আওয়ার ইসলাম: হজমে সমস্যা হলে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হয় যার কারণেই পেট ফুলে থাকে বা ফেঁপে থাকে। এই সমস্যার নিরাময়ে ঘরোয়া কিছু সমাধান গ্রহণ করতে পারেন।
আদা: পেট খারাপের একটি পরিচিত প্রাকৃতিক চিকিৎসা হচ্ছে আদা। এটি সেসব খাবারের একটি যা পেট ফাঁপাও হ্রাস করতে পারে। ক্যারিংটন ফার্মস হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশনের কনসালটেন্ট এবং রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ডেবোরাহ অরলিক লেভি বলেন, ‘এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।’ পেট ফাঁপা দূর করতে আদার চকলেট, আদার চা এবং দইয়ে তাজা আদা যোগ করে খেতে পারেন।
শতমূলী: লেভি বলেন, ‘শতমূলীতে প্রিবায়োটিক থাকে, যা প্রোবায়োটিকের মতো। এটি উপকারী ডাইজেস্টিভ ব্যাকটেরিয়াকে সাপোর্ট দেয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘মূত্র নির্গমন সহজ করে শতমূলী এবং পেট ফাঁপা উপশমেও সাহায্য করে।’
পানি: পেট এমনিতেই ফুলে আছে, তাই পানির কথা শুনে বিস্মিত হচ্ছেন? কিন্তু লেভি বলেন, ‘সাধারণ পানি আপনার পেট ফাঁপা কমাতে ভূমিকা রাখে।’ পানিকে সুস্বাদু করতে এতে শসা, কমলা অথবা লেবুর স্লাইস যোগ করতে পারেন। কিন্তু কার্বোনেটেড ড্রিংক থেকে দূরে থাকুন, এসব আসলেই পেট ফাঁপা ও অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে।
সেলেরি: সেলেরি পাতা চিবানোতে শুধু চোয়ালের ব্যায়ামই হয় না, পেট ফাঁপাও হ্রাস পায়। নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই হসপিটালের ডায়েটিশিয়ান জেনিফার কার্তাশেভস্কি বলেন, ‘অন্ত্রীয় গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেলেরিকে ডাইজেস্টিভ এইড হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কারণ এটির কেমিক্যাল ফ্লুইড রিটেনশন (জমে থাকা পানি) হ্রাস করতে পারে।’
অ্যালমন্ড মিল্ক: আমাদের অনেকেই দুগ্ধজাত খাবার সহ্য করতে পারে না এবং ল্যাকটোজ ইনটলার্যান্স থাকতে পারে।
নিউ ইয়র্কের হান্টার কলেজের নিউট্রিশন বিভাগের অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মারটিকা হিনার বলেন, ‘অ্যালমন্ড মিল্ক বা কাজু বাদামের দুধ তাদের জন্য পেট ফাঁপায় বিকল্প হতে পারে যাদের দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে পেটে সমস্যা হয়।’
তিনি বলেন, ‘দুধের চিনি বা ল্যাকটোজ পেটফাঁপা ও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। দুধের প্রোটিন প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে মিউকাস ও পানি জমা হতে পারে।’
বকচয়: বকচয়ের মতো পাতাযুক্ত সবজি পেট ফাঁপা হ্রাসে সাহায্য করতে পারে, কারণ এতে ডায়েটারি নাইট্রেট থাকে যা রক্তনালীকে প্রশস্ত করে, যে অংশের তরল দূর করতে হবে সে অংশে সার্কুলেশন বৃদ্ধি করে (যেমন- পেট ফাঁপা)।
এছাড়া পাতাযুক্ত শাকসবজিতে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইটস ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে। হিনার বলেন, ‘উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম মিনারেলের ভারসাম্য রক্ষা করে, শরীরে অযাচিত সোডিয়াম জমা প্রতিরোধ করে।’
কেফির ও দই: যদি দুগ্ধজাত খাবার আপনার জন্য সমস্যা না হয়, তাহলে কেফির (ফার্মেন্টেড মিল্ক বেভারেজ) এবং দই খেতে পারেন। সিয়েটল সাটন’স হেলদি ইটিংয়ের প্রধান পুষ্টি বিশেষজ্ঞ রেনে ফিসেক বলেন, উভয়টিতেই প্রোবায়োটিকস থাকে, যা পেট ও শরীরের জন্য ভালো এবং পেট ফাঁপায় কার্যকর।
কেফির ও দই অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে, যা ডাইজেস্টিভ ট্র্যাককে অধিক কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ফলে আপনার গ্যাস জমা ও পেট ফাঁপা হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।’
শসা: শসা পেট ফাঁপা কমাতে পারে। ফিসেক বলেন, ‘শসা ফাইবারে ভরা, যা ডাইজেস্টিভ ট্র্যাককে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।’
টমেটো: পেট ফাঁপা হ্রাসের জন্য টমেটো চমৎকার। ফিসেক বলেন, ‘টমেটো পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ, যা শরীরে সোডিয়ামের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে, এর ফলে পানি জমা ও পেট ফাঁপা হ্রাস পায়।’
পেঁপে: পেঁপে দেখতে সুন্দর, খেতে সুস্বাদু। এটি পেট ফাঁপা হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার লাসিক ক্লিনিকের সেন্টার ফর ওয়েট লস অ্যান্ড নিউট্রিশনের পরিচালক অ্যাড্রিয়েন ইউডিম বলেন, ‘একটি ছোট গবেষণায় পেঁপের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের গ্যাসীয় সমস্যা হ্রাস পেয়েছিল, যার মধ্যে পেট ফাঁপাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
মৌরি: মৌরি আপনার পেট ফাঁপা হ্রাস করতে পারে। মৌরির বীজ খেতে পারেন অথবা মৌরি চা পান করতে পারেন। ডা. নিকো বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে যে, মৌরি গ্যাসের প্রতিক্রিয়া এবং পেট ফাঁপা হ্রাসের জন্য চমৎকার উৎস, এছাড়া অন্যান্য উপকার তো আছেই।’
* পিপারমিন্ট : ডা. নিকো বলেন, ‘কোনো খাবার খাওয়ার পর হজম সহায়তার জন্য পিপারমিন্টের চা চমৎকার।’ পিপারমিন্ট একটি থেরাপিউটিক হার্ব, যা অনেক ডাইজেস্টিভ সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে পেট ফাঁপাও আছে। পেপারমিন্ট চায়ের মধ্যে পুদিনা পাতার চা অন্যতম।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
আরো পড়ুন–
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়েছে ৬৩ হাজারের বেশি রুশ সেনা
প্রিয়নবির স্মৃতি বিজড়িত মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা
মসজিদে নববীর অদূরে ঐতিহাসিক ৩ মসজিদ
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
এটি/আওয়ার ইসলাম