নাজমুল ইসলাম কাসিমী: অহেতুক তর্কে লিপ্ত হওয়াটা যদিও ফালতু কথাবার্তার একটি প্রকার। কিন্তু অহেতুক বিতর্কে সাধারণ মানুষের তুলনায় শিক্ষিত লোকেরাই বেশি লিপ্ত হয়। আর 'অহেতুক তর্ক' দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছি’ যাতে দুনিয়া বা দীনের কোনও ফায়দা নেই।
তবে অনেক বিতর্ক আছে এমন, তা শুধু জায়েজই নয়; বরং উত্তমও বটে। এধরণের আলোচনা-পর্যালোচনায় লিপ্ত হওয়া প্রকৃত তালিবে ইলম অথবা ভালো মানুষের পরিচয়।
যে ছাত্র উস্তাদকে কোনো প্রশ্ন করে না, একেবারে চুপচাপ বসে থাকে (এবং যে মুরিদ পীর সাহেবের কথার ওপর প্রশ্ন করে না এদের কেউই সফল হবে না।) কাজেই উভয়ের উচিত জনবসতি ছেড়ে বনজঙ্গলে চারণভূমিতে চলে যাওয়া। এবং রাখালের কাজ করা।
একটি শিক্ষনীয় ঘটনা
একদিন নেযাম উদ্দিন আওলিয়া রহ. এর কাছে ‘সুদূর’ বলখ থেকে দু’জন লোক আসলেন। দুজনই যখন হাউজে ওযু করতে গেলেন তখন এই বিতর্কে লিপ্ত হলেন যে, এই হাউজটি বড়, নাকি বলখের অমুক হাউজটি বড়? উভয়ে নিজ নিজ দাবির স্বপক্ষে দলিলাদি পেশ করতে শুরু করলেন।
এ কথা নেযাম উদ্দিন আওলিয়া রহ. জানতে পারলেন। নামজের পর যখন দুই বুযুর্গ হযরতের খেদমতে হাজির হলেন, এবং কারণ হিসেবে হযরত থেকে নিজেদের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধি করানো ও ফয়েয লাভের কথা বললেন, তখন হযরত নেযাউদ্দিন আউলিয়া রহ. বললেন, তোমাদের বিতর্কের ফয়সালা কী হলো? কোন্ হাউজ বড়?
দুজনই এ কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন। হযরতের কথার কোনও উত্তর দিলেন না। তখন হযরত নেযাম উদ্দিন আউলিয়া রহ. বললেন, তোমাদের (আধ্যাত্মিক রোগ) অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার চিকিৎসা হলো, তোমরা প্রথমে দুজনই হাউজের (দিল্লির বলখের) পরিমাপ করে নিজেদের বিতর্কের ফায়সালা করো, এরপর অন্য কথা।
লক্ষণীয়
আজকাল সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রাবল্য খুব বেশি। দ্বীনের অতীব প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পর্কে কোনোই ধারণা নেই। কিন্তু অহেতুক বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে অনায়াসে। অথচ হাদিস শরিফে এসেছে, ব্যক্তির সৌন্দর্য হলো, সে অনর্থক কথা-বার্তা ত্যাগ করবে। (তিরমিজি শরীফ হাদিস নং-২৩১৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৭৩৭; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৯৭৬)
অহেতুক বিতর্কে নিজেকে না জড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজে বিরত থাকুন। অন্যকেও যথাসাধ্য এর থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করুন। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
আমিন।
লেখক,
মুফতি ও মুদাওররিস-
মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।