আম্মার সাদিক : হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতিত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।-সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস : ৫৬৬৫
হযরত আ’লা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সা. রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এতো দীর্ঘ সেজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল।
যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা! অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।
নবীজি সা. জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি তখন বললেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত বা শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।
-শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২,৩৮৩
উপরোক্ত হাদীস থেকে এ রাতের ফযীলত যেমন জানা যায় তদ্রূপ এ রাতের আমল কেমন হওয়া উচিত তাও বোঝা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘ নামায পড়া, সেজদা দীর্ঘ হওয়া, দুআ ও ইস্তেগফার করা ইত্যাদি। মোটকথা, সহীহ হাদীস থাকা সত্ত্বেও শবে বরাতের ফযীলত ও গুরুত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা এবং এ সংক্রান- সকল রেওয়ায়েতকে মওযূ বা যয়ীফ বলা উচিত হবে না।
তবুও শবে বরাতে কী করা যাবে কী করা যাবে না এ নিয়ে নানা বিতর্ক হামেশাই শুনতে হয় আমাদের। হালুয়া-রুটি করা, শিন্নি করা, আলোকসজ্জা করা, মিলাদ-কিয়াম করা। এসব কাজ করা না করা নিয়ে বিতর্ক থেকে মুক্তি পেতে শবে বরাতে এমন কিছু আমল করা চাই যেগুলো একান্তই ভালো কাজ এবং আল্লাহ তাআলার কাছে পছন্দনীয়।
এখানে ৫ টি আমল তুলে ধরা হলো :
১. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করুন। যাদের কাযা নামাজ আছে তারা পেছনের কাযা নামাজগুলো আদায় করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, সারারাত নফল নামাজ পড়তে পড়তে যেন তাহাজ্জুদ বা ফজরের নামাজ ছুটে না যায়।
২. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করুন। যারা তেলাওয়াত শুদ্ধভাবে করতে পারেন না তারা শেখার চেষ্টা করুন। আসন্ন রমজান উপলক্ষে এখন থেকে কুরআন তেলাওয়া করা ও শেখা শুরু করা যেতে পারে।
৩. পরদিন রোজা রাখা যেতে পারে। সরকারি ছুটি উপলক্ষে রোজা রাখা ছাড়াও রোজার প্রস্তুতিসূচক এমন কিছু কাজ করা যেতে পারে, যার দ্বারা রমজানের রোজা রাখা সহজ হয়ে যায়। যেমন, অবসরে রমজানের মাসআলা-মাসায়েল শিখে নেয়া।
৪. ওই রাতে ও পরদিন সারাবেলা ইসলামি বই পড়ার জন্য উৎসর্গ করতে পারেন নিজেকে। নবীজি সা. এর জীবন ও আদর্শ, সাহাবায়ে কেরামের ত্যাগ ও কুরবানি, আইম্মায়ে কেরাম ও আকাবিরদের বর্ণাঢ্য জীবন এদিন আপনার পাঠের বিষয় হতে পারে।
৫. কিছু সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করতে পারেন। গাছ লাগানো। বাড়িতে, বাড়ির বাইরে, রাস্তায় অথবা বাড়ির ছাদে একটা ফুল বা ফলের চারা লাগাতে পারেন।
৬. ১৪ শাবান সন্ধ্যার আগেই পবিত্র রাতকে স্বাগত জানাতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখুন আপনার ঘরদোর, আঙিনা, করিডোর, গলি, রাস্তা ও আশপাশ। নিজেরাও পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করুন।
এ আমলগুলো করতে পারলে আশা করা যায় আপনার অন্য কোনো বিতর্কিত আমল করার প্রয়োজনই পড়বে না। ইসলাম সব বিতর্কের উর্ধ্বে। মুসলিম হয়ে আল্লাহকে খুশি করার জন্য যে আমল তাতে বিতর্ক সৃষ্টি করা একদমই অনুচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহিহ আমলের মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি দিন অতিবাহিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আরো পড়ুন : শাবান মাসের ফযিলত ও আমল