সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

এরদোগান! ফাতিহের কনস্টান্টিনোপল ভালো থাকুক আপনার হাতে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রেজাউল কারীম আবরার
লেখক ও শিক্ষক

ইসলামের শুরু যুগে কনস্টান্টিনোপল ছিল অজেয় দুর্গ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু কনস্টান্টিনোপল অভিমুখে মুসলমানদের অভিযান এবং বিজয়লাভ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করে গেছেন।

বুশাইর আল খাছয়ামি রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَتُفْتَحَنَّ الْقُسْطَنْطِينِيَّةُ فَلَنِعْمَ الْأَمِيرُ أَمِيرُهَا وَلَنِعْمَ الْجَيْشُ ذَلِكَ الْجَيْشُ

অর্থাৎ মুসলমানরা অবশ্যই কনস্টান্টিনোপল বিজয় করবে। কতইনা উত্তম সে বাহিনীর আমির। কতইনা উত্তম সে বাহিনী। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৮৯৫৭, শায়খ শুয়াইব আরনাউত তাহকিককৃত)

হাকেম নিশাপুরি ‘আল মুসতাদরাক’ – এ হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন- هذا حديث صحيح الإسناد و لم يخرجاه

অর্থাৎ হাদিসের সনদ সহিহ। যদিও ইমাম বুখারি এবং মুসলিম রাহ. তাদের কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেননি। (আল মুসতাদরাক, হাদিস নং, ৮৩০০, শায়খ মুসতাফা আবদুল কাদির আতা তাহকিককৃত)

ইমাম যাহাবি রাহ. ও হাকেমের বক্তব্যকে সমর্থন করে হাদিসকে সহিহ বলেছেন।
ইমাম হাইছামি রাহ. বলেন- رواه أحمد والبزار والطبراني ورجاله ثقات

অর্থাৎ হাদিসটি ইমাম আহমদ, বাজজার এবং তাবারানি রহ. বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী সকলেই ছিকাহ তথা গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত। (মাযমাউয যাওয়ায়িদ, হাদিস নং ১০৩৮৪, দারুল ফিকর, বায়রুত)

কনস্টান্টিনোপল বিজয় সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো হাদিস রয়েছে। আমরা দেখি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী পরে অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হয়েছে।

শতাব্দির পর শতাব্দি কনস্টান্টিনোপলে হামলা হয়েছে। যুদ্ধ হয়েছে। তরবারির ঝনঝনানিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে। রক্তে বসফরাসের স্বচ্ছ জলরাশি লাল বর্ণ ধারণ করেছে।

গোল্ডেন হর্ণের শিকল দীর্ঘকাল বিভিন্ন বাহিনীকে থামিয়ে রেখেছিল। গোল্ডেন হর্ণ পার হয়ে কনস্টান্টিনোপল বিজয় করা কোনো বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয়নি।

কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কথা নিজের পক্ষ থেকে বলেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি নিজের পক্ষ থেকে কথা বলেন না। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহিপ্রাপ্ত হয়ে কথা বলেন।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জবানে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছে। সুতরাং কনস্টান্টিনোপল মুসলমানরা একদিন বিজয় করা ছিল নিশ্চিত।

আপনি ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলান! গোল্ডেন হর্ণের শিকল দীর্ঘদিন বিভিন্ন বাহিনীকে আটকে রাখলেও মুসলামনদের পারেনি। সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহকে আটকাতে পারেনি শিকল।

বায়েজান্টাইন বাহিনী শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করেছে। সর্বশেষ আয়া সুফিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। কারণ তাদের ধারণা ছিল আয়া সুফিয়ায় ইশ্বর বসবাস করেন। কেউ আয়া সুফিয়া দখল করতে আসলে স্বয়ং ইশ্বর তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করতে নেমে আসবেন।

কিন্তু সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ যুদ্ধের আগের দিন ফজরের নামাজ পড়ে সৈন্যদের সামনে একটি জ্বালাময়ি ভাষণ প্রদান করেন। সে ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমরা জোহরের নামাজ ইনশাআল্লাহ আয়া সুফিয়ায় আদায় করব। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দার কথা বাস্তবায়ন করেছেন। জোহরের আগেই কনস্টান্টিনোপল মুসলমানদের অধিকারে চলে আসে।

সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ আয়া সুফিয়ায় সৈন্যদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় করেন। ১৪৫৩ সালের ১৪ মে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী সত্য প্রমাণিত হয়।

গোল্ডেন হর্ণের শিকল পার হওয়ার জন্য পাহাড়ের উপর দিয়ে জাহাজ টেনে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ নতুন চমক সৃষ্টি করে কনস্টান্টিনোপল বিজয় করেন।

উসমানি খেলাফতের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুল হল পূর্বের কনস্টান্টিনোপল! কল্পনায় আমি কতবার দেখেছি সে ভূমিকে। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠে সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহের কামানের গোলা বর্ষণের দৃশ্য। বসফরাসের কোলেইতো শুয়ে আছেন আরেক বীর খাইরুদ্দিন বারবারুসা রহ.। ক্রুসেডাররা সমুদ্রের যুদ্ধে কখনো তাকে পরাজিত করতে পারেনি।

ইতিহাস অনেক হৃদয়বিদারক। কামাল আতাতুর্ক মুসলমানদের হৃদয়ের ইস্তাম্বুল থেকে ইসলামের নাম নিশানা মিটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আজ আতাতুর্ক নেই। তুরস্কবাসীও ধীরে ধীরে শিকড়ে ফেরার প্রাণপন চেষ্টা করছে।

এর মূলে রয়েছেন একজন বিচক্ষণ লোক। তিনি আমাদের ভালবাসার এরদোগান। বিশ্ব ক্রুসেডারদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ধীরে ধীরে তিনি আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আমরা তার জন্য দোয়া করি। প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তাকে ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ সৈনিক হিসাবে কবুল করুন।

তুরস্কের নির্বাচনে গতকাল প্রিয় এরদোগান বিজয় লাভ করেছেন। আমি তাকে খলিফাতুল মুসলিমিন মনে করি না, তবে তাকে ভালবাসি হৃদয় থেকে। তার বিজয়ের কথা শুনে নিজের অজান্তে আনন্দাশ্রু ঝরেছে চোখ থেকে।

বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের দোয়া রয়েছে এরদোগানের সাথে! আমরাও দোয়া করি আমাদের নাড়িছেড়া ধন কনস্টান্টিনোপল তার হাতে নিরাপদ থাকুক। আবারো সেখানে হেলালি নিশান পতপত করে উড়ুক।

তুরস্কে আবার নির্বাচিত এরদোগান

-আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ