মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার
নারীরা পূর্বের সকল সময়ের চেয়ে শিক্ষিত, সচেতন ও পেশাজীবী হয়েছে এবং ধীরে ধীরে আরো হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে নারী ও সকলের জন্য ইতিবাচক প্রভাব। কারণ সফলতা, সচেতনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সকলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া-পাওয়া। কিন্তু নারীবাদীরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে।
কেউ নারীর স্বাধীনতার নামে নারীদের ঘর থেকে বের করে আনা ও বোরকা খুলে ফেলাকেই বোঝায়। নারীদের মধ্যে কেউ কেউ বোরকা পরিধান করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। সেটি তাদের যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার নিজে সবকিছু জেনে শুনেই তারা সিদ্ধান্ত নেন।
তাই তাদের উপর পরিবার বা অন্য কারো নিকট থেকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক কোন নারীর ওপর জোর পূর্বক কোন নির্দেশ চাপিয়ে দেয়াটাও গোড়ামি।
আবার কেউ স্ব ধর্মের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতার দৃষ্টিকোণ থেকে বোরকা পরিধান, অতিরিক্ত কাপড় দিয়ে মাথা ও বুক ঢাকাসহ বিভিন্ন শালীনতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। জোর করে যদি কেউ তাদের এসব থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করে সেটিও তার ব্যাক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি হস্তক্ষেপ।
শুধু তাই নয়, এটি মানবতা বিরোধী ও ধর্মীয় আঘাতের মতো জগণ্য অপরাধ। কারো ব্যক্তিগত কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যদি অন্য কারো কোন বিগ্ন না ঘটায় বা কারো কোন অসুবিধা না হয় তাহলে তার কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
তবে যারা ধর্মীয় অনুশাসনের পক্ষে ধর্মীয় রীতি নীতি প্রয়োগের লক্ষ্যে কাজ করেন তারা শুধুমাত্র ধর্মে সঠিক বার্তাটি মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে পারেন। মানুষের নিকট সঠিক বার্তা পৌছে দিলেই তারা দায়িত্বমুক্ত। এরপর পালনের ব্যাপারটি যার যার ব্যাক্তিগত।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আগে নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারতো না, এখন পারে। আগে নারীরা অনেক কাজই করতে পারতো না, এখন পারে। ব্যাপারগুলো প্রত্যেকটি বিভিন্ন জনের নিকট ইতিবাচক, আবার কিছু কিছু ব্যাপার বিভিন্ন জনের নিকট নেতিবাচক। এটি যার যার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি।
কিন্তু বাংলাদেশের নারীবাদীদের স্বাধীনতার ক্ষুদা কখনোই মিটে না। পরোক্ষভাবে সম্ভবত শুধুমাত্র ধর্মের বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধচারণ করাই তাদের স্বাধীনতার মৌলিক তত্ত্ব। তবে এতে কারো কিছু আসে যায় না।
তারা যদি নগ্ন হয়ে রাস্তয় রাস্তায় তাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-পতঙ্গের প্রদর্শনী করে তাতেও কারো কিছু হবে না, যদি তাদের শরীর কুকুর বিড়ালও ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় তাও কারো কিছু হবে না। মানুষের স্বাভাবিক জীবনের বিগ্ন না ঘটালেই হলো।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আগে নারীদের গাড়ি চালানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ধীরে ধীরে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছে। এর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
লাইভে নাস্তিকদের জঘন্য তৎপরতা রুখবেন কী করে?
যেমন ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও সমসাময়িক বিভিন্ন যৌক্তিকতা রয়েছে। তা প্রত্যেকের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বাংলাদেশের নারীবাদীদের দু’ঠোট সেখানেও থেমে থাকে না। কবুতরের মতো তারা হাক বাক করতেই থাকে। যদিও এসবের দু’পয়সারও মূল্য নেই।
কোন দেশে বোরকা খোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে তাদের দাবি হয়ে দাঁড়ায় এবার ওড়না খুলতে হবে। কোথাও নারীদের সিগারেট খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে তারা এবার দাবি তোলে নারীদের গাঁজা খাওয়ার সুযোগ করে দিতে।
নারীবাদীদের প্রত্যেকটি দাবিই ধর্মীয় রীতি নীতির বিরুদ্ধে। ধর্মীয় বিশেষ করে ইসলামের একটি নীতিমালাও তাদের মতে নারীদের স্বাধীনতার আওতায় পড়ে না।
একটি দেশে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের দাবি উঠে শুধু গাড়ি চালালেই হবে না, বোরকা খুললেই মিলবে নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা।
সুতারাং নারীদের বোরকা খুলে ফেলতে হবে। হয়ত কোন একদিন সকল নারী বোরকা খুলেও ফেলবে। তখন তাদের দাবি উঠতে পারে এবার অন্তর্বাস খুলতে হবে। এরপর হয়ত এমন দাবিও উঠবে যে শরীরের সকল প্রবেশপথ উম্মুক্ত করে দিলেই মিলবে নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা। হায় এ কেমন চাওয়া। এ কেমন স্বাধীনতা।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও উপস্থাপক
এখন ব্যবসার হিসাব হবে সফটওয়ারে – বিস্তারিত জানুন