আওয়ার ইসলাম: কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানির আরেক অর্থ ত্যাগ। হজরত ইবরাহিম আ. নিজ সন্তান হজরত ঈসমাইল আ. কে কুরবানির করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। আমরা সবাই এ ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল।
এ ক্ষেত্রে অনেকের ধারণা, কুরবানি যেহেতু ত্যাগের নাম, সেহেতু কুরবানির গোশত জমিয়ে রাখে জায়েজ নয়। কুরবানি করার পর সব গোশত দান করে দিতে হবে। অনেকে আবার বলে থাকেন, তিন দিন পর্যন্ত জমিয়ে রাখা যাবে, অতিরিক্ত সময় নয়।
কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক সময় জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।
হযরত সালামাহ ইবনুল আকওয়া রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেন, كلوا وأطعموا وادخروا “তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।” (বুখারি-৫৫৬৯)
‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান করবে আর কতটুকু উপহার হিসেবে প্রদান করবে এর পরিমাণ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও হাদিসে কিছু বলা হয়নি।
তাই ওলামায়ে কেরাম বলেছেন , কুরবানির গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজেরা খাওয়া, এক ভাগ দরিদ্রদের দান করা ও এক ভাগ উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের দান করা মোস্তাহাব।
কুরবানির গোশত যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। ‘কুরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না’ বলে যে হাদিস রয়েছে তার হুকুম রহিত হয়ে গেছে। তাই যতদিন ইচ্ছা ততদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়।
হাদিস শরীফে এসেছে, কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০
প্রসঙ্গত, শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
আরও পড়ুন: মাদরাসায় কুরবানির চামড়া সংগ্রহ; একটি বিকল্প প্রস্তাব
আরএম/