সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নারী নির্যাতন মামলা কি প্রতিপক্ষকে শায়েস্তার হাতিয়ার?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, গবেষক ও সাংবাদিক

দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কিনা দেশে ব্যবহার হচ্ছে নারী নির্যাতন মামলা। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে করে কি সমস্যা কমছে না, বাড়ছে?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের জন্য ঢাকার পাঁচটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন মামলার পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, বিশেষ করে স্বামীকে বশে রাখা, বিনা কারণে তালাকের পর দেনমোহর আদায়, পরকীয়াজনিত কারণ, রাগী শ্বশুর-শাশুড়িকে শায়েস্তা, প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে উদ্ধার, এমনকি জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলাতেও এ আইনে মামলা করে প্রতিপক্ষকে দমন করার চেষ্টা করা হয়। এর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ যৌতুককে মেশানো গেলে তো কথাই নেই।

অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে দমাতে কথায় কথায় ঠুকে দেওয়া হচ্ছে নারী নির্যাতন মামলা। কারণ এ মামলায় আসামি জামিন পান না। অন্যদিকে আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে মিথ্যা মামলা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বাদী। ফলে বিনা অপরাধে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী।

আজ মনে পড়ে গেল, ২০১৬ সালে কোনো একটি দৈনিকে প্রকাশিত চমকে ওঠার মতো একটি খবর। তাতে লেখা হয়েছিল- চট্টগ্রামে ভুয়া নারী নির্যাতন মামলা করে পুরুষদের হয়রানি করছে একটি সিন্ডিকেট। এসব প্রতারক নারী কি না মাত্র ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাড়ায় যার-তার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়!

এমনকি হাসপাতাল থেকে তৈরি করে ভুয়া মেডিকেল সনদ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কাবিননামাও। পূর্বশত্রুতা, জমি নিয়ে বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ধরনের চক্রের শরণাপন্ন হয় অনেকে। তাদের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় কারাভোগ করেন বহু নিরপরাধ মানুষ।

দেওবন্দের ছাত্রদের মধ্যে ১৫ লক্ষ রুপির কিতাব বিরতণ

নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নাদিরা আকতার নামের এক নারী যৌতুকের মামলা (৬১৯/১৩) দায়ের করেন আদালতে। বাদীর ঠিকানা উল্লেখ করা হয় খাগরিয়া চন্দনাইশ থানা। পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চন্দনাইশে খাগরিয়া নামের কোনো গ্রামই নেই!

পুলিশ সদর দপ্তরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১৫ হাজার ২১৯ টি, ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৭৩০টি, ২০১৫ সালে ১৯ হাজার ৪৮৬টি, ২০১৪ সালে ১৯ হাজার ৬১৩টি, ২০১৩ সালে ১৮ হাজার ৯১টি, ২০১২ সালে ১৯ হাজার ২৯৫টি এবং ২০১১ সালে ১৯ হাজার ৬৮৩টি। তদন্তে দেখা গেছে, এসব মামলার ৯০ ভাগই ভুয়া।

এমনটির কারণ কী? হতে পারে, নারী নির্যাতন মামলায় আসামি তিন মাস আগে জামিন পান না বলে সমাজের কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পুলিশের একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজসে প্রতিপক্ষকে দমাতে বড় অস্ত্র হিসেবে আইনটি ব্যবহার করছে।

বাদী থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর মামলা গ্রহণের আগে তদন্তের নিয়ম থাকলেও অনেক সময় তদন্ত ছাড়াই মামলা গ্রহণ করা হচ্ছে। এমনকি এ আইনে মামলা নিতে পুলিশের অনেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও অনেক সময় হস্তক্ষেপ করেন।

যদিও নারী নির্যাতন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে গেলে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। যে কারণে ভুক্তভোগীরা নানা ধরনের হয়রানির কারণে বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের থেকে বিরত থাকে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

২০০৯ সালে তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ এক বছরের নারী নির্যাতন আইনে করা মামলা নিয়ে তদন্ত করে দেখেছিলেন, ৯ হাজার মামলার মধ্যে ৭ হাজারই ভুয়া। তখন ওইসব মামলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর নারী নির্যাতনের নামে সমাজে হয়রানি কিছুটা কমে আসলেও গত কয়েক বছর ধরে তা আবার বেড়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল এ আইনের আওতায় সংঘটিত অপরাধের যথাযথ বিচার এবং অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে ভুক্তভোগীদের রক্ষা করা। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে এ আইনের বেশিরভাগ সময়ই অপব্যবহার হচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় নারী নির্যাতন আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করি। যেন কেউ আইনটির অপব্যবহার করার সুযোগ না পায়।

এসএস

আরো পড়ুন : অরক্ষিত সুন্দরবনের সুরক্ষার দায় কার?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ