সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মাদকের বিস্তার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন : দেশের যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের ওপর চলছে মাদকের ভয়াল থাবা। মাদকের এ ভয়াল থাবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক সেবনকারী, পাচারকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের আটক করতে পারলেও মূল হোতারা যে থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালেই। ফলে আশানুরূপভাবে মাদকের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন? মাদকের অপ্রতিরোধ্য গতি রোধ করতে না পারলে যে আমাদের অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে। অবশ্য সর্বনাশের খুব বেশি বাকি কিছু তো নেই। তবে এখনও যদি এর লাগাম টেনে ধরা যায়, সুন্দর কিছু পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এসবের বিস্তার দেশজুড়ে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়লেও বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে।

মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণ নেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

বলা যায়, ইয়াবা দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। শহরাঞ্চলে তো বটেই, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আজ এই মারণনেশার ছড়াছড়ি। ইয়াবার অবৈধ ব্যবসায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় নানা শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শক্তি সাধারণ মানুষের নেই। প্রতিবাদ করতে গিয়ে এরই মধ্যে অনেককে জীবনও দিতে হয়েছে। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যও জড়িয়ে পড়ছেন এর সঙ্গে। কিছু সদস্য এরই মধ্যে ধরাও পড়েছেন। তবু অব্যাহত গতিতে বাড়ছে মাদক ও ইয়াবার ব্যবসা। এভাবে চলতে থাকলে এ দেশের যুবসমাজ পুরোপুরি ধ্বংস হতে খুব বেশি সময় লাগবে কি?

ইয়াবা বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ংকর নেশা হিসেবে আবির্ভূত হলেও ১৯৯০ সালের আইনে ইয়াবার নামই নেই! ফলে ইয়াবা পাচার, বেচাকেনা এবং ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলতে থাকে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে। একসময় সাক্ষী-প্রমাণের অভাবে মামলা বাতিলও হয়ে যায়।

এমন বাস্তবতায় মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশে যেন মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

মনে রাখা চাই, এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নীতিনৈতিকতার উন্মেষ ঘটাতে হবে। যারা ইতিমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়েছে তাদেরও সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

আমরা আশা করি, শুধু সচিবসভা নয়, যুবসমাজের ধ্বংস ঠেকাতে যার যেখানে যতটুকু দায়িত্ব আছে, তিনি বা তারা সেই দায়িত্ব পালনে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবেন। যে কোনো মূল্যেই হোক, মাদকের এই বিস্তার রোধ করতেই হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি যেন সহজলভ্য না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যেন মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বোপরি, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করে যার যার অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচাতে হবে দেশ ও জাতিকে। মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

[email protected]
০৯ এপ্রিল ২০১৮

আরো পড়ুন : নারী নির্যাতন মামলা কি প্রতিপক্ষকে শায়েস্তার হাতিয়ার?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ