আলী আবদুল মুনতাকিম
আনিসুল হকের লেখা আমি পড়ি। গল্পের ছলে তিনি নানা বিষয়ের ভুল ত্রুটি অত্যন্ত চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেন। বাসায় প্রথম আলো রাখার সুবাদে আনিসুল হকের প্রতিটি লেখাই সহজে পড়া হয়।
তার লেখার একটা স্টাইল বা ধরণ আছে। তিনি প্রকৌশলী, প্রথম আলোতে আছেন। তার নামে পোস্ট করা যে লেখাটি নিয়ে কথা বলব- সেটি ইদানিং ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষের ওয়ালে ঘুরছে। মানুষ পড়ে কষ্ট পাচ্ছেন। তার ধৃষ্টতা দেখে ক্ষোভে ফুসছেন।
প্রতিটি লেখকেরই লেখারই আলাদা আলাদা ধরন আছে। রবীন্দ্রনাথের স্টাইলে নজরুল লেখেন নি, নজরুলের ধরনে সামসুর রাহমান লেখেন নি। জসিমউদ্দিন এর লেখা গোলাম মোস্তফার লেখা একরকম নয়। একইভাবে জগৎ বিখ্যাত কবি ফেরদৌসকে কূলদীপ নায়ার অনুস্বরণ করছেন না।
দুই হুমায়ুনের লেখার ধরণ দুই রকম ছিল। এটা সহজ কথা যে আমি যদি সৈয়দ হক-এর উপন্যাস বা লেখা নকল বা তার স্টাইল অনুস্বরণ করি, কেউ ভালোভাবে নিবে না, এমনকি মামলাও খাব।
স্রষ্ঠার প্রেরিত ধর্মগ্রন্থগুলোর শব্দ, বাক্য, ভাষা প্রয়োগের ধরণ সম্পূর্ণভাবে আলাদা।
দুনিয়ার কোনো লেখক আল কুরান, বাইবেল, যবুর, তৌরাত, ত্রিপিটক কিংবা গিতার
অনুস্বরণ বা ব্যাঙ্গ করে লেখে না। এরকম স্পর্ধা, ধৃষ্ঠতা, ক্ষমাহীন বেয়াদবি কেউ করেছে বলে আমার জানা নেই।
একমাত্র রাসুল সা. এর সময় আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের শ্রেষ্ঠ কবি ইমরূল কায়েস কুরানের সুরা কাউসারের শেষ লাইনটি মিলাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে লিখেছিলেন, ‘লাইসা হাযা বিল কালামিল বাশার’। অর্থাৎ এটি প্রভুর বাণী ছাড়া আর কিছু নয়।
ইমরুল কায়েস আর মহাকবি শেকসপিয়ারও কোনো ধর্মগ্রন্থের ভাষাকে ব্যাঙ্গ করেন নি।
সমস্ত আসমানি কিতাবের শ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরানের শব্দ-বাক্যের যে স্টাইল তা হুবহু নকল বা ব্যাঙ্গ করে আনিসুল হক একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। সম্ভবত মার্চ সতেরতে লেখাটি ভাইরাল হতে হতে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, দেশের কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ দিনে রাতে ক্ষণে ক্ষণে লেখাটি নিয়ে সমালোচনা বা ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছে।
একজন মুসলমান পবিত্র কুরানের বাক্য বিন্যাসকে নকল বা ব্যাঙ্গ করে কিভাবে নিবন্ধ লিখতে পারে।
রাজাকারদের আমরা ঘৃণা করি। পাকিস্তানকেও পছন্দ করিনা। গালি দেয়ার শব্দ-বাক্য প্রয়োগ করার, নিন্দা বা সমালোচনার বহু ধরণ আছে। তাই বলে কুরান শরিফের বাক্য প্রয়োগের নকল করে।
এটি কোনো মুসলমান করতে পারে না। যার ঈমান আছে বা যিনি ঈমানদার, তার পক্ষে কুরানের ভাষা পদ্ধতি নকল করা সম্ভব নয়।
বাঁকা চোখ- শিরোনামে নিবন্ধটিতে লেখা হয়েছে, ‘আর তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে রাজাকার। নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্যে অতীতের চাইতে ভবিষ্যতকে উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে।’
‘যখন তোমাদিগকে বলা হইবে নেতা নির্বাচন করো, তখন তোমরা সেই ব্যক্তিকেই নির্বাচন করিবে, যাহার রাজাকারগিরি প্রমাণিত। আর তাহার মতো মূর্খ কে আছে, যে রাজাকার চিনিয়াও তাহাকে সম্মানিত না করিলো, আখেরে ইহারাই হইবে অভিশপ্ত। ইহাদের জন্যে সুকঠিন দারিদ্র্য অপেক্ষা করিতেছে।’
এই বাক্যগুলো সুরা বাকারার আয়াতহুলো হুবহু অনুস্বরণ করে লেখা হেয়ছে। তিনি আখেরে শব্দটি হুবহু ব্যবহার করেছেন।
অন্য প্যারায় লিখেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছা করে আর তাহার জন্যে বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভূক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙ্গালী রমণীগণকে, তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের সহিত মিলিত হইবার পথে কোনরূপ বাধা থাকিলো না।’
এই বাক্যগুলোও সুরা নুর, সুরা ওয়াকেয়ার আয়াতের মত করে লেখা হয়েছে। তার লেখার শেষ প্যারা, ‘অচিরেই কাহার কল্লা থাকিবে কাহার থাকিবে না, তাহা নির্ধারণের দায়িত্ব ‘ছাই-দি’ ‘ছা-য়েব’দের হস্তে অর্পিত হইবে। আর যে ব্যক্তি দাড়িপাল্লায় ভোট দিলো, সে-ই মাসুম শিশু হইয়া গেল। ব্যালট পেপার তাহার ডান হাতে আসিবে।
ব্যালট পেপার দেখাইয়া স্বর্গে প্রবেশ করা যাইবে। যে ব্যক্তি রাজাকার তহবিলে চাঁদা দিলো, সে-ই ৭০ গুণ ফেরত পাইলো। চাঁদার রসিদ দেখাইলে স্বর্গের দুয়ার খুলিয়া রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছেন, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।
অনন্তর সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের, যাহারা রক্ত হইতে তখ্ত কায়েম করে। -(আনিসুল হক)
পবিত্র কোরানের ৩০ পারার সুরাগুলো বিশেষ করে সুরা নাবার আয়াতগুলোর বিকৃত রুপ উপরের প্যারাটি।
এ যেন নাস্তিক্যবাদের নতুন রূপ দেয়ার চেষ্টা। জনাব লেখক, এত বিকৃত মানসিকতা আপনার, আপনি কার কথা নকল বা বিকৃত করলেন, সেই দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যিনি আপনাকে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন, তিনি আপনাকে মায়ের পেটেই অন্ধ বানিয়ে দুনিয়ায় আনতে পারতেন।
আপনাকে শ্রবনশক্তি দান করেছেন অথচ অন্ধ বানাতে পারতেন, আপনাকে মায়ের পেটেই খোরা, অটিস্টিক বানাতে পারতেন। মস্তিষ্ক বিকৃত বানাতে পারতেন, সুস্থ মেধাবী বানিয়েছেন বলে মেধা খাটিয়ে স্রষ্টার ভাষা বিকৃত করতে ভয় লাগেনি?
জনাব লেখক, আপনিতো ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, অধ্যাপক বা অন্য কিছু। নানা বিদ্যা পড়েছেন, যে কোনো ট্রেড সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল, পাওয়ার, রসায়ন, জীব, পদার্থ, অংক, দর্শন, ভূগোল, ইতিহাস বিদ্যা পড়েন নি?
আওয়ার ইসলাম টিভি, দেখুন ও সাবস্ক্রাইব করুন
বস্তুর সুক্ষাতিসুক্ষ কনা ইলেকট্রন,ফোটন সম্পর্কে ধারণা পাননি? নিউট্রনের পেছনের কারিগরকে চিনতে পারেন নি? গ্যালাক্সিগুলোর মালিককে চেনা হয়নি আপনার?
যে কোনো রোগজীবানুর জার্ম চোখে দেখা যায় না। এমন ছোট কণাটি কার হুকুমে চলে জানা হয়নি আপনার? ইতিহাস ভূগোল পড়ে দুনিয়ার বহু গাদ্দার জাতিকে ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে ধারণা জন্মায়নি?
আফসোস! আফসোস!!! আপনার মেধা বুদ্ধি কোনো পথে ব্যয় করেছেন তার হিসাব কিন্তু দেয়া লাগবে। সেদিন কোনো সাহায্যকারী পাবেন না। আপনার লেখা নাস্তিক্যবাদকে নতুন রূপ দেবে।
যার জমিনে বসবাস, বেচেঁ আছেন টেনে যার বাতাস, তাঁর কেতাব এর ভাষা নিয়ে তামাশা, কাজটি ভাল করেন নি। প্রতিদিন লেখাটি পড়া হচ্ছে। যিনি পড়ছেন তিনিই কষ্ট পাচ্ছেন আর বদ দোয়া দিচ্ছেন। আর খোদা-ই শাস্তি কী হবে আমার জানা নেই।
লেখক: প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক
মিয়ানমারে বাংলাদেশ থেকে ফিরলো প্রথম রোহিঙ্গা পরিবার