রাহনুমা ইসলাম
আলেম লেখিকা
শৈশব থেকেই শিশুদের চারিত্রিক শিক্ষা অর্জন খুবই প্রয়োজনীয়। এ বয়সে কোমল মনে যা গেঁথে যায় পরবর্তীতে এরই প্রভাব বিস্তার লাভ করে। এ বয়সে সঠিক শিক্ষার অভাবে পরিণত বয়সে সন্তান যেন বিপথে না যায় সে দিকটির নিয়ন্ত্রণভার স্বয়ং মা'কেই নিতে হয়। পরিণত বয়সে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আপনার মেয়েকে শৈশব থেকেই শিক্ষা দিন উত্তম আদর্শের। এক্ষেত্রে অবশ্য লক্ষণীয় ১৩ টি দিক তুলে ধরা হলো।
১. সন্তানের সামনে নিজেরা কাপড় পরিধান বা বদলানো থেকে বিরত থাকুন। জাগ্রত শিশু সন্তানের সামনে স্বামী-স্ত্রী অন্তরঙ্গ হওয়া থেকেও বিরত থাকুন এবং শিশুদের যত্র-তত্র খালি গায় যেতে নিষেধ করুন। ইসলাম নির্দেশিত সতর ঢেকে রাখুন এবং শিশুদের সতর সম্পর্কে জ্ঞান দান করুন।
[ইসলামের দৃষ্টিতে শিশু পরিপালন-নীতিমালা]
২. আপনার মেয়ে শিশুকে অন্য অপরিচিত লোকের কোলে বসতে দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, এমনকি নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। ছোটবেলা থেকে পর্দার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করুন।
[আদাবুল মুআশারাত]
৩. বিশেষভাবে মেয়ে সন্তানকে খেলাধুলার সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। খেয়াল রাখুন আপনার সন্তান যখন বন্ধুদের সাথে খেলতে যায় তখন তারা কি ধরনের খেলা খেলছে? নিছক বিনোদন বা সময় কাটানো জাতীয় খেলাধুলা ছাড়া অন্য সব ধরনের খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন। লক্ষ্য রাখুন শিশুদের খেলাধুলার বিষয় যেন, বিয়ে-শাদি বা সংসার না হয়।
[আদাবুল মুআশারাত]
৪. খেয়াল রাখবেন, কেউ যেন দুষ্টামি করেও আপনার মেয়ে সন্তানকে কখনো আমার বউ বা আমার ছেলের বউ ইত্যাদি কথা না বলে। কারণ এতে করে সন্তানের মাঝে অপরিনত বয়সেই বিয়ের মানসিকতা সৃষ্টি হতে পারে। ইসলাম বৈধ উপায়ে যথার্থ সময়ে বিয়ের আদেশ দিয়েছে। আগেও নয় এবং খুব পরেও নয়।
[আদাবুল মুআশারাত]
৫. অন্য প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কিংবা মহিলার কাছে আপনার মেয়ে সন্তানকে পাঠানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন এবং জোর করে এমন কোথাও তাকে পাঠানো থেকে বিরত থাকুন- যেখানে সে যেতে চায় না।এমনকি আপনি যদি
কখনো খেয়াল করেন, কেউ আপনার মেয়ে সন্তানকে খুব বেশি আদর-সোহাগ করছে, তাতেও সতর্ক থাকুন। কারণ মানুষ মাত্রই ভুলকারী।
শয়তান যে কোনো সময় যে কোনো মানুষকে ধোঁকায় ফেলতে পারে, তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত।
[আদাবুল মুআশারাত]
৬. সাবধানতা এবং সতর্কতার সাথে আপনার মেয়েকে বয়ঃসন্ধীকালীন সংশ্লিষ্ট সঠিক শিক্ষা প্রদান করুন এবং
তাকে এই সময়কালীন বিভিন্ন অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করুন। আপনার মেয়ে সন্তানকে জানতে সাহায্য করুন, ইসলাম কেন এই সময় ইবাদত-বন্দেগি করতে নিষেধ করেছে।
[আদাবুল মুআশারাত]
৭. যদি কখনো দেখেন হঠাৎ করে আপনার মেয়েটি কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে, সতর্কতার সাথে কারণ আবিস্কার করার চেষ্টা করুন এবং কারণ দূর করুন। আপনার কাছে কারণ যদি বয়সসন্ধিকালীন সম্পর্কিত হয়রানি আবিস্কৃত হয় তাহলে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন কোনটা ভুল কোনটা সঠিক এবং এই ভুল থেকে দূরে থাকা উচিত, এ কথা শিক্ষা দিন। আর সাথে সাথে ইসলামি বিধি নিষেধগুলো তাকে জানান। ইসলাম নির্দেশিত অশ্লীলতার শাস্তি ও পরিণামের কথা তাকে জানান।
[আদাবুল মুআশারাত]
৮. অনেক মায়েদের দেখা যায় বাচ্চাদের ঠাণ্ডা রাখার জন্য বিভিন্ন কার্টুন ও মুভি দেখান- এটা কখনোই করবেন না। কারন ছোটবেলাতেই এসব জিনিস বাচ্চাদের মানসিকতায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। আর ইসলাম তো এসব কার্টুন ও মুভি দেখানোকে কখনোই সমর্থন করে না। বরং এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভালো গল্প শোনানো যেতে পারে।
[আদাবুল মুআশারাত]
৯. মেয়ে সন্তানের বয়স ৩ বছর হলে সন্তানকে টয়লেট শেষে নিজে নিজে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে হয় তা শিখান এবং তাকে ইসলামের পবিত্রতার গুরুত্বের কথা জানান। তাকে শিখতে সহযোগিতা করুন ইসলাম কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করার নিয়ম-পদ্ধতি বাতলিয়েছে।
[আদাবুল মুআশারাত]
১০. আরেকটা ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকুন- প্রয়োজন ছাড়া মেয়েকে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরা বিরত থাকুন। এতে করে লজ্জাহীনতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
[আদাবুল মুআশারাত]
১১. খারাপ কাজ, মন্দ ব্যক্তি, কুরুচিপূর্ন বিষয় এবং নিন্দনীয় আচরণের তালিকা তৈরি করুন এবং মেয়েকে সেগুলো শিক্ষা দিন। এই ক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে, তাকে যা কিছু জানাবেন বা বুঝাবেন সবগুলোর কারণ ব্যাখা করতে হবে।
[আদাবুল মুআশারাত]
১২. আপনার সন্তান কখনো কারো বিরুদ্ধে নালিশ করলে তা হেলায় উড়িয়ে দেবেন না- তাতে সেই ব্যক্তিটি যেই হোক না কেন? মনোযোগ দিয়ে তার নালিশ শুনুন এবং যৌক্তিকতা বিচার করুন এবং মেয়েকে জানান নালিশ ও বিচারের ক্ষেত্রে ইসলাম কী বলেছে।
[আদাবুল মুআশারাত]
১৩. শিশুবেলা থেকেই আপনার সন্তানকে প্রতিকুল পরিবেশে প্রতিবাদ করার জন্য অনুপ্রেরণা দিন। কীভাবে বাজে পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা করবে তার ধারনা ও শিক্ষা প্রদান করুন।
[আদাবুল মুআশারাত]
এসএস
আরো পড়ুন : ঘুরতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন শিখ নারী