রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে কিছু কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
শিক্ষা যে কোনো জাতির ভিত্তি। কারণ দেশের কল্যাণ সাধনে সুশিক্ষিত জাতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার গুণগত মানের ব্যাপারে উন্নত দেশগুলো কখনওই কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করে না বলেই উন্নত দেশগুলো আরও উন্নত হয়েছে। অনেক দেশ শিক্ষা খাতের মানোন্নয়নের জন্য যেমন রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ বেশি রাখে, ঠিক তেমনি তারা এ খাত থেকে জাতীয়ভাবে আয়ও করে অনেক বেশি।

শিক্ষায় বিনিয়োগ করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে অনেক দেশ। এরকম একটি দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রসমূহ প্রায়শ সংবাদ শিরোনাম হয় গুণগতমান বজায় রাখতে না পারার কারণে। যা আনন্দিত হওয়ার মতো কোনো খবর নয়।

জ্ঞান সৃষ্টি, জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞানের প্রয়োগ উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন এদেশে মাত্র চারটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ঐ ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করত খুব বেশি হলে ৩০ কি ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী। আর শ’ তিনেক কলেজে ৪০ হাজারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী পড়ালেখা করার সুযোগ পেত। গত ৪৫ বছরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ বেড়েছে।

দেশে এই মুহূর্তে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বত্রিশ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ২১৫৪টি কলেজে পড়ালেখা করছে ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এই বৃদ্ধিটা অনেকাংশে জ্যামিতিক হারে হয়েছে। তবুও বলতে হয়, দেশের উচ্চশিক্ষা লক্ষ্য থেকে আজও অনেক দূরে।

উচ্চশিক্ষা মানেই গবেষণানির্ভর পড়ালেখা। কিন্তু দেশের কোনও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করার যথেষ্ট সুযোগ নেই। ফলে উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিক মান বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থসংকট। হতাশার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার মাধ্যমে আয় বাড়ানোর দিকে তেমন একটা মনোযোগ দিতে পারছে না। তারা সরকারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আয় বাড়াতে বিকল্প পথের অনুসন্ধানও খুব একটা করে না।

আবার রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেও শিক্ষায় গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে দেখা যায় না। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেককেই আফসোস করতে শোনা যায় প্রায়ই।

শিক্ষার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব- এটা কোনো নতুন ধারণা নয়। আর বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এ ধারণার গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রতিনিয়ত শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। তারা দেশের অন্য অনেক খাতের চেয়ে শিক্ষা খাতকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

নিউজিল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড থাকার কারণেই জাপান, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সে দেশে পড়ালেখা করতে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষার প্রসার, ব্যাপ্তি ও হার বহুগুণে বাড়লেও এক জায়গায় এই সাফল্য হোঁচট খাচ্ছে। তা হলো সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার মান বজায় রাখতে না পারা।

কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান বজায় না থাকলে কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে না। প্রশ্ন হতে পারে, আমাদের দেশে তা কেন হয়ে ওঠছে না!

এ প্রসঙ্গে বলতে হয়, শিক্ষার মান বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব শিক্ষা প্রশাসক আর শিক্ষকদের। কেননা শিক্ষাদান একটি কলা ও বিজ্ঞান। এর দায়িত্বে থাকেন একজন শিক্ষক। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে ভালো শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে শিক্ষার মান বজায় রাখা সম্ভব নয়।

আমাদের বুঝতে হবে যে, শিক্ষার মান উন্নয়ন মানে শুধুই পরীক্ষায় পাসের বিপুল হার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন জ্ঞান সৃষ্টির উর্বরক্ষেত্র হিসেবে গড়ে ওঠে এ বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের যত্নবান হতে হবে আরও বেশি মাত্রায়। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আসার সুযোগ করে দিতে হবে, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের মধ্যে যথাযথ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে চাইলে মানবসম্পদ উন্নয়নে অর্থাৎ শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নানা সংকট উত্তরণে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণা ও শিক্ষাদান পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়াতে হবে। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের নিয়মিত প্রকাশনা, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

লেখক : কবি, গবেষক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম

[email protected]
৩১ মার্চ, ২০১৮

আরো পড়ুন

ইসলামবিরোধী বোল্টনের উত্থান যেভাবে


সম্পর্কিত খবর