আলী আবদুল মুনতাকিম
শহর ঢাকা। রাজধানী ঢাকা। আমাদের প্রিয় শহর, প্রাণের শহর। বলা হয় মসজিদের শহর। বাংলাদেশ, আমার প্রিয় মাতৃভূমি। পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এটিও মসজিদ প্রধান দেশ। কিন্তু ঢাকা তথা বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যা কত হতে পারে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না।
আবার এত মসজিদ সত্তেও প্রতিদিন হাজার ও মুসুল্লি মসজিদের খোঁজ না পেয়ে বা স্থান সল্পতায় নামাজের জামাত মিস করেন বা নামাজ পরতে পারেন না। এটি অনেক কষ্টের যে, মসজিদের দেশে, মসজিদের অভাবে মসজিদের খোঁজ না পাওয়া মুসুল্লি নামাজ পড়তে পারেন না।
মাগরিবের নামাজ কেন্দ্রিক কিছু উদাহরণ দেয়া হল, পাঠক সহজেই বিষয়টি অনুধাবন করবেন।
কুমিল্লা থেকে বাবা বেড়াতে এসে মতিঝিল নামলেন। এজিবি কলোনীতে ছেলে থাকেন। বাস থেকে নেমে দেখেন মাগরিবের আজান হয়ে গেছে। আশেপাশে কোন মসজিদ দেখছেন না, পথিকরা মসজিদের যে সন্ধান দিল তাতে এতদূরে যেতে সাহস হল না।
শাপলাচত্তর থেকে পশ্চিমের মসজিদ আরামবাগ বালুরমাঠের পরে। দক্ষিণ দিকে পিডিবি ভবনের পেছনে, পূর্ব দিকে কমলাপুরে, উত্তরে অনেকদূরে ইডেন মসজিদ।
একই অবস্থা ফার্মগেটের। ফার্মগেটে মাগরিবের সময় হলে দৃশ্যমান কোনো মসজিদ পাওয়া কষ্টসাধ্য। উত্তরে যেতে হবে বায়তুশ্শরফ মসজিদে, দক্ষিণে কারওয়ান বাজার, পশ্চিমে তেজগাঁও কলেজের পরে আর পূর্বে বিঞ্জান কলেজের সামনের মসজিদে যেতে হবে।
বাধ্য হয়ে ফার্মগেটের পার্কে অনেক পথচারী নামাজ আদায় করেন, তাও অজু করতে কোনো পানি পান না।
ফার্মগেট পার্কের কিছু জায়গা নিয়ে সরকার একটি চমৎকার মসজিদ করে দিতে পারে নামাজিদের জন্য।
আপনি সদরঘাট মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে নেমে মাগরিবের আজানের সময় শেষ হতে দেখবেন, মসজিদ খোঁজে পাবেন না। মিরপুর-২, গোলচত্তর, শ্যামলী মোড়, একই অবস্থা।
সারা বাংলার গ্রামের চিত্র ও একইরকম। মসজিদ ছাড়া বাংলাদেশে বহু গ্রাম আছে। এক গ্রামের মুসুল্লিদের আরেক গ্রামে গিয়ে নামাজ পড়তে হয়। ঝড় বাদলা দিনে কী যে কষ্ট ভূক্তভূগীরাই জানেন।
মসজিদ মন্দির মেরামতে বা নির্মাণে সরকার সহায়তা করেন। ৫৬০ টি মমসজিদের বিশাল প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে, যার কিছুটা বলার চেষ্টা করব। এই প্রকল্পের স্থান নির্ধারণে যেন উপরে বর্নিত অভাব পূরণ হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ঠদের অনুরোধ করছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ২০০৮ সালের এক জরিপ থেকে জুন-২০১৬ সালে সংসদে যে তথ্য তুলে ধরেন মাননীয় ধর্মমন্ত্রী তাতে ঢাকা শহরে ৫ হাজার ৭৭৬টি মসজিদ রয়েছে। সারাদেশের মসজিদের সংখ্যা দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার ৩৯৯ টি।
[আপনি বা আপনার নিকটাত্মীয় কারো ইন্টারনেট বা মাদকাসক্তি থেকে ফেরাতে যোগাযোগ করুন হলি কেয়ারে]
প্রসঙ্গক্রমে সেদিন কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে ধর্মমন্ত্রী জানিয়েছিলেন প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর একনেকে অনুমোদিত হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচছা, সংসদে জানানো, একনেক বৈঠকের সিদ্ধান্ত যেভাবে কাগজে এসেছে, তা নিম্নরূপ-
ইসলামি মূল্যবোধের উন্নয়ন ও সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশে সৌদি সরকারের সহযোগিতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
২০১৬ সালের ৩ থেকে ৭ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করেন। ওই সফরে প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহর সঙ্গে আলোচনায় দেশব্যাপী মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। সৌদি আরব তাতে সম্মতি দেয়।
দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী এ মডেল মসজিদের নকশা তৈরিসহ সামগ্রিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। এটি অনুমোদন ও দেয় একনেক। ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকার এ প্রকল্পে সৌদি সরকার দেবে ৮ হাজার ১৬৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বাকি ৮৯২ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেবে সরকার।
প্রকল্প সময়কাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ মসজিদগুলো ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে স্বস্ব এলাকায় কাজ করবে। মসজিদগুলোতে নারী-পুরুষের আলাদা অজু করা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে।
প্রতিটি মসজিদ হবে একই মডেলের। ৫ বা ৬তলা এ মডেল মসজিদের জন্য জায়গা লাগবে প্রায় ৪০ শতক। প্রতিটি মসজিদ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ১৪ কোটি টাকা।
চারটি সিটি কর্পোরেশন ও ৬৪টি জেলা শহরের ৬৮টি মডেল মসজিদে লিফট-এসি থাকলেও উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকাসহ বাকি ৪৯২টিতে তা থাকছে না। এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারীর নামাজের ব্যবস্থা থাকবে।
৪ মার্চ জুনে একটি অনলাইন পত্রিকায় এ নিয়ে দখা গেল আরেক খবর, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী,
‘একনেক অনুমোদন দেয়ার পর প্রকল্পে সৌদি অর্থ সহায়তা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে এ প্রকল্পে অর্থ সহায়তা না দেয়ার কথা জানানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র নাকি জানিয়েছে।
প্রকল্প কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার কাজ সম্পন্ন হলেও অর্থ না পাওয়ায় প্রকল্পের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে ৮ বিভাগে একটি করে মোট আটটি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করতে চায় সরকার। আরও বলা হয়-
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, সারা দেশের ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ডিপিপি সংশোধন হওয়ার কারণে তা আবারও একনেকে তুলতে হবে, এ কারণে দেরি হচ্ছে। আশা করি শিগগিরই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, সৌদি সরকারের অর্থ না পাওয়ায় আমরা নিজস্ব অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম দফায় আট বিভাগে একটি করে মসজিদ নির্মাণ করা হবে। পরে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় ও উপজেলায় এ মসজিদ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত করতে ইতিমধ্যে ১৫টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে।’
অত্যন্ত খুশির কথা, ২০১৮ সালে এসে আমরা তা বাস্তবায়ন হতে সরকারকে তৎপর দেখছি।মসজিদগুলো ধীরে নির্মিত হোক এবং শহর ও গ্রামের প্রয়োজনীয় জায়গায় যাতে নির্মিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আল্লাহপাক সকলকে এর বিনিময় দিবেন। সারাবিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মসজিদ নির্মাণকারীদের মর্যাদা ও পুরষ্কার কম নয়।
মসজিদ সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা, ১. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করে তার স্থান হবে জান্নাতে।
২. মসজিদ নির্মাণ সদকায়ে জারিয়ার অর্ন্তভূক্ত। ৩. মসজিদসমূহ জান্নাতের বাগান।
লেখক: প্রোকৌশলী ও কুরআন গবেষক