মাওলানা মুহাম্মদ ফুরকান হুসাইন
কওমি মাদরাসার আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। শিগগির হয়তো জাতীয় সংসদে পাস হবে। তাই আমাদের সামনে এখন বেশ কিছু করণীয় রয়েছে। এসব করা গেলে কওমি মাদরাসার উত্তোরত্তর কল্যাণ সম্ভব।
১. দেশের সব কওমি মাদরাসা ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেওবন্দের অষ্ট (৮) মূলনীতি'র ওপর অটল থাকবে এবং এর থেকে বিচ্যুত না হওয়া বা শীথিলত প্রদর্শন না করা।
২. ছয় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে দেশের সব কওমি মাদরাসা অন্তর্ভুক্ত করে মাদরাসা, শিক্ষার্থী ও উস্তাদদের পরিসংখ্যান-ডাটাবেইজ তৈরি করা।
৩. ৬ বোর্ড পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করে ওলামাদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলবে।
৪. বোর্ড বা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দান-অনুদান ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে ধর্ণা না দেওয়া এবং অবৈধ দান গ্রহণ না করা।
৫. ‘আল-হাইয়াতুল উলয়াহ’ কর্তৃপক্ষ সবক্ষেত্রে দেওবন্দের চিন্তা চেতনা ও দেশীয় চাহিদাকে সামনে রেখে (যাচায়-বাচায় করে) সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন ।
৬. কওমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বোর্ড পরিচালনার জন্য অভিন্ন ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-বোর্ড পরিচালনা নীতিমালা’ প্রণয়ন।
৭. হাইআতুল উলইয়ার অধীনে দাওরায়ে হাদিসের সিলেবাস প্রনয়ণ কমিটি অভিন্ন একটি সিলেবাস উপহার দেবে। যা হতে হবে যুগোপযোগী, উপকারী ও ঐতিহ্য রক্ষা করে।
৮. দাওরা হাদিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য জমাতে উলা/মিশকাত-এর মার্কশিট ও টিসি বাধ্যতামূলক করা।
৯. পর্যায়ক্রমে ৬ বোর্ডের অধীনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সমাপনীবর্ষ পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট-এর ব্যবস্থা করা এবং যে কোন চাকরিতে প্রবেশের সময় এসব সার্টিফিকেট প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা।
১০. সমাপনী জমাত/ক্লাসসমূহের জন্য মূল-মৌলিক বিষয়সমূহ নিয়ে অভিন্ন পাঠ্যক্রম তৈরি করা এবং অভিন্ন সময়ে পরীক্ষা নেওয়া।
১১. স্বচ্ছতা, যাচায়-বাচায় ও লিখিত-মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা। বার্থ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা। ভর্তির ক্ষেত্রে কারো কোন তদবির আমলে না নেওয়া। পদস্থ ব্যক্তিদের জন্য সেচ্ছাচারিতা, অাঞ্চলিকতা, স্বজনপ্রীতি নিন্দনীয় ও বর্জনীয়।
১২. মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দাওরার ছাত্র-শিক্ষকদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সুযোগ সুবিধার প্রতি যত্নবান হওয়া। হায়আতুল উলয়া কিংবা স্ব-স্ব বোর্ডের মাধ্যমে কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা।
১৩. ছাত্রদের প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষা ও প্রযুক্তিগত বিদ্যা সম্পর্কে আইডিয়া দেওয়া। প্রয়োজনে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১৪. সিলেবাসে অতি প্রয়োজনীয় বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা। কল্যাণকর উপকারী বিষয় প্রধান্য দেওয়া। জেনারেল সাবজেক্টগুলো দক্ষ শিক্ষাবিদ/ কমিটির মাধ্যমে মানসম্মতভাবে সংকলন ও ছাপানোর ব্যবস্থা করা।
১৫. সরকারি আমলা, মন্ত্রী, এমপি ও সমাজের কর্ণধারদের কাছে সঠিক, নির্ভেজাল ও ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্য একটি অরাজনৈতিক ‘সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ’ গঠন করা। প্রয়োজনে এ পরিষদ চিঠি আদান-প্রদান কিংবা আলোচনার মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী সমস্যার সমাধান করবে।
১৬. ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান; বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক, ইসলামিক সেন্টার-ফাউন্ডেশনে অনুবাদক, মুফাসসির, মুফতি, ডিজি, বিভাগীয় পরিচালক ও বিভিন্ন বাহিনীর রিলিজিয়াস টিচার-ইমামতির জন্য ছাত্রদের উৎসাহিত করা।এবং সুযোগ সৃস্টি করা।
যেখানে শরীয়াহ মোতাবেক চলতে সমস্যা হবে না । এবং অনৈতিক কাজে জড়িত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে না।
১৭. ছাত্রদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া। প্রয়োজনে সাপ্তাহিক তরবিয়তি প্রোগ্রামের আয়োজন করা।
১৮. সরকারিভাবে প্রচলিত ইসলাম বিরুদ্ধ প্রথাসমূহ ও শরিয়াহ বহির্ভূত কর্মকান্ডে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও ধর্মীয় শিক্ষকদের জড়িত না করতে আগেভাগেই নিশ্চিত হওয়া বা লিখিত চুক্তি করা।
১৯. আল-হাইয়াতুল উলয়া ও বোর্ডসমূহের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাজনৈতিক নেতাদেরকে সম্পৃক্ত না করা।
উপরোক্ত বিষয়সমূহে যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে স্বীকৃতি সুফল বয়ে আনবে। কারণ সরকারি ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে অতীতে ও বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা হারানোর নজীর রয়েছে ।
পরিশেষে স্বীকৃতির জন্য ত্যাগ স্বীকারকারী মুরুব্বিদেরকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি।
আল্লাহ তাঁদের জাযায়ে খাইর দান করুন। এবং স্বীকৃতি আমাদের জন্য মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর হোক।
লেখক: শিক্ষক, জামেয়া দারুল মা'আরিফ আল-ইসলামিয়া চট্টগ্রাম
আরআর