অধ্যাপক ডা. জিএম ফারুক : Who, except the gods, Can live time through forever without any pain.-Aeschylus, The wish for healing has ever been the half of health.
-Seneca Hippolytus.
মনের কথা বলে মনের ব্যথা দূর করা যায়। মন ভালো তো শরীর ভালো। মনের অসুখ না থাকলে মন সুখী হয়। আবার মনের সুখের জন্য প্রয়োজন বিশ্বাস। বিশ্বাস গাছের মূলের ন্যায়। মূল ছাড়া গাছ বেঁচে থাকতে পারে না। তেমনি মনের সাথে বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব, মানসিক অশান্তির কারণ ঘটায়।
বিশ্বাসের অবিশ্বাসে জন্ম নেয় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং আবেশমূলক মনোবৈকল্য। ব্যক্তির এমন সব মানসিক ও ব্যইক্তগত সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন সাইকোথেরাপী বা মনো চিকিৎসা।
মানসিক সমস্যা সমাধানে আঠার ও ঊনিশ শতকে গড়ে ওঠে নৈতিক চিকিৎসা আন্দোলন (Moral treatment movement)। সম্মান, মর্যাদা এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণের আদর্শে এ ধরনের মনোচিকিৎসা পরিচালিত। বর্তমানে ফ্রান্স, বৃটেন ও আমেরিকায় এ মনোচিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
উইলিয়া টিউক (১৭৩২-১৮১৯) বৃটেন, ডরোথী ডিক্স (১৮০২-১৮৭৭) আমেরিকা, ফিলিপ পিনেল (১৭৪৫-১৮২৬) ফ্রান্সে এ মনোচিকিৎসাকে জনপ্রিয় করেন।
বিশ্বের সবদেশেরই মানসিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখা যায়, সেখানে প্রতিবছর শতকরা ২৮ জন মানসিক রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন (১৯৯৩)। তবে তারা কি ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন? এক জরিপে এর উত্তর পাওয়া যায়।
শতকরা ৪০ জন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে, শতকরা ৪৫ জন সাধারণ চিকিৎসকের নিকট এবং শতকরা ২২ জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের কিংবা কোন সামাজিক সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করে থাকেন (১৯৯৩)।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারার মধ্যে থিওথেরাপী বা ধর্মীয় চিকিৎসার অবস্থানও স্বীকৃত।
মেডিটেশন, ডায়ানেটিক্স, যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি পদ্ধতিগুলো কোন না কোন ধর্মীয় আদর্শকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে। ইসলামে মহানবী সা-এর চিকিৎসা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। মহানবী সা. বলেছেন, আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যার চিকিৎসা ব্যবস্থা করেননি (বুখারি)।
তিনি আরও বলেছেন, ওষুধ কাজ করে আল্লাহর হুকুমে। আল্লাহ্র হুকুম ছাড়া কোন ওষুধ কাজ করতে পারে না (হাদিস)। মহানবী সা. রোগ আরোগ্য রোগীর জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে দোয়া করতেন। বলতেন, হে প্রভু, নিরাময় দান কর। তুমি ছাড়া অন্য কেউ নিরাময়দানকারী নেই। এমন নিরাময় দান কর, যা কোন রোগকে ছাড়ে না (বুখারি)।
রোগ দ্বারা মুমিনের গুণাহ মাফ হয়ে থাকে। এ জন্য বলা হয়ে থাকে রোগ আসলে আল্লাহ্র রহমত। মহানবী সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই যখন কোন বান্দা পীড়িত হয় তখন আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের বলেন, আমি আমার বান্দাকে আমার জিন্দানসমূহের একটিতে বন্দী করেছি, অতঃপর আমি যদি তার প্রাণ হরণ করি আমি তাকে ক্ষমা করব। আর যদি সুস্থতা দান করি, তাহলে তার গুনাহ্ মাফ করে দেব (হাদীসে কুদসি)। কুরআনে বলা হয়েছে, যখন আমি রোগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আরোগ্য দান করেন (আশা শো আরা-৮০)।
শুধু রোগ নয়। সব কিছুতেই সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতা মানুষকে সফরতা দান করতে পারে। মানসিক রোগের অন্যতম উৎস-হতাশা। হতাশা থেকে জন্ম নেয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
জীবনে নেমে আসে ভারসাম্যহীনতা। চরিত্রে দেখা দেয় অস্থিরতা। সব কিছুর মূলে কিন্তু আল্লাহ বিমুখতা। তাই ইসলামী সাইকোথেরাপীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে (যদি মুসলিম হয়), ইসলামী জীবন ধারায় ফিরিয়ে এনে মানসিক পবিত্রতা অর্জনে সহায়তা করা।
অতীতমুখী, অবচেতন মনকে বিশ্লেষণ করা ইসলামিক সাইকোথেরাপীর কাজ নয়। ভবিষ্যৎমুখী কল্যাণধর্মী চরিত্রে উদ্বুদ্ধকরণে বৈজ্ঞানিক পন্থায় মানসিক চরিত্র সংশোধন করে তাকে সুস্থ জীবন ধারায় ফিরিয়ে আনাই ইসলামিক সাইকোথেরাপীর কাজ।
আর আপনার ইচ্চা পূরণ, প্রত্যাশার বাস্তবায়ন এবং নতুন জীবনের সন্ধান দিতে পারে ইসলামিক সাইকোথেরাপী।
আরো পড়ুন- আওয়ার ইসলাম দাওরা হাদিস মডেল টেস্ট