আবদুল্লাহ তামিম: গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তাবলিগ মারকাযে হট্টগোল হাতাহাতিসহ ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়, রাতে প্রশাসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, এবং সাময়িকভাবে একজনকে বহিস্কার করা হয় বলে একাধিক সূত্র আওয়ার ইসলামকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দিল্লির নিজামুদ্দীনপন্থী মাওলানা আনিসুর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারকাযে উত্তেজনা: প্রশাসনের বৈঠক বহিস্কার ১ জেলার আলেম সমাজ ও আলমি শুরাপন্থীদের মাঝে এ হট্টগোল হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারকাযসূত্র জানিয়েছে, দিনভর ব্যাপক হইচই উত্তেজনা শেষে, আইন সৃঙ্খলাবাহিনী জননিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাত ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে আওয়ার ইসলাম কে জানিয়েছেন সদর থানার পুলিশ ইনচার্জ নবীর হোসেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তাবিলিগ মারকাযের মোট চারজন শুরা বা দায়িত্বশীল আছেন। তিনজন শুরার মতামত ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১জন মাওলানা আনিসুর রহমানকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কার বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছিলো না ।
কোন অভিযোগের ভিত্তিতে বহিস্কার হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ ইনচার্জ নবীর হোসেন বলেন, মাওলানা আনিসুর রহমানের নিজামুদ্দীন মারকাযের জোড়ে অংশগ্রহণ এবং তার তিনজন শুরাকে এ বিষয়ে কিছু না জানানোর কারণে এ সমস্যার তৈরি হয়।
রাতের এ জরুরি বৈঠকে জেলা প্রশাসক রেজাওয়ানুল রহমান, এসপি আনোয়ার হোসেন, সদর থানার পুলিশ ইনচার্জ নবীর হোসেনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মারকাযের ৩জন শুরা হাজী কুদরত আলী, মাস্টার রিফকুল ইসলাম, হাজী সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় অর্ধশত আলেম এ বৈঠকে অংশ নেন। বিশেষভাবে দারুল আরকাম মাদরাসার মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাক এর সহসভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান, জামিয়া ইউনুছিয়ার মুহতামিম মুফতি মোবারকুল্লাহ, মাওলানা আবদুর রহিম, মুফতি শামসুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মারকাযের শুরা সদস্য মাওলানা আনিসুর রহমান গত ১৮ এপ্রিল ৩৯ জন তাবলিগের সাথী নিয়ে ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাযের জোড়ে অংশগ্রহণ করে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর আহবানে।
নিজামুদ্দীন জোড়ের প্রতি আলেমদের নিষেধাজ্ঞা ছিলো পূর্ব থেকেই। বিশেষ করে হাটহাজারী মাদরাসার মহা পরিচালক, বেফাকের সভাপতি , হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নিষেধাজ্ঞা ছিলো এ বিষয়ে।
বাংলাদেশের তাবলিগের কেন্দ্রীয় মারকায কাকরাইলের আলমি শুরাপন্থীদের নিষেধাজ্ঞা ও ঢাকা ভিক্টোরিয়া পার্কের রাজধানীর শীর্ষ আলেমদের নিষেধাজ্ঞা এবং ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার উলামা মাশায়েখের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজামুদ্দীন যাওয়া ও জেলা মারকাযের মুরব্বিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রক্ষা না করা এবং মারাকাযে বিসৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে সাময়িক বহিস্কাারের আদেশ জারি করা হয়।
সাময়িক বহিস্কার ও নিজামুদ্দীর গমণ ও ইত্যাদি বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মারকাযের মাওলানা আনিসুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কোনোভাবেই যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তিনি জেলা প্রশাসকের রাতের বৈঠকেও অংশ নেননি বলে জানা গেছে।
গত ১৮ এপ্রিল থেকে চার দিনের জোড় অনুষ্ঠিত হয় ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দীর মারকাযে। জোড়ে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার তাবলিগের সাথীরা অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, গত বিশ্ব ইজতেমায় বাধার মুখে টঙ্গির মাঠে অংশ নিতে পারেননি নিজামুদ্দীন মারকাজের মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভী। আলেম উলামা মাদরাসার ছাত্র ও তাবলিগের সাধারণ সাথীদের বাধার মুখে কাকরাইল মারকাযে অবস্থান করেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী। সেখানে বসেই মাওলানা সাদ কান্ধলভী আগামী বিশ্ব ইজতেমা ও নিজামুদ্দীনের তারিখ ঘোষণা করেন।
গত ২৬এপ্র্রিল বাংলাদেশ তাবলিগের কেন্দ্রীয় মারকায কাকরাইলে উভয় পক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে প্রশাসনের মধ্যস্থতায় কাকরাইল মারকাজের মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিষয়ে সা্ময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
আরো পড়ুন- ইরানে পুরুষ সেজে ফুটবলের মাঠে মেয়েরা
তাবলিগের সংকট সমাধানে যা বললেন আল্লামা খায়রাবাদি
‘আলেমদের পরামর্শেই তাবলিগের মেহনত চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার’
‘তাবলিগের সমস্যার না মিটলে উম্মতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে’