শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

কার বিজয়? কিসের বিজয় উল্লাস? কার জন্য উল্লাস?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার

বিজয় উল্লাস উপভোগ করতে গিয়ে সেলিম হোসেন নামের এক বাংলাদেশী আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। ৪৫ বছর বয়সী সেলিম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

গভীর রাতে এলাকায় বড় পর্দায় নাইজেরিয়া-আর্জেন্টিনার খেলা দেখানোর ব্যবস্থা হয়। প্রিয় দলের খেলা দেখতে এসে শুরু থেকেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ছিলেন নিহত সেলিমসহ আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। খেলা শুরুর ১৪ মিনিটে প্রথমে আর্জেন্টিনা গোল করে এগিয়ে থাকে।

খেলার দ্বিতীয় সেশনে পেনাল্টি পেয়ে সমতা ফিরিয়েছেন নাইজেরিয়া। এরপর থেকে অন্যসব সমর্থকের মতো সেলিমও প্রিয় দলের জন্য চাপ অনুভব করেন। কারণ হেরে গেলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে হবে আর্জেন্টিনাকে।

খেলা শেষ হওয়ার ৪ মিনিট বাকি থাকতে আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় গোল করে বিজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এসময় বিজয় উল্লাস উপভোগ করতে গিয়ে সমর্থক সেলিমের হৃদযন্ত্রের ক্রিয় বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকমৃত ঘোষণা করেন।

ব্রাজিল ফুটবল দলের বিজয়ে উৎসব করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশী যুবক মফিজুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের রাতের খেলায় মফিজুলের পছন্দের দল ব্রাজিল কোস্টারিকাকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিজয়ী হয়। এ উপলক্ষে রাতে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেন মফিজুল।

ওই সাউন্ডবক্সে সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন তিনি। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধারের পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে তার মৃত্যু হয়।

আর্জেন্টিনার পতাকা লাগাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারালেন টুটন নামের ১৮ বছর বয়সী এক বাংলাদেশী যুবক।

একদিন দুপুরে দিকে টুটন মিয়া বাড়ির পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠে গাছের মধ্যে আর্জেন্টিনার পতাকা লাগাতে চেয়েছিল। ওই সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে টুটন খুঁটি থেকে মাটিতে পড়ে যায়। পরে স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গাছের চূড়ায় ব্রাজিলের পতাকা টানাতে গিয়ে ১৪ বছর বয়সী রাশেদ হাসান নামের এক মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে গেলো বিকেলে ঢাকা-সাগরদিঘী সড়কের প্রতিমা বংকী এলাকার মেহগনি গাছ থেকে পা পিছলে সড়কের চলন্ত একটি বাসের সামনে পড়ে যায় রাশেদ। এ সময় বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়।

রাশেদ টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী এলাকার কুয়েত প্রবাসী বছির উদ্দিনের ছেলে এবং প্রতিমা বংকী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

এক বিকেলে ঢাকা-সাগরদিঘী সড়কের প্রতিমা বংকী এলাকার সবচেয়ে উঁচু একটি মেহগনি গাছে ব্রাজিলের পতাকা টানাতে ওঠে রাশেদ। গাছে ওঠার এক পর্যায়ে সে পা পিছলে সড়কের চলন্ত একটি বাসের সামনে পড়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাশেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সাতদিন ধরে চিকিৎসা নেয়ার পর রোববার রাতে তার মৃত্যু হয়।

এ ধরণের দু’চারটি শুধুমাত্র পতাকা টানানো ও বিজয় উল্লাস উপভোগ করার ভারাক্রান্ত অধ্যায়। এক দলের সমর্থকদের সঙ্গে অন্য দলের সমর্থকদের ভাগ বিত-া, সংঘর্ষ তো লেগেই থাকে। সমর্থনকৃত দলের পরাজয়ে আত্মহত্যার নজিরও কম নয়। এতে শত সহ¯্রধিক আহত হয়।

চিরতরে স্তব্দও হয়ে যায় বহু প্রাণ। আবার সমর্থিত দেশের পতাকা টানাতে গিয়ে অস্বাভাবিক ভয়াবহ মৃত্যুর বেদনা বিধুর ইতিহাসও অনেক।

সমর্থিত দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে জীবনে যারা বিভিন্ন করুণ বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন তাদের মাধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যাক্তি বয়েছে। শিক্ষার্থী, শ্রমিক, ব্যবসায়ী আরো কতো শ্রেণি পেশা। কি আবেগ অনুভূতির সম্ভার তাদের মাঝে। দল প্রীতির বিচরণও বিরামহীন।

কিন্তু কার জন্য এমন বিজয় উল্লাস? কার জন্য আমি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছি আমার সবচেয়ে নিকটের প্রাণ প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে? কি কারণে সম্পর্ক বিনষ্ট করে দিচ্ছি সর্বাবস্থায় পাশে থাকা প্রতিবেশী ও প্রিয়জনদের সঙ্গে? অবশেষে নিঃশেষ করে দিচ্ছি স্বয়ং নিজেকে?

কার জন্য আমাদের এতো ভালোবাসা? আমরা যাদের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে এতো বিপর্যয়ের জন্ম দিচ্ছি তারা কি তা জানে। আমার আত্মঘাতী কার্যক্রম কি তাদের একটুও বেদনা দেয়? না, কক্ষনো না! আমাদের বিপর্যয় তাদের দৈনন্দিন কাজে একটু বিগ্ন ঘটায় না।

প্রতিনিয়ত তারা অবিরাম গতিতে চলতে থাকে তাদের জীবন বিনির্মাণের মহাসড়কে। তারা তাদের কাজেই মহা ব্যস্ত। ব্যস্ত তাদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিনির্মাণে।

আমাদের প্রত্যেকের একটি জীবন আছে। আর প্রত্যেক জীবনেরই আছে স্বতন্ত্র একটি স্বপ্ন। যা আমরা ফ্রীতে পেয়েছি বিধায় এর মূল্য দিতে জানিনা। অন্যের সফলতায় আমারা বিজয় উল্লাসের মত্ত হয়ে যাই। অন্যের ব্যর্থতার আগুনে পুড়িয়েই শেষ করে ফেলি নিজেকে। আসলে আমরা কি? কোন উৎস থেকে জন্ম হয় আমাদের এ আত্মঘাতী আবেগের?

আমরা কি জানি কিভাবে ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে থাকতে হয়? আর কিভাবে উপভোগ করতে হয় বিজয় উল্লাস? কিভাবে স্বপ্নকে সত্যে রূপান্তর করতে হয়? কিভাবে নিজের করে নিতে হয় জীবনের কাঙ্খিত চাওয়াকে? আসলে এসবের একটিও আমরা জানিনা। চিনতে পারিনা নিজের সত্বাকে।

লেখক: কবি ও উপ সম্পাদক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

তুর্কির কাসেম নানুতবি মাহমুদ আফেন্দির শিষ্য এরদোগান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ