সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

মাদরাসার তাখাসসুস বিষয়ে আলেমদের কাছে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নকীব আরসালান
মাদরাসা শিক্ষক ও কুরআন গবেষক

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কোন জাতির উন্নতি অবনতি নির্ভর করে শিক্ষার ওপর, শিক্ষাটা যদি যুগোপযোগী হয় তাহলে সেই জাতি উন্নত হবে কিন্তু শিক্ষা যদি হয় যুগ জিজ্ঞাসার সমাধানে অনুপযোগী তাহলে সেই জাতি পিছিয়ে পড়বে।

ইসলাম হল সার্বজনীন সর্বকালীন জীবন ব্যবস্থা, কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন ঐশী জীবন ব্যবস্থা আসবে না বিধায় সর্বকালে ইসলামকে বিজয়ী রাখার জন্য ইজতিহাদের দরজা খোলা রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞান জীবনাচার যেমন সহজ করে দিয়েছে ইসলাম বুঝাও তেমনি সহজ করে দিয়েছে। কাজেই আমরা বলতে পারি আপডেট আর ইজতিহাদ সমার্থক। কোনো apps আপডেট না করলে ক্রমে ক্রমে অকেজো হয়ে যায় এবং এক সময় বিকল হয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে প্রতি যুগে, কালে ও শতাব্দীতে যুগ জিজ্ঞাসার অনুকূলে ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষা সংস্কার না করলে তা পিছিয়ে পড়ে, সমাজ ও রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণে অনুপযোগী হয়ে যায়।

অথচ কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে ইসলামকে সকল দ্বীনের (মতবাদ) উপর বিজয়ী রাখতে হবে যদিও তা কাফেররা অপছন্দ করে। কাজেই ইসলামের এ আপডেটকে ইজতেহাদ বলা হয়, কুরআন হাদীস রিচার্জ করে আলেমগণ যুগ জিজ্ঞাসার সমাধান দিবেন, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করবেন এটা ইসলামের দাবি আর এটাই ইজতিহাদ।

এজন্যই কেয়ামত পর্যন্ত ইজতিহাদের দরজা খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ইসলামি উসুল ঠিক রেখে সময়োপযোগী বিষয়গুলো আপডেট করা হচ্ছে না।

মাদকাসক্তি ও উশৃঙ্খল জীবন নিয়ন্ত্রণে সহজ সমাধান হলিকেয়ার

আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। কাজেই আজ সময় এসেছে এবং চূড়ান্তভাবেই এসেছে যে, আমাদের মাদরাসা শিক্ষা ও সিলেবাসে কি ত্রুটি রয়েছে, উম্মাহর কি সমস্যা রয়েছে সেসব শনাক্ত করে সমাধান করা। তাহলেই এ জাতির মুক্তি জুটবে।

আমার ক্ষুদ্র চিন্তা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষা ও উম্মাহর সমস্যাগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করছি- যাতে আলেমগণ ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ এসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। তবে আমার আলোচনা-সমালোচনায় যদি কেউ বিরক্ত হন তাহলে সেটা হবে অতীব দুঃখের বিষয়।

কারণ এ সমালোচনা কাউকে কষ্ট দিতে নয়, এর উদ্দেশ্য শুধু সংশোধন এবং ইসলাম ও উম্মার মুক্তি। কাজেই আমার উপস্থাপিত বিষয়ে ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রাখছি।

এবার মূল কথায় আসি। আমাদের মাদরাসা শিক্ষাটা দুই ধারায় বিভক্ত- আলিয়া মাদরাসা ও কওমী মাদরাসা। উভয় শিক্ষা ধারায় দাওরা ও কামিল পাশ করার পর বিশেষ শাস্ত্রে উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। এটাকে কওমী মাদরাসায় তাখাসসুস আর আলিয়া মাদরাসায় গ্রুপ বলা হয়।

এই তাখাসসুস হল চারটি শাস্ত্র- কুরআন, হাদীস, ফিকাহ ও আরবী সাহিত্য। ছাত্ররা দাওরা ও কামিল পাশ করার পর উচ্চতর দক্ষতা অর্জনের জন্য ঐসব এক বা একাধিক গ্রুপে অধ্যয়ন করে।

এখন প্রশ্ন হল, তাখাসসুস বা গ্রুপ অধ্যয়নকারীরা সাধারণ দাওরা ও কামিল পাশ ছাত্রদের থেকে কতটা বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারছে? বাস্তবে দেখা যায় দাওরা ও কামিল পাশ ছাত্রদের থেকে তাখাসসুসধারীরা বেশি কোন অবদান রাখতে পারছে না।

যেমন তাখাসসুসধারীরা ইসলামি অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আইন, বিচার ব্যবস্থা বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারছে না, গ্রন্থ রচনা করতে পারছে না।

তারা দাওরা ও কামিল পাশ ছাত্রদের মতই অনুৎপাদক। ইসলামের এসব বিষয়ে যারা গ্রন্থ রচনা করছেন তারা অনেকেই দেখা যায় সাধারণ দাওরা, কামিল বা আধুনিক শিক্ষিত কিংবা আলাদাভাবে অধ্যয়নের মাধ্যমে সে জ্ঞান অর্জন করেছে।

তাখাসসুসধারীদের আলাদা কোনো বিশেষত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পক্ষান্তরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা যে বিষয়ে অনার্স করে সে ওই বিষয়ে দক্ষ হয়, গ্রন্থ রচনা করে, সমাজ ও রাষ্ট্রে অবদান রাখে। আর এসব গ্রন্থই অন্যান্য ক্লাসে পাঠ্য করা হয়।

কাজেই বুঝা যাচ্ছে কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, আদব ইত্যাদি বিষয়ে হাজার বছর আগের পদ্ধতিতে তাখাসসুস করে লাভ নেই, এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকলে আর সকল মুসলমান তাখাসসুস করে বসে থাকলেও কোনো ফায়দা হবে না।

রাষ্ট্র রাজনীতি ইহুদী-খ্রিস্টানের হাতেই থাকবে, ইসলাম ও উম্মাহর মুক্তি জুটবে না। এখন প্রশ্ন হলো তাহলে এ মাৎস্যন্যায় অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি?

এ বিষয়ে সম্মানিত আলেমগণ ও ইসলামি চিন্তাবিদদের উদ্দেশ্যে আমার ক্ষুদ্র বিবেকের প্রস্তাব পেশ করছি। তা হলো তাখাসসুসটা কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, আদব- এ চার শাস্ত্রে না হয়ে অধ্যায় ভিত্তিক হোক।

অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, ইসলামি অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজকল্যাণ, নাগরিক অধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার বা মা-শিশু, ব্যাংক/বায়তুল মাল, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংবিধান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিজ্ঞান ইত্যাদি অধ্যায় ভিত্তিক হোক।

এর পদ্ধতি হবে যেমন ধরা যাক অর্থনীতি। কুরআন-হাদীসের অর্থনীতি সংক্রান্ত নসগুলি থাকবে মূল টেক্সট। সাথে ইসলামি অর্থনীতি ও আধুনিক অর্থনীতির কিছু বই পাঠ্য করে দাওরার ন্যায় এক বা দুই বছরের তাখাসসুস হবে।

যেমন ধরা যাক, অর্থনীতির ওপর একশ আয়াত পাওয়া গেল আর তিনশ হাদীস পাওয়া গেল- এগুলি হলো মূল টেক্সট। এখন এই একশ আয়াত সম্পর্কে তাফসীর গ্রন্থাবলীতে কি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দেয়া হয়েছে ছাত্ররা সেসব গবেষণা করবে, ইসলামি অর্থনীতির উপর লিখিত বিশ- ত্রিশটি গ্রন্থের উপর গবেষণা করবে, আধুনিক অর্থনীতির ওপর পনের বিশটি বিখ্যাত গ্রন্থের উপর গবেষণা করবে, ইসলাম ও আধুনিক অর্থনীতির তুলনামূলক পার্থক্য নির্ণয় করবে, গবেষণা করবে, প্রবন্ধ নিবন্ধ রচনা করবে, গ্রন্থ রচনা করবে।

উস্তাদ শুধু দিক নির্দেশনা দিবেন। এভাবে ছাত্ররা প্রত্যেক শাস্ত্রে কুরআন হাদীসের নসগুলিকে মূল টেক্সট ধরে সেই শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট ইসলাম ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখিত গ্রন্থাবলীর ওপর গবেষণা করবে, প্রবন্ধ ও গ্রন্থাবলি রচনা করবে।

তাহলে আশা করা যায় শিগগির মুসলিম সন্তানরা বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলার পাশাপাশি প্রচলিত সমাজতন্ত্র এবং সেকুলার গণতন্ত্রকে পৃথিবী থেকে ‘আল-বিদা’ বলতে পারবে।

এখন কথা হলো শুধু আশা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই আমাদের দাবী হল যারা দাওরা ও কামিল মাদরাসায় সামনে তাখাসসুস খুলতে চাচ্ছেন- তারা উল্লেখিত অধ্যায়ভিত্তিক খুলুন।

কিন্তু আলিয়া মাদরাসায় সরকারি বিধির কারণে সেই সুযোগ নেই বিধায় ইসলাম শিক্ষার মূল কেন্দ্র কওমী মাদরাসাগুলিকেই আগে এগিয়ে আসতে হবে।

কাজেই আমাদের দাবি হলো ঢাকার কয়েকটা বড় মাদরাসায় ওইভাবে তাকাচ্ছুস খুলুন, তারপর বিজ্ঞান শাখা, মেডিকেল শাখা, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা ও অন্যান্য শাখা খুলুন, নিজেরা জেগে উঠুন অন্যদের জাগিয়ে তুলুন।

আপনারা পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করুন আমরা জান মাল নিয়ে আছি আপনাদের সাথে, সমগ্র উম্মাহ আছে আপনাদের সাথে, সর্বোপরি আছে আল্লাহর সাহায্য। কাজেই শুরু হোক বিপ্লব, শুরু হোক রেনেসাঁ, শুরু হোক জাগরণ, ইনশাআল্লাহ পৃথিবী ইসলামের।

আরও পড়ুন: কুরআন পরিত্যাগ ও আমাদের দুরবস্থা

-আরআর

[হলি কেয়ার গত দুই বছরে অসংখ্য মাদকাসক্ত রোগীকে ফিরিয়ে দিয়েছে সঠিক জীবন। অনেক বাবা মা’র হারিয়ে যাওয়া ভবিষ্যতও ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই আপনার ছেলে, সন্তান, বন্ধু বান্ধব বা কোনো আত্মীয় সজন যদি এমন আসক্ত ও উশৃঙ্খল জীবনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে দ্রুত নিয়ে আসুন হলিকেয়ারে। মোবাইল – 01777014346, 58316669]


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ