বাধীন
একজন সাধারণ নাগরিক।"
ব্যবসা এখন আপনার হাতের মুঠোয়। – বিস্তারিত জানুন
আরএম/