সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
আত্মবিশ্বাস একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আত্মবিশ্বাস মানুষকে তার ইতিবাচক গুণ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। নিজের ক্ষমতা বিচার ও নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণে সাহায্য করে। আর সন্তানকে দেওয়া বাবা-মায়ের সবেচেয়ে বড় উপহার হলো তাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা। যা তার সারাজীবনের জন্য উপকারী।
কারণ একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষই পারে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায় পৌঁছাতে। তাই ছোট থেকেই সন্তানকে কিছু কিছু কাজের অভ্যাস করাতে হবে। এতে করে ধীরে ধীরে তার মনে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। মনে রাখা চাই-সন্তানকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার কোনো বিকল্প নাই। আর তেমন কিছু বিষয় এই লেখায় আলোচনা করা হলো।
খেলনাগুলোর যত্ন নেওয়ার বোধ সৃষ্টি করা :
খেলার সময় বাচ্চারা খেলনা নষ্ট করবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এজন্য তাকে বকাঝকা না করে বুঝাতে হবে। দিনে দিনে তার মনে খেলনাগুলোর যত্ন নেওয়ার বোধ সৃষ্টি করতে হবে। প্রথমদিকে খেলার পর খেলনাগুলো বড়রা গুছিয়ে তাকে দিয়েই খেলার ছলে গুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। তাতে দেখবেন, সময়ের সাথে সাথে আপনার শিশুটিও দায়িত্ববান হয়ে ওঠেছে।
নিজে নিজে বাথরুম ব্যবহার করতে শেখানো :
শিশুর নিজে নিজে বাথরুম ব্যবহার করাটা খুবই সামান্য কাজ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু শরীরের প্রাথমিক যত্ন ও আত্মসচেতনতার জন্য এটি খুবই দরকারি। বয়স একটু বাড়ার সঙ্গে তাকে জানিয়ে দিন-এ কাজে অন্যের সাহায্য নেওয়া লজ্জার বিষয়। এতে করে তার আচরণে কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে।
জুতার ফিতা বাঁধা ও স্কুল ব্যাগ গোছানো :
বিদ্যালয়ের প্রথম বছরটা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে আপনার শিশুকে জুতার ফিতে বাঁধা, সুন্দর করে ব্যাগ গোছানো ও পড়ার টেবিল গোছানোর শিক্ষা দিতে হবে। এসব কাজ তাকে দিন দিন আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
শিক্ষাঙ্গণে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষা :
আজকের অভিভাবকরা সন্তানের ফলাফলের ওপর বেশি জোর দেন। কিন্তু জানতে চান না শিশুটি শিক্ষাঙ্গণে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে কি না। তাকে স্কুলে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে হবে।
মা-বাবার কাজে সাহায্য করা :
বাচ্চারা কিছু ছোটখাট কাজ করে দারুণ আনন্দ পায়। যেমন মা যখন ঘরের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখেন, সে সাহায্য করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গ উপভোগ করতে হবে।
পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব :
পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণ শিশুর ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলে। পারিবারিক সম্পর্ক মধুর হলে শিশু সম্পর্কের মূল্য ও অপরকে সহজে মূল্যায়ন করতে পারে।
নিজেকে মূল্যায়ন :
নিজেকে মূল্যায়ন আত্মবিশ্বাস তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সব কিছুতে কেবল বড়দের মূল্যায়ন করা উচিত নয়। বরং ভালো-মন্দ যা হোক, সেটা শিশুকে নিজের বুদ্ধিতে বুঝতে দেওয়া উচিত। এতে করে এক সময় সে অনেক কিছু বুঝতে বড়দের সাহায্য চাইবে।
সমস্যা চিহ্নিত করা :
কোনো বিষয়ে মূল সমস্যাটা আপনার সন্তানকেই খুঁজে বের করতে দিন। বলতে চাচ্ছি, সব সমস্যার সমাধান আপনি করে দিয়ে তাকে ‘এ’ দেওয়ার থেকে বরং ও নিজে চেষ্টা করে ‘বি’ বা ‘সি’ গ্রেড পেলেও ভালো। এতে সে নিজে নিজেই সমস্যার সমাধান করা শিখবে।
জানতে চাইলে বিরক্ত হবেন না :
হতে পারে, মাঝে মাঝে আপনার শিশু সন্তানটি এত বেশি প্রশ্ন করে যে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তবু তাকে কখনোই অবদমিত করা ঠিক নয়। কারণ ওর প্রশ্নগুলোই তার উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি কাজে আসতে পারে বলে ধরে নিতে হবে।
চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে শেখানো :
তাকে নতুন চ্যালেঞ্জ দিন। হতে পারে সেটা ছোট ছোট কোনো বিষয় নিয়ে কিন্তু পূরণ করতে পারলে খুব বেশি উৎসাহ দিন। এতে করে দিন দিন সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
মজার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা :
পাঠ্যপুস্তকের বাইরে তাকে মজার মজার বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে সে পুরো পৃথিবী নতুন করে চিনতে শিখবে।
অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা, শিশুর কোনো কাজের নেতিবাচক সমালোচনা করা তার জন্য যতটা খুবই ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই কোনো কাজ ভুল করলেও তা ধরিয়ে দিয়ে তাকে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার পরামর্শ দিতে হবে।
[email protected]
১১ এপ্রিল ২০১৮
আরো পড়ুন : কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা কি হেরে যাবে?