মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক, দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়ার ইমাম, বাংলা ভাষার পন্ডিত, লেখক।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী আলোচিত জঙ্গিবাদবিরোধী লক্ষাধিক আলেমের ফতোয়া সংগ্রাহক ও সংগঠক।
‘ইকরা বাংলাদেশের’ প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক তিনি। জমিয়তুল উলামা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান। সামাজিক সংগঠন ইসলাহুল মুসলিমীন প্রতিষ্ঠা করে সমাজের দরিদ্র অবহেলিতের মধ্যে কাজ করছেন দীর্ঘ দিন যাবত। তার কর্মগত পরিচয় বহুবিধ। চিন্তার স্তর গভীর, পদক্ষেপ কৌশলী। তার লেখালেখি, বেড়ে ওঠা, সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব ও তরুণ সাংবাদিক আমিন ইকবাল।
আওয়ার ইসলাম : আপনার পছন্দের কাজ কী যা নেশা মনে হয়?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : পছন্দ বা নেশার কাজ বয়সের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে। কৈশোর সময়ে ইচ্ছা এবং উচ্চাশা ছিল বাংলা সাহিত্যে চূড়ান্ত স্থান দখল করব। বর্তমানে আমার নেশা হলো কোরআন শরিফের তাফসির এবং রাসুল সা.-এর সিরাতের ওপর দুটি কাজ শুরু করেছি, তা শেষ করা। আমি রাসুল সা.-এর সিরাতকে মানবতার চূড়ান্ত রূপ হিসাবে তুলে ধরতে চাই। এমনকি জিহাদেও মানবিকতার কী রূপ প্রকাশ পেয়েছেÑ তা তুলে ধরতে চাই।
আওয়ার ইসলাম : লেখিয়েদের জন্য নিজস্ব পাঠশালা আবশ্যক, আপনার ব্যক্তিগত পাঠশালা কতটা সমৃদ্ধ?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :: ব্যক্তিগত লাইব্রেরি বলতে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনেরর প্রারম্ভে কিশোরগঞ্জে পাবলিক লাইব্রেরি এবং জামিয়া ইমদাদিয়া মাদরাসার লাইব্রেরিটি ছিল। দুটো লাইব্রেরি-ই আমার জন্য অবাধ ছিল। কর্তৃপক্ষ আমাকে এত ভালোবাসতো, যখনই পড়তে যেতাম, আমাকে সুযোগ করে দিত। সহযোগিতা করত। সাহস দিত। অনেকের ধারণা, বিশেষ করে লাইব্রেরির তত্ত্বাবধায়ক বলতেন, ‘কিশোরগঞ্জের এমন কোনো লোক নেই, যে কিশোরগঞ্জের পাবলিক লাইব্রেরির সব বই পড়েছে, তবে ফরিদ মাসউদ ছাড়া। সে এই লাইব্রেরির সবগুলো বই একে একে পড়েছে।’ আমি আসলে ওইভাবে পড়িনি। আমার পড়তে ভালো লাগতো, তাই পড়তাম।
আওয়ার ইসলাম : পড়ার নেশা তৈরি হলো কীভাবে?
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ : মানুষের সাধারণত কোনো না কোনো বন্ধু থাকে। কিন্তু আমি স্বভাবগতভাবে একাকিত্ব পছন্দ করি। তাই বইকেই আমার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিলাম। যাতে আমার সঙ্গী হয়। ওভাবেই পড়ার নেশা তৈরি হয়।
আওয়ার ইসলাম : জীবনে লাইব্রেরিকেন্দ্রিক কোনো গল্প...
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে পড়াশোনা করা অবস্থায় রাত-দিনের অধিকাংশ সময় দারুল উলুমের লাইব্রেরিতে কাটিয়েছি। একবার নাকি এমন হয়েছে যে, আমি লাইব্রেরিতে বসে পড়ছি, এদিকে নির্ধারিত সময় শেষ হলে দায়িত্বশীল ভুলে আমাকে ভেতরে রেখেই লাইব্রেরি বন্ধ করে চলে গেলেন। পরের দিন এসে দেখেন আমি পড়ছি-ই। বিষয়টি লাইব্রেরির খাদেম বলতেন। আমি ঠিক বলতে পারব নাÑ আসলে এমনটা হয়েছে কিনা।
আওয়ার ইসলাম : কোন ধরনের বই পাঠে আগ্রহী ছিলেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : তখন নবিজি সা.-এর হাদিসবিষয়ক গ্রন্থ পাঠে আগ্রহী ছিলাম বেশি।
আওয়ার ইসলাম : কবে থেকে সাহিত্যের পাঠ শুরু করেন? সাহিত্যের প্রথম পাঠ কী?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : ছোটবেলা থেকেই বাংলা ও সাহিত্যের প্রতি আমার অনুরাগ ছিল। এর পেছনের আমার বাবার অবদান সবচে বেশি। তিনি তৎকালীন সময়ের প-িত ছিলেন। আমার ৭-৮ বছর বয়সেই আমাকে বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে দিতেন। আমার দশ বছর বয়সে মাইকেলের মেঘনাদ বধ পড়িয়েছেন। কালিদাসের মেঘদূত পড়িয়েছেন। তৎকালীন সময়ে মেঘদূতে অনেক উলঙ্গ ছবি ছিল, তারপরও বাবা আমাকে সেটা পড়তে দিয়েছেন।
আমার প্রতি তার আস্থা ছিল বলেই পড়তে দিয়েছিলেন। তিনি যেমন ওটা আমার হাতে তুলে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি, আমিও পড়তে অস্বস্তিবোধ করিনি। এছাড়া তৎকালীন সময়ের খ্যাতিমান সাহিতিকদের বইও পড়িয়েছেন। তবে সাহিত্যের প্রথম পাঠ কোনটি এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
আওয়ার ইসলাম : আপনার শিক্ষাজীবনের ভালো সময় কোনটি, প্রিয় শিক্ষক কারা?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :মৌলিকভাবে যেহেতু আমি সামাজিক মানুষ ছিলাম না, তাই আমার পুরো শিক্ষাজীবনটাই ভালো কেটেছে। আমি প্রায়ই বলে থাকি, তখন যদি আমি মারা যেতাম তাহলে নিশ্চিত জান্নাতে যেতাম। কারণ তখন আমার জীবনটা খুবই সুন্দর ও শুভ্র ছিল। যেহেতু কারও সঙ্গে মিশতাম না, তাই পরিচিত গোনাহ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। তাই বলি, আমার পুরো সময়টাই ভালো কেটেছে।
আর প্রিয় শিক্ষকের কথা যদি বলি, মক্তব থেকেই আমাকে পড়িয়েছেন হজরত মাওলানা কুতুবুদ্দিন সাহেব। জামিয়া ইমদাদিয়ায় যতদিন ছিলাম, আমার ক্লাসের কিতাবাদি পর্যন্ত তার রুমেই থাকত। তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক। হজরত মাওলানা কাজি মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব আমার জীবনে অন্যন্য অবদান রেখেছেন। মৌলিকভাবে আমার উস্তাদগণ আমার উপর খুব আস্থা রাখতেন এবং আমাকে খুব স্নেহ করতেন। ফলে উপন্যাস পড়লেও তারা কিছু বলতেন না।
আওয়ার ইসলাম : শিক্ষকদের মধ্যে কাকে অসধারণ বলে মনে করেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :কৈশর সময়ে উনারা দুজন (মাওলানা কুতুবুদ্দিন সাহেব ও মাওলানা কাজি মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব) আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়েছে। পরে হজরত মাওলানা আসাদ মাদানি রহ. এবং হজরত মাওলানা জাকারিয়া রহ.ও অসাধারণের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। হজরত জাকারিয়া রহ.-এর সঙ্গে পুরো এক রমজান ইতেকাফে কাটিয়েছি। অসাধারণ আল্লাহর অলি তিনি।
আওয়ার ইসলাম : প্রচলন আছে বাংলা সাহিত্য একটি গুরুনির্ভর বিদ্যা, আপনার কোনো সাহিত্যের শিক্ষক বা দীক্ষাগুরু আছেন?মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমার বাবাই আমার সাহিত্যের শিক্ষক এবং দীক্ষাগুরু।
আওয়ার ইসলাম : দেশের বাইরে কোথায় কোথায় পড়াশোনার সুযোগ হয়েছে?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :দেশের বাইরে শুধু দেওবন্দেই পড়াশোনা করেছি। অবশ্য মিশরে পড়াশোনার ইচ্ছা ছিল। ঘটনাক্রমে কাজী মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব একবার ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে আমাকে দেওবন্দ নিয়ে যান। দেওবন্দে কাজী সাহেবের একটা অবস্থান ছিল। সেই সূত্রে আমাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এরই মধ্যে দাখেলা ইমতেহান (ভর্তি পরীক্ষা) শুরু হয়ে গেলে তিনি আমাকে বললেন, ‘মাওলানা একটা পরীক্ষা দেন দেখি।’ আমিও ডান-বাম না ভেবে পরীক্ষা দিয়ে দিলাম। পরীক্ষা হলো আমার অপছন্দের বিষয়Ñ মানতেকের ওপর। আবার যে কিতাবটি পরীক্ষা হয়েছে, সেটি আমি পড়িনি। তারপরও সাহস করে অনেক কিছু বললাম। আলহামদুলিল্লাহ! অনেক নাম্বার পেয়ে পাস করে ফেললাম। তারপর ভর্তিও হয়ে গেলাম। এভাবেই দেওবন্দের থেকে গেলাম। মিশর আর যাওয়া হলো না।
আওয়ার ইসলাম : দেওবন্দ আপনাকে কী দিয়েছে?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :দেওবন্দ আমাকে সব দিয়েছে। বিশেষ করে দ্বীনি ইলমের আজমত আমার মধ্যে ছিল না, দেওবন্দ যাওয়ার পর আমি সেটা পেয়েছি। দ্বীনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মান জন্মেছে সেখানে। আমার উপলব্ধির গভীরতা তৈরি হয়েছে। আমি মনে করি দেওবন্দে যে-ই যাবে তার নিজস্ব একটা উপলব্ধি তৈরি হবে।
আওয়ার ইসলাম : দেওবন্দের ‘সদসালা’ প্রসঙ্গে কিছু যদি বলতেন!
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আমার দেওবন্দে পড়া কালীন সময় থেকেই সদসালার আয়োজন চলছিল। তখন মুহতামিম ছিলেন কারী তৈয়ব সাহেব। তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সে সময় কথা হচ্ছিল আমাকে সদসালার আয়োজনে সম্পৃক্ত করা হবে। কিন্তু কোনো এক সমস্যার কারণে আমি দেশে চলে আসি। তারপর মূল অনুষ্ঠানের আগে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের সব ফারেগিনের নামে দাওয়াত নামা আসে। আমার নামেও আসে। আমি যাই।
এদিকে আয়োজক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভাষণ দেয়ার জন্য আমার নাম ঠিক করে রেখেছেন। আমার বয়স তখন সাতাশ-আটাশ। বিয়েও করিনি। তখন সদসালায় বাংলাদেশের বড় বড় ফারেগিন আলেমগণও উপস্থি ছিলেন। খতিব উবায়দুল হক সাহেব উপস্থিত ছিলেন। শায়খে কুরিয়া উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো অপেক্ষাকৃত তরুণ হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ আমার নাম ঘোষণা করলেন। আমিও সাহস করে একটা ভাষণ দিয়ে দিলাম।
আওয়ার ইসলাম : আজ-কাল কী পড়ছেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :বর্তমানে যেহেতু তাফসির এবং সিরাত নিয়ে কাজ করছি তাই সে কেন্দ্রিক পড়াশোনাই করছি। যতদূর পারছি পড়ছি আর কাজটুকু করছি। সাথে সাথে অনেক প্রসিদ্ধ একটি গ্রন্থ ‘রাওয়াহে মিনাশ শারেহা’ও পড়ি। তাবলিগের বড় মুরব্বি আহমদ লাট সাহেব বলেন, ‘এই গ্রন্থটি আমি এক বৈঠকে পাঁচবার পড়েছি।’
আওয়ার ইসলাম : বাংলা সাহিত্য আপনার কী রকম পড়া আছে?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের মধ্যে তারাশঙ্কর, বিমলবিত্রের লেখা পড়েছি। কবিদের মধ্যে জীবনান্দদাশ, ফররুখ আহমদকে বেশি পড়েছি। এছাড়াও অনেককে পড়েছি। পড়ার ক্ষেত্রে কাহিনীতে কখনই ডুবে যেতাম না। লেখকের ভাষারীতি, বাক্যগঠন, আবেগ প্রকাশের ভঙ্গিমা এসবে বেশি গুরুত্ব দিতাম।
আওয়ার ইসলাম : বিশ্বসাহিত্যে কাদের পড়েছেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আরবি সাহিত্যের সাব’আ মুয়াল্লাকাতের লেখকদের পড়েছি। মুতানাব্বি-হারিরি পড়েছি। ফারসিতে হাফিজ-রুমিকে পড়েছি। প্রেম প্রকাশের ক্ষেত্রে হাফিজকে আমার কাছে অনন্য মনে হয়েছে। উর্দুতে গালিব-ইকবালকে পড়েছি। কাব্যের দিকে ইকবালের চেয়ে গালিবকে আমি উঁচু মনে করি।
আমি কারও লেখা পড়ে তার ধ্যন ধারণায় প্রভাবিত হইনি কখনো। ছোটবেলা থেকেই একটা বিয়ষ ছিলÑ আমি নিজেকে স্বতন্ত্র মনে করতাম। এটা অহঙ্কারের কারণেই হোক বা যাই হোকÑ আমি নিজেকে স্বতন্ত্রই মনে করতাম। এর পেছনে আমার বাবাই অন্যতম প্রেরণাদায়ক ছিলেন।
আওয়ার ইসলাম : তরুণ লেখকদের আত্মপ্রস্তুতিমূলক কী করা উচিত?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :নতুন বা তরুণ লেখকদের দুইটি বিষয়ে প্রস্তুতি আবশ্যক। প্রথমত. একটি আদর্শ বা চেতনা গড়তে হবে। চেতনা গড়ার জন্য হায়াতুস সাহাবা বেশি বেশি পড়া চাই। এক্ষেত্রে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী ও কাসেম নানুতবী রহ.-এর লেখা পড়া যেতে পারে। চেতনা গড়ার ক্ষেত্রে এগুলো বেশ কাজে দেবে। মাওলানা আবুল হাসান আলী নদবীর লেখাও পড়া যায়। তবে তার লেখায় বিষয়বস্তুর চেয়ে উচ্ছ্বাস বেশি।
আর দ্বিতীয়ত ভাষায় পারদর্শিতা। এক্ষেত্রে বই পড়তে কোনো বাছবিচারের কথা আমি বললব না। তবে পড়তে গিয়ে কাহিনীতে যেন না জড়িয়ে পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাকে লেখকের ব্যবহার পদ্ধতি, ভাষা প্রয়োগ ও শব্দ প্রয়োগে মনোযোগী হতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে, সুখ-দুঃখের গল্পটা লেখক কীভাবে কী ভঙ্গিমায় প্রকাশ করছেন।
আওয়ার ইসলাম : আপনি কি গজল, নাত বা সঙ্গীত শোনেন?
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ : হ্যাঁ, আমি নাত শুনি। মিলাদ রেজা এবং কাদরির নাত শুনি। যদিও তারা বেদাতি। কিন্তু তাদের নাতগুলো অত্যন্ত অর্থবহ হয়ে থাকে। এছাড়া আহমদ আব্দুল্লাহ, জুনায়েদ জামশেদের নাতও শুনি। বাংলায় নজরুলের নাতে কিছুটা আবেগ পাওয়া যায়। আমি নিজেও কিছু নাত রচনা করেছি। তবে ছন্দের দখল না থাকায় লজ্জায় কাউকে বলি না। এটা নিজের আবেগ থেকে লেখা। আমি মনে করিÑ একজন সাহিত্যিক বা লেখক চিন্তার দিক দিয়ে যেমন স্বাধীন তেমনি সে ব্যকারণের দিক দিয়েও স্বাধীন। হয়তো তার সবকিছু পাঠক নিবে না, তবে সে স্বাধীনভাবে লেখার অধিকার রাখে।
আওয়ার ইসলাম : ‘লাজনাতুত তলাবা’ সাহিত্য নির্মাণধর্মী সংগঠন, এর কর্ণধার আপনি, কী স্বপ্ন থেকে এই লাজনা গঠন করেছিলেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :একটু শুরু থেকেই বলি। আমাদের ছাত্রজীবনে কওমি শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষাচর্চার তেমন সুযোগ ছিল না। তবে আমি বাবার কারণে বাংলা ভাষার প্রতি অনেকটাই আকৃষ্ট ছিলাম। তখন থেকেই আমি আমার চারপাশে লিখে রাখতাম, বাংলা বলুন, বাংলা লিখুন, বাংলাচর্চা করুন। এতে করে আমার ছাত্র বন্ধুরা মনে করত আমি বাংলাচর্চায় খুবই আগ্রহী। তারপর শিক্ষাজীবনের শুরুর দিকে জামিয়া ইমদাদিয়ার শিক্ষক হয়ে যাওয়ার পর বাংলা ছড়ানোর চেষ্টা করি।
‘আল মুনাদি’ নামে ছাত্র জীবনে একটা দেয়াল পত্রিকা বের করতাম। শিক্ষক হয়ে সেই দেয়াল পত্রিকাটি মাসিক হিসাবে নিয়মিত বের করতে শুরু করলাম। তখন আলেমের মাঝে বাংলা প্রচলনের একটা আন্দোলন হিসাবেও গ্রহণ করেছিলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বাংলা ভাষার চেতনা থেকেই আমি বাংলাদেশ স্বাধীনের পক্ষে ছিলাম।
জামিয়া ইমদাদিয়া থেকে এক সময় যাত্রবাড়ি মাদরাসায় চলে আসলাম। এখানে এসে বুখারি শরিফের ক্লাস নিলাম বাংলায়। এমনকি বুখারির প্রশ্নও করলাম বাংলায়। এমনটা এর আগে কেউ করেছে কি না জানি না। একপর্যায়ে যাত্রাবাড়ির মাদরাসাকে লোকজন বাংলা মাদরাসা হিসাবে উপহাসও করত। তারপর আমি দেওবন্দ চলে যাই। সেখান থেকে ফিরে ফরিদাবাদ মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসাবে যোগদান করি।
সেখানে আমার ছাত্রদের সামনে আমার চেতনা ও উপলব্ধি ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করতে থাকি। এরই মধ্যে মাওলানা ইসহাক ফরিদী (আমরা একসঙ্গে যাত্রাবাড়িতেও ছিলাম) আমাকে বললেন, এই চিন্তাকে সাংগঠনিক রূপ দিলে হয়ত ফায়দাটা বেশি হবে। এভাবেই ফরিদাবাদ থেকে লাজনার সূচনা হয়। তখন আমার সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছেন..... (৪০-৪১)।
‘লাজনাতুত তালাবা’ শুধু বাংলাচর্চার কেন্দ্র ছিল না, এটি দারুল উলুম দেওবন্দের চেতনা প্রসারের সংগঠন ছিল। কারণ তখনকার সময়ে দেখতে পাচ্ছিলাম আমাদের ছাত্রদের মাঝে জামায়াতে ইসলামী নানাভাবে কাজ করছে। তাই এর মাধ্যমে দেওবন্দের চেতনা মজবুতের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলাম।
আর আমার একটা ধারণা ছিল মানুষের কোনো রাজনৈতিক ভীত সংঘটিত হয় না, আবার সংঘটিত হয়েও টিকে থাকে না, যদি না সাংস্কৃতিকভাবে তার ভিত্তি না থাকে। আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মানুষকে তার ভাষা ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে এদেশে কখনও ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর মাধ্যমে মাওলানা (..... ৪২-৪৩) প্রভাবিত হন। তিনি তখন গ্রামে থাকতেন।
আমি চেষ্টা করে তাকে ফরিদাবাদ নিয়ে আসি। মাওলানা ফারুক সাহেব তখন সৌদি আরবে মানুষ পাঠানোর কাজ করতেন। তাকে ধরে এনে বলি, তুমি মাদরাসায় পড়াও। তাকেও ফরিদাবাদ নিয়ে আসি। আর মাওলানা আশরাফ আলী সাহেবও আমাদের সহযোগিতা করবেন বলে একাত্মতা প্রকাশ করলেন। কিন্তু লাজনার কার্যক্রম শুরু করতে না করতেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে অনেকে ভুল বুঝাতে লাগল যে, উনারা যেভাবে করছেন, মাদরাসা তো উনাদের হাতে চলে যাবে। এতে করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের দূরত্ব তৈরি হলো। এক পর্যায়ে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
এদিকে আমার উস্তাদ কাজী মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব যাত্রাবড়ি থেকে মালিবাগ মারাসায় চলে আসেন। তিনি আমাকেও মালিবাগ নিয়ে আসেন। ফরিদাবাদ থেকে বড় বড় অনেকেই তখন বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আমি কাজী সাহেবকে বলে তাদেরও মালিবাগে নিয়ে আসি। মুফতি আব্দুল হান্নান, মুফতি গোলাম মোস্তফা, মাওলানা নুর হোসাইন, মাওলানা আবু ফারুক, মাওলানা সুলাইমান নুমানী, সবাই তখন মালিবাগে চলে এলেন। এবং সে বছরই মালিবাগে দাওরায়ে হাদিস হয়ে গেল।
মালিবাগে দাওরায়ে হাদিস চালু হওয়া এবং ভালো ছাত্র আসার পেছনে লাজনার অবদান অনেক। মালিবাগে আসার পর সংগঠনটির নিয়মিত কার্যক্রম চালু করি। এখানে এসে এর নাম দেই ‘লাজনাতুত তালাবা’। ফরিদাবাদ থাকতে আমরা শুধু কয়েকজন বসতাম। নাম দেইনি তখনও।
আওয়ার ইসলাম : বাবা-মায়ের দেওয়া নাম বা ডাক নাম কী?মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : মাসউদ। পারিবারিক পরিম-লে আমি মাসউদ নামেই পরিচিত।
আওয়ার ইসলাম : লেখকদের নাম পরিবর্তনের নাটকীয়তার শেষ নেই। আপনার কোনো ছদ্মনাম আছে?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক ইত্তেফাকে কিছুদিন উপসম্পাদকীয় লিখেছি। সেখানে ‘ফারান রাশেদী’ নামে লিখতাম। এছাড়া অন্যকোনো নামে লিখিনি কখনও।
ইত্তেফাকে তখন রাহাত খান ছিল। সে আমার বাবার সরাসরি ছাত্র। সেই আমাকে লেখার সুযোগ করে দিয়েছিল। আমার প্রথম প্রবন্ধ পত্রিকায় ছাপা হয় দৈনিক আজাদে। শ্রমিকের অধিকারবিষয়ক একটি লেখা।
আওয়ার ইসলাম : ছেলেবেলা কাটিয়েছেন কোথায়?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমার ছেলেবেলার পুরোটাই কেটেছে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ।
আওয়ার ইসলাম : লেখালেখিতে স্বাছন্দবোধ করেন কেমন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :লেখালেখির বিষয়ে সব সময় স্বাচ্ছন্দবোধ করি। লিখতে গিয়ে আমাকে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না। লেখার বিষয়বস্তু আমাকে ধরা দেয়। এমনিভাবে শব্দও আমাকে ধরা দেয়। কখনও কোনো শব্দ চিন্তা করে লিখতে হয়নি। কোরআন হাদিসের বিষয়গুলো লিখলে আমার সামনে তা জ্বলজ্বল করে ভাসে। তবে বয়স এবং গোনাহের কারণে সেই অবস্থা অনেকটা এখন কমে গেছে।
আওয়ার ইসলাম : এক বসায় লেখেন না বারবার সংশোধন করেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : আমার জীবনে কোনো লেখা একবার লিখে দ্বিতীয়বার দেখিনি। সে জন্য আমার লেখা কপিতে অনেক ভুল পাওয়া যেতে পারে।
আওয়ার ইসলাম : কখন লিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন? সকাল বিকাল না রাতে?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : নির্দিষ্ট কোনো সময় নাই। অনুবাদ যেকোনো সময় করতে পারি। তবে মৌলিক লেখার জন্য আগে অনেকটা সময় নিয়ে চিন্তা করি। সেই সময়টায় অন্য কিছু করি না। তারপর একটা প্রসব বেদনা শুরু হলে লিখতে বসি। সেটা সকাল হতে পারে, বিকাল হতে পারে, আবার রাতও হতে পারে।
আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশে আলেমদের (নবীন-প্রবীণ, ছাত্র-শিক্ষক) সাহিত্য পাঠের অবস্থা কী?
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ : বর্তমান সময়ে মাদরাসা ছাত্রদের মাঝে সাহিত্যের প্রতি বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এটি আমাকে আনন্দিত করে। আমাদের সময় বাংলা পড়া অনেকটা অকল্পনীয় বিষয় ছিল। বাইরে বিষয়ে তেমন পড়াশোনা করতে দেয়া হতো না। অনেক কষ্ট করে পড়তে হতো আমাদের। সে হিসাবে এখনকার তরুণরা সৌভাগ্যবান। তবে বর্তমানে লিখিয়ে তরুণরা বিষয়বস্তু, বাক্যগঠন ইত্যাদিতে মানসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেনি। এদিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে তারা। সে জন্য প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার। কবিতা পড়লে আবেগ প্রকাশের ভাব বোঝা যায় সহজে।
আরেকটি বিষয় হলো, লেখালেখিতে চিন্তাশীল আলেমে হচ্ছে না। অধিকাংশই অনুবাদ করছে। অনুবাদে সৃষ্টিশীলতা নেই। সব সময় একঘেয়ে হয়ে যায়। অবশ্য অনুবাদকে আমি হেয় করছি না। বুঝাতে চাচ্ছি অনুবাদের চেয়ে মৌলিক ও চিন্তাশীল কাজ বেশি করা উচিত।
আওয়ার ইসলাম : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে আপনি কী কী করেছেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির পদে থাকাকালীন সময়ে প্রকাশনার সাথে সম্পৃক্ত সব বিষয়ে কাজ করেছি। গবেষণা পরিষদ, প্রকাশনা বিভাগ, অনুবাদ সংকলন বিভাগ, ইসলামি বিশ্বকোষ বিভাগ, সবগুলো আমার হাতে সাজানো ও সমৃদ্ধ হয়েছে। ইমাম ট্রেনিংও আমার দ্বারাই সূচনা। তখন ইসলামি ফাউন্ডেশন গড়ে উঠছিল মাত্র, সেজন্য নিজের মতো করে অনেক কাজ করতে পেরেছি আমি। বর্তমানে সেই অবস্থা ফাউন্ডেশনে নেই।
আওয়ার ইসলাম : আপনার সাহিত্য এবং রচনা কর্মের মধ্যে সবচে শ্রেষ্ঠ কর্ম কোনটি?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : শ্রেষ্ঠ বলা তো মুশকিল। কারণ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত চর্চা করার সময়। তবে রাসুল সা.-এর ওপর ছোট্ট একটি রেসালা রচনা করেছি, ......। সেটি শব্দ এবং আবেগের দিক দিয়ে আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হয়। তবে সাহিত্য মানে হয়েছে কি না বলতে পারবো না। আর গ্রন্থ হিসাবে ‘ইসলামে শ্রমিকের অধিকার’ গ্রন্থটি শ্রেষ্ঠ মনে হয়। বইটি যখন লিখি, তখন এর কোনো নমুনা ছিল না।
আওয়ার ইসলাম : ‘ইসলামে শ্রমিকের অধিকার’ গ্রন্থের জন্য কি কোনো অ্যাওয়ার্ড বা সম্মাননা পেয়েছিলেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :না, এখন পর্যন্ত কোনো অ্যাওয়ার্ড বা সম্মাননা পাইনি। আর এ ব্যাপারে আমার কোনো আফসোস নাই। কারণ রবীন্দ্রনাথ নোবেল পেয়েছেন বলে তিনি রবীন্দ্রনাথ হননি। তবে তার সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয় তিনি নোবেল পাওয়ার পর। আর আমি যে কাজ করছি আমার মৃত্যু পর্যন্ত সমালোচনা বন্ধ হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমি চেতনার ওপর জোর দেই বেশি।
আওয়ার ইসলাম : সাহিত্যে আপনার ব্যর্থ কর্ম কোনটি?
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ : একটিও না। আমার জীবনের এক সেকেন্ডের কাজও আমি ব্যর্থ মনে করি না। তবে অন্যের দৃষ্টিতে আমার কাজ ব্যর্থ মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে একটাও ব্যর্থ মনে হয় না।
আওয়ার ইসলাম : আপনি কী আশাবাদী মানুষ না হতশা আপনার নিত্য সঙ্গী?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আমি দারুণভাবে আশাবাদী এবং সফল মানুষ।
আওয়ার ইসলাম : কতটা আশাবাদী?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : এতটাই আশাবাদী যে, আমাকে যদি অগ্নিকু-েও বসিয়ে দেয়া হয় তখনও আমি প্রাণ সঞ্চারের জন্য শক্তি রাখি।
আওয়ার ইসলাম : আপনার বই কাকে, কেন উৎসর্গ করেছেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :মাওলানা মুতাসিম বিল্লাহ সাহেবকে করেছি, মাওলানা কুতবুদ্দিন সাহেবকে করেছি, বাবা-মাকে করেছি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে করেছি।
আওয়ার ইসলাম : ভক্তদের অটোগ্রাফে কতটা অভ্যস্ত ও আনন্দিত?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আমি নিঃসঙ্গ মানুষ। তাই অটোগ্রাফ নিতে আমাকে কেউ চেপে ধরে না। আর আমি এমন জায়গায় যাইÑ যেখানে আমাকে অটোগ্রাফের জন্য কেউ ঘিরে ধরবে, সে সুযোগও থাকে না। তাছাড়া আমার নিজের জন্য আমি এটা খুব একটা পছন্দ করি না।
আওয়ার ইসলাম : ঘরে-বাইরে অনেক ভক্ত ও পাঠক আছে আপনার, পাঠকের ভালোবাসা-অপমানের কথা বলুন!
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : প্রথমত. আমি কাউকে আমার ভক্ত মনে করি না। আমি লিখি আমার অভ্যন্তরীণ চেতানার ধারণা থেকে। তাই আমার লেখায় কে কী মনে করেছেÑ সেটার খোঁজ নিইনি কখনও। কেউ যদি ভক্ত হয়ে থাকে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। কেউ না হলে সেটাও তার ব্যাপার। বর্তমানে আমি শুধু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের সন্তুষ্টি চাই।
আওয়ার ইসলাম : আপনি একজন শিক্ষক, সু-বক্তা, প-িত, সাহিত্যিক, রাজনৈতিবিদÑ কোনো পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। আমার ধারণা সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম দুনিয়াতে এসেছেন মানুষকে মানুষ করার জন্য। বর্তমানে মানুষ হওয়ার বড় অভাব। পপ গায়ক আজম খানের একটা গান আছে, ‘মানুষ আর মানুষ নাই/ কোথায় গেলে মানুষ পাই’।... বর্তমানে কোথাও, এমনকি ধর্মীয় সেক্টরেও স্কলার আছে, কিন্তু মানুষ নাই। তাই আমি নিজে মানুষ হওয়ার চিন্তা করি, অন্যরাও মানুষ হোক, সব সময় এমন ভাবনা লালন করি।
আওয়ার ইসলাম : আপনার প্রথম লেখা কবে কোথায় প্রকাশিত হয়েছে?
মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ : বড় একজন আলেমকে দেয়ার জন্য কাজী মুতাসিম বিল্লাহ সাহেব একটি সম্মাননা পত্র লিখেছিলেন। সেখানে আমার একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। সেই শব্দটা আমার প্রথম প্রকাশিত শব্দ। এতে আমি দারুন খুশি হয়েছিলাম।
প্রবন্ধাকারে লেখা প্রকাশের আগে একটি অনুবাদ বই প্রকাশ হয়েছিল। মুফতি শফি সাহেবের ‘নেযামে তাকসিমে দৌলত’ গ্রন্থের অনুবাদ ‘ইসলামে অর্থ বণ্টনব্যবস্থা’। সেই অনুবাদটা পাঁচ লক্ষ কপি ছাপা হয়েছিল।
আওয়ার ইসলাম : আপনার প্রথম বই?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আমার প্রথম বই ‘আবে হায়াত’ নামে আকাবিরদের জীবনী গ্রন্থ।
আওয়ার ইসলাম : পদক সম্মাননা মানেন বা বিশ্বাস করেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : এটাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করি না। কারণ পৃথিবীতে যারা চিরায়ত সাহিত্যের অধিকারী, তাদের কজনই পদক পেয়েছেন? আর যারা বিচার করে তাদের কি ক্ষমতা আছে রবীন্দ্রনাথের মতো একটা কবিতা লেখার? তাদের আমি লেম্যান মনে করি। আর সৃষ্টিশীল মানুষকে মনে করি মর্যাদাবান। সে সৃষ্টি করে জানে। আর যারা বিচার করে তারা লেম্যান। মাথা থেকে উকুন বাছার কাজ করে। কবি লেখকদের মাঝে যে রসবোধ রয়েছে, সেটা কোত্থেকে পাবে আজ যারা নোবেল দিচ্ছে বা একুশে পদক দিচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম : লেখালেখির জন্য কি কোনো পদক ঘরে তুলেছেন?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ : তুলি নাই। তবে হাজি শরিয়তুল্লাহ নামে একটা পদক একবার আমাকে দেয়া হয়েছিল। তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমার ছোট ছেলে গিয়ে নিয়ে এসেছে। সেটা শুধু লেখালেখির জন্য দেয়নি, সামগ্রিক বিষয়ের কারণে দিয়েছে।
আওয়ার ইসলাম : আপনার প্রিয় ছাত্র কারা?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :আমি কাউকে আমার ছাত্র মনে করতে পারি না। কারণ আমার ছাত্রদের কেউই আমার চিন্তা ও চেতনাকে ধারণ করতে পারেনি। এটা আমার ধারণা।
আওয়ার ইসলাম : আর কতদিন বাঁচতে চান?
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ :এক মুহূর্তও না। কারণ আমাকে তো একদিন যেতে হবেই। আর আমি কাজ ও সৃষ্টিশীল চিন্তার ওপর এতটাই ব্যাপক যে, তা কখনই শেষ করতে পারবো না। হাজার বছর বয়স পেলেও না। তাই শেষ যেহেতু করতে পারবো না আর যেতে একদিন হবেই, তাই যত দ্রুত যাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনালেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ
এসএস