আতাউর রহমান খসরু : ইউরোপের সবুজ ভূমি পর্তুগালে ইসলামের আগমন ঘটেছিলো খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পর্তুগাল মুসলিম শাসনাধীন হয়।
মুসলিম সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর পর্তুগালের মাটিতে প্রথম বিজয়ের পতাকা উত্তোলন করেন এবং তার ছেলে আবদুল আজিজ বিজয়কে পূর্ণতা প্রদান করেন।
হিজরি প্রথম শতকের মধ্যেই বর্তমান পর্তুগালের প্রায় পুরোটা মুসলিম শাসনাধীন হয়। দীর্ঘ ৫শ’ বছর মুসলিম শাসনের পর পর্তুগাল ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগাল মুসলিম শাসনমুক্ত হয়।
স্পেনের মুসলিম শাসকদের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাত ও ইউরোপজুড়ে মুসলিম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কারণে মুসলিম শাসনের অবসান হলে পর্তুগালের মুসলমানরাও দেশত্যাগে বাধ্য হন। তারা আশ্রয় নেন আফ্রিকা ও বলকান অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোতে।
তবে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের পর থেকে পর্তুগালের মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পর্তুগালে মাত্র ৫ হাজার মুসলিম বসবাস করতো। বর্তমানে ওই সংখ্যা ৪০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অবস্থিত কেন্দ্রীয়সহ দেশের মোট মসজিদের সংখ্যা ২১টি।
শিশুদের ইসলামি শিক্ষা প্রদানের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ২টি মাদরাসা। দারুল উলুম ইসলামিয়া পর্তুগালের বৃহৎ ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে মুসলিম শিশুদের ইসলামি বিধি-বিধান, ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আরবি ভাষা শেখানো হয়।
এছাড়াও আল-কলম, আন নুর ও আল ইসলাম নামে ৩টি মাসিক ও দ্বিমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করে পর্তুগালের মুসলিমরা।
মুসলিমমুক্ত পর্তুগালে মুসলিমরা সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে শতকের মধ্যভাগ থেকে। তারা ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নিজ দেশে ফিরে আসতে শুরু করে এবং ১৯৬৮ সালে এবং স্থানীয় মুসলিম ও আরব শায়খদের অর্থায়নে ১৯৭৭ সালে লিসবনে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
১৯৮৫ সালে তার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। মুসলিম শাসন অবসানের ৫৫৬ বছর পর নির্মিত হয় প্রথম মসজিদ। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম মাদরাসা দারুল উলুম ইসলামিয়া। বর্তমানে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
পর্তুগালের বর্তমান জনসংখ্যার অধিকাংশ অভিবাসী। তারা আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই পর্তুগালের মুসলিম সংস্কৃতিতেও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। তাদের রমজান সংস্কৃতিতেও এ বৈচিত্র চোখে পরে খুব সহজে।
সাধারণভাবে পর্তুগালের সব মুসলিম পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানায় এবং তাকে নৈতিক ও ইসলামি শিক্ষাকে উন্নীতকরণ, খোদাভীতি অর্জন ও পারস্পারিক সম্পর্ককে দৃঢ়করণের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।
পর্তুগালের মুসলিমরা তাদের আদর্শিক ও জাতিগত ঐতিহ্য ভুলে এক দস্তরখানে ইফতার করে। এক সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করে। তারাবির পর আত্মীয়-স্বজন ও আপনজনদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়। দেখে মনে হবে, তারা যেন এমন পারস্পারিক সাক্ষাতের জন্য এই রমজানের অপেক্ষা করে।
পর্তুগালের মুসলিমদের উজ্জীবিত করতে আরবের কিছু দীনদার শায়খ রমজানে অর্থ সাহায্য করেন। তাদের অর্থায়নে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
যেমন পর্তুগালের দু’টি জামে মসজিদে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, কোরআন শিক্ষার আসর, কর্মশালা ও অন্যান্য মসজিদে মাহফিল বা আলোচনা সভা। পর্তুগালের মুসলিমরা স্বতস্ফূর্তভাবে এসব আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
তবে পর্তুগালের ইফতার মাহফিলের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য্য সেখানে অন্যান্য ধর্মালবম্বী ও সংস্কৃতির মানুষদের দাওয়াত দেওয়া হয়। যেনো তারা ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে জানতে পারে।
লিসবনে অবস্থিত ইসলামিক সেন্টারে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রায় ৫ হাজার মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। এ সময় সেখানে দিনব্যাপী ধর্মীয় আলোচনাও হয়।
পর্তুগালে বসবাসরত অধিকাংশ মুসলিম মরক্কোর বংশোদ্ভূত। তাই পর্তুগালের মুসলিম সাংস্কৃতি ও ধর্মীয় নেতৃত্বে তাদের প্রাধান্য দেখা যায়। সূত্র : বার্তা২৪।
আরও পড়ুন : রমজানের ইতিকাফ : শেষ ৩ দিনে আদায় হবে কি?