সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য সাধারণত কমে যায়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসায়ীরা রমজান উপলক্ষে প্রতিটি জিনিসের দাম কমিয়ে দেন। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র যে পুরোপুরি উল্টো! কিন্তু কেন? প্রশ্নের জবাব থাকলেও বাংলাদেশে তা প্রকাশ্যে বলার সুযোগ নেই। তাতে হৈচৈ বাঁধবে নিশ্চিত। তবে এটুকু বলা যেতেই পারে-চোরে না মানে ধর্মের শিক্ষা!
এবার প্রশ্ন জাগতে পারে, চোর আসলে কে বা কারা? আসলে নিজ নিজ অবস্থানে সুযোগ বুঝে অনেকেই চোর! যাই হোক, বড় কথা মনে রেখে ছোট কথা প্রকাশ করি।
প্রতি বছরই এই নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্টরা আমাদেরকে শোনান, অধিক মুনাফার আশায় প্রতি বছরই রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলতে পাঁয়তারা চালান একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা এ অপতৎপরতা চালান। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় নানা আশ্বাস দিলেও পরবর্তী সময়ে তা রক্ষা করেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ী। রমজান, ঈদ বা পূজা এলেই খুচরা, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার উৎসবে মেতে ওঠেন।
তাহলে কি ধরে নেওয়া যায়- কথিত ‘তাদের’কে ঠেকানোর কোনো উপায় নেই? ‘তারা’ কি তবে কোনো ‘মহাশক্তি’? ঐদি তেমন কিছুই হয়ে থাকে তবে তো এবারও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না! আর হবে না ধরে নিয়েই যে রমজান নাজাতের মাস হলেও সাধারণের কাছে এটি আতঙ্কের মাসে পরিণত হয়েছে। কারণ তাদের জীবন-জীবিকা এ মাসে কঠিন হয়ে পড়ে।
এই তো সেদিনের কথা, ১৫ এপ্রিল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রমজানের রাজনৈতিক অর্থনীতি: বাজার ব্যবস্থা, ভোক্তা অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য করেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা পরিশুদ্ধ হলে পুলিশ চাঁদাবাজির সুযোগ পাবে না’। মন্তব্যটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর গুরুত্বসহ প্রচারিত হয়েছে।
ওই মতবিনিময়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারাও সেখানে মূল্যবান বক্তব্য রেখেছেন, সন্দেহ নেই। তবে সঙ্গত কারণেই বেশি সামনে এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য।
চাঞ্চল্য সৃষ্টির জন্য তিনি কথাটি বলেছেন বলে মনে করি না। বরং ধরে নেওয়া যায়, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ইস্যু টেনে রমজান সামনে রেখেই তিনি উপস্থাপন করেছেন ওই বক্তব্য। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ খুব বেশি নেই। তবে কিছু বলার থাকতেই পারে। যেমন, সমাজের কেউ পরিশুদ্ধ না হলে কি আমি ভালো কাজ করব না বা ভালো মানুষ হতে চাইব না?
কথা সত্য যে, রমজানে বেশকিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেহেতু রাস্তাঘাটে যান চলাচলও বাড়ে। আবার রমজানের শুরু ও শেষের দিকে যানজট বাড়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই কারণে। প্রথমার্ধ্বে এর তীব্রতা বৃদ্ধির কারণ মূলত নিত্যপণ্য পরিবহন আর শেষার্ধ্বে যানজট বাড়ে প্রধানত ঈদ আয়োজন ঘিরে। প্রতি বছরই এ সময় বিশেষ প্রস্তুতি থাকে সরকার তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।
তবে অভিযোগ রয়েছে যানজট নিয়ন্ত্রণের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির সদস্য কর্তৃক চাঁদাবাজি সংঘটনের। যদিও পুরো বাহিনী বা দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্যেক সদস্যই এ অপকর্মে জড়িত, তেমনটি বলা যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, যারা জড়িত থাকেন তারা কি নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন না?
আমি কখনো মনে করি না, প্রত্যেক ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকই রমজানের বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী। পণ্যে ভেজাল দিয়ে থাকেন, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম বলে আমরা মনে করি। অন্যদিকে আইনের হাত থেকে রেহাই পেতে নিয়মিতভাবে ক্ষমতাবানদের চাঁদা জুগিয়ে থাকেন, এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বেশি নয়।
এমন বাস্তবতায় গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে নসিহত করা অসমীচীন মনে হতেই পারে অনেকের কাছে। তবে মন্তব্যটি যদি সাধারণ উপদেশ হয়, তাতে আপত্তির কিছু নেই। সে ক্ষেত্রেও প্রত্যাশা থাকবে, ব্যবসায়ীরা তো শুদ্ধাচারী হবেনই এর পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যারা নজরদারি করবেন, তারাও যেন অনুশীলন করেন নিজেকে পরিশুদ্ধ করার!
[email protected]
১৯ এপ্রিল ২০১৮