আওয়ার ইসলাম: জামিয়া রাহমানিয়া ঢাকার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মানুমুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছেন সে ধারাবাহিকতায় কওমি ছাত্র শিক্ষকদের প্রাণের দাবিকে মেনে নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার সুযোগ তৈরির করে দেবেন বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি।
ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বৈধভাবে পড়ার দাবিতে সোমবার (২১ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কওমি ছাত্র শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে দুপুর ১১ টায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মামুনুল হক আরও বলেন, শিক্ষা হলো সারা পৃথিবীর একমাত্র পাওয়ার। শিক্ষা ছাড়া মানুষ নিজেকে বিকশিত করতে পারে না। কিন্তু কওমি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা রাষ্ট্রীয় সীমানা প্রাচীরে আটকে আছে। সীমান্তের এ বাধা উঠিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো রাষ্ট্রে পড়ার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ২৫ লক্ষ কওমি ছাত্র জনতার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর দাবি পেশ করছি।
তিনি বাংলাদেশ অবস্থিত ভারতীয় হাই কমিশনের উদ্দেশে বলেন, পৃথিবীর সব বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দেশগুলো অহঙ্কার করে থাকে। আল আযহার যেমন মিশরের গৌরব, অক্সফোর্ড যুক্তরাজ্যের গৌরব, তেমনি দারুল উলুম দেওবন্দ ভারতের গৌরব। ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ দেশের নানা বিপদে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে এই দেওবন্দ মাদরাসা। কিন্তু ভারত দারুল উলুমের মতো গৌরবের বিষয়কে মূল্যায়ন করতে পারছে না।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমাদের প্রাণের দাবি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যেন সহযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সঙ্গে যারা ভারতে পড়তে যাচ্ছেন তারা যেন কোনো ধরনের হেনস্থার শিকার না হয় সে বিষয়ে দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধন থেকে আগামী ২৭ মে রোববার প্রেসক্লাব থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার কর্মসূচি দেয়া হয়। একই সঙ্গে সংগঠনটি ভারতীয় হাইকমিশনকেউ স্মারকলিপি প্রদান করবে।
মাববন্ধনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, মুফতি হাসান মুহাম্মদ জামিল, মাওলানা শেখ লুকমান হোসাইন, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মাওলানা গাজী ইয়াকুব, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আরমান, মুফতি ইমরানুল বারি সিরাজী, মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা তোফায়েল গাজালী প্রমুখ।
মানববন্ধনে কওমি ছাত্র শিক্ষক পরিষদের মুখপাত্র মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, পৃথিবীর সবরাষ্ট্রে সব জায়গায় উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত থাকে এমনকি শিক্ষার জন্য সরকার ভর্তুকিও দিয়ে থাকে, নানাভাবে উৎসাহ প্রদান করা হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার খুব একটা সুযোগ সুবিধা পায় না।
তিনি বলেন, কওমি শিক্ষার্থীরা নানা দেশে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে, দেশের পতাকাকে উঁচু করেছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কুরআন প্রতিযোগিতা কওমি শিক্ষার্থীরা অনেক সম্মান বয়ে এনেছে।
তিনি আরও বলেন, কওমি মাদরাসায় যারা পড়ে তারা অনৈতিকতায় জড়ান না, তারা মাদক, দুর্নীতি অশ্লীলতাসহ কোনো অন্যায় কাজে জরিত নেই। এই জনগোষ্ঠীকে সরকার ইচ্ছে করলে নানা জায়গা কাজে লাগাতে পারে। তাই আমি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বললো, কওমি পড়ুয়া বিশাল এ মেধাবী ও সৎ শ্রেণিকে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিন।
অনুষ্ঠানে কওমি ছাত্র শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সমন্বয়ক গাজী আতাউর রহমান বলেন, পৃথিবীর সবদেশের সব শিক্ষার্থী যেকোনো দেশে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলো বাংলাদেশের কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষার দরজার বন্ধ। এ বৈষম্য মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে কওমি শিক্ষার্থীরা ভারতে পড়তে পারতো, পাকিস্তান আমলেও নিষেধ ছিল না, বাংলাদেশ সৃষ্টির পরও কিছুদিন সমস্যা হয়নি, কিন্তু বর্তমানে কওমি শিক্ষার্থীদের ভারতে স্টুডেন্ট ভিসা দেয়া হচ্ছে না। তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
সরকাকে শিগগির উদ্যোগ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা বিনিময়ে চুক্তির মাধ্যমে কওমি শিক্ষার্থীদের দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে দিতে হবে।
কওমি ছাত্র শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা হাসান মুহাম্মদ জামিল বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক দাবি। এ দাবি কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়। সুতরাং সরকাকে এ দাবি অবশ্যই মানতে হবে।
কওমি ছাত্র শিক্ষক পরিষদের সদস্য মাওলানা রুহুল আমিন সাদী বলেন, যারা মাববন্ধনে উপস্থিত হয়েছেন কেবল তারা নয় এদেশের লক্ষ লক্ষ কওমি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি দারুল উলুম দেওবন্দে উচ্চশিক্ষার। আমরা আশা করবো আামাদের এ দাবির প্রতি লক্ষ রেখে প্রধানমন্ত্রী কওমি শিক্ষার্থীদের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার জন্য স্টুডেস্ট ভিসার ব্যবস্থা করবেন।