হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: পবিত্র মাহে রমজানে খেজুর বা খোরমা ইফতারে এক পবিত্র নিয়ামত। খেজুরের পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ এতটাই বেশি যে শুধু একটা খেজুর খেয়ে সাহাবীগণ রোজা পালন করতেন এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে।
আমাদের প্রিয় মহানবি হযরত মুহাম্মদ স. এর কাছে খেজুর ছিলো অত্যন্ত প্রিয়। এই খেজুরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ লবণ ও প্রচুর আঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা শরীরের পুষ্টি যোগায়। থাকা যায় দীর্ঘক্ষণ সজীব ও সতেজ।
আর প্রাচীনকাল থেকে এই খেজুর ইফতারে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেজুরের ফাইবার কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএল হ্রাসে সহায়ক। খেজুরে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানেজ, কপার ও ভিটামিন বি ও পাইরিডক্সিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথিক এসিড ও রাইবোপ্লাবিন।
তাই খেজুরের পুষ্টি শুধু শরীরের শক্তি রক্ষায় সহায়ক তাই নয়, এর খনিজ লবণ পানিশূন্যতা রোধেও সহায়ক। তাই প্রতিদিনের ইফতারে অবশ্যই অন্তত দু’টি খেজুর রাখুন। খেজুরের পুষ্টি ও ভেষজগুণের কারণে রোজাদারগণ সুস্থভাবে রোজা পালন করতে পারবেন।
খেজুর আপনাকে অনেক উপকার দিয়ে থাকে। যার কয়েকটি হলো,
একাধিক পেটের রোগের প্রকোপ কমায়
প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে নিয়মিত এই ফলটি খেলে বাওয়েল মুভমেন্টে মারাত্মক উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোনো ধরনের পেটের রোগই আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ৩টি করে খেজুর খেলে শরীরে অন্দরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বদহজম, কোলাইটিস ও হেমোরয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
খেজুরে উপস্থিত খনিজ এবং ভিটামিন হাড়কে এতটাই শক্তপোক্ত করে দেয় যে বয়স্কালে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়।
অ্যানিমিয়া রোগকে দূরে রাখে
শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিলেই মূলত এই ধরনের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই তো শরীরে যাতে এই খনিজটির ঘাটতি কোনও সময় দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে খেজুর দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? এই ছোট্ট ফলটি আয়রণ সমৃদ্ধি। তাই তো অ্যানিমিয়ার মতো রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভুমিকা নেয়।
অ্যালার্জির প্রকোপ কমায়
২০০২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে দাবি করা হয়েছিল খেজুরে উপস্থিত সালফার কম্পাউন্ড অ্যালার্জির মতো রোগ থেকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
ডায়াটারি ফাইবারে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিয়মিত খেজুর খেলে শরীরে ‘এল ডি এল’ বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে এতে উপস্থিত পটাশিয়াম আরও সব হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমায়।
ওজন বাড়ায়
নানা কারণে যাদের ওজন মাত্রাতিরিক্ত হারে কমে যেতে শুরু করেছে, তারা আজ থেকেই খেজুর খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। কারণ এই ফলটিতে উপস্থিত ক্যালরি শরীরে ভাঙন রোধ করে ওজন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সংক্রমণের আশঙ্কা হ্রাস
খেজুরে প্রচুর মাত্রায় প্রাকৃতির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা একাধিক রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, এই ফলটিতে বেশ কিছু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজও রযেছে, ফলে নিয়মিত খেজুর খেলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে হ্রাস পায়।
আরো পড়ুন ইফতারে উপকারী ফল পেয়ারা