সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জামদানি পল্লীর তাঁতীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম: রমজান মাসের প্রায় অর্ধেক শেষ। পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের অপেক্ষার শুরু।

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ও করিমপুর ইউনিয়নের শ্রীনগরের জামদানি পল্লীর তাঁতীরা।

রমজানের ঈদকে সামনে রেখে জেলার তাঁত প্রধান এলাকাগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। মালিক ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের উন্নত কাপড়। জামদানি, সুতি জামদানি শাড়ির ওপরে বর্ণিল সুতার কাজ করা হচ্ছে।

এছাড়া কাপড়ের ওপর প্রিন্ট এবং রঙ তুলির আঁচড়ে হাতে করা হচ্ছে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর নানা নকশা।

আর বিভিন্ন নকশার তৈরি কাপড়ের চাহিদা ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। নরসিংদীর তৈরি জামদানি সরবরাহ করা হচ্ছে রাজধানী ঢাকার অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতেও। অধিক মজুরির আশায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন জামদানি শাড়ি তৈরির তাঁতীরা।

জানা যায়, দৌলতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এর তারাব জামদানি পল্লী থেকে জামদানি শাড়ি তৈরির কাজ শিখে ১৯৮৮ সালে নিজ উদ্যোগে দৌলতপুরে একটি জামদানি তাঁত স্থাপন করে শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন।

চাহিদা থাকা ও লাভজনক হওয়ায় কাজে পরিবারের অন্যদেরও যুক্ত করেন তিনি। তাকে অনুসরণ করে অনেকে নিজ নিজ বাড়িতে তাঁত স্থাপন করেন। এভাবে দৌলতপুর ইউনিয়নে প্রসার হতে থাকে জামদানি শাড়ি তৈরির বিস্তার।

দৌলতপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় অর্ধশতাধিক তাঁতে জামদানি তৈরি করছেন প্রায় দুই শতাধিক পরিবার।

এখানকার জামদানি কারিগরদের বেশিরভাগই কমবয়সী হলেও শাড়ি তৈরিতে বেশ দক্ষ তারা। সুতার গুণগত মান ও ডিজাইন ভেদে বিভিন্ন দামের শাড়ি তৈরি করে থাকেন এখানকার কারিগররা।

প্রতিটি জামদানি শাড়ি ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা দরে তৈরি করা হয়। একসঙ্গে দুজন তাঁতী কাজ করলে প্রতিটি শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ১৫ দিন থেকে এক মাস সময় লাগে। এতে তাদের মজুরি খরচ পরে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে ব্যস্ততা বাড়ে এখানকার জামদানি কারিগরদের। চলতি বছর ঈদকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনরাত জামদানি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখানকার জামদানি তাঁতীরা। পাশাপাশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জামদানি পল্লীর নারীরাও।

জামদানি শাড়ির কারিগর ফারুক মিয়া বলেন, নিজ বাড়িতে বসে স্বাধীনভাবে শাড়ি তৈরির কাজ করা যায় বলে জামদানি শাড়ি তৈরিতে অনেকে আগ্রহী। জামদানি পল্লীতে কাজ শেখারও সুযোগ রয়েছে।

তাই অনেক বেকার যুবকরা কাজ শিখে এখানেই শাড়ি তৈরির কাজে যোগ দিচ্ছে। এতে করে এলাকার বেকার সমস্যা কমেছে।

কারিগর লিটন মিয়া বলেন, বর্তমান বাজারে এই কাজ করে যে মজুরি পাওয়া যায়, তা খুব একটা বেশি নয়। তাঁত মালিকদের তেমন পুঁজি না থাকায় এবং সূতা ও রঙের দাম বেশি হওয়ার কারণে আমাদের মজুরি কম।

কিন্তু আমাদের লাভ একটাই ছায়াতে বসে বসে কাজ করা যায়। যে কোন সময় নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করা যায়।

তাঁত মালিক দুলাল মিয়া বলেন, আমরা পুঁজির অভাবে চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করতে পারি না। এরপরও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ও ব্যক্তিগতভাবে সৌখিন ক্রেতাদের অর্ডার পাওয়ায় ব্যবসা টিকে আছে।

স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পাওয়া গেলে স্থানীয়ভাবে বেকার সমস্যা সমাধানসহ এ শিল্পের প্রসার ঘটানো যাবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের ঋণ দিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।

দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম বলেন, এই জামদানি পল্লী নিয়ে আমরা গর্ব করি।

আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ জামদানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ঋণ সহযোগিতার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজর প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ জামদানী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রদান করা হবে।

মনোহরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই শিল্পটি এখন হুমকির মুখে রয়েছে।

জামদানি শিল্পের কল্যাণে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করা যায়নি। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ব তফসিলী ব্যাংকের মাধ্যমে সহজশর্তে ঋণ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয় একটি বাড়ী একটি খামার, বিআরটিসহ সরকারী বিভিন্ন খাত তাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

আরো পড়ুন- রমজানে রোগীদের রোজা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ