মুনীরুল ইসলাম
ইসলাম পবিত্রতম জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ তাআলা পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে, সবাই তাদের ভালোবাসে। পবিত্র মনের অধিকারী ব্যক্তি পাপ ও মন্দকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।
পবিত্রতা মানুষের মন ও দেহে পরিতৃপ্তির সৃষ্টি করে, ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ইসলাম ধর্মে পবিত্রতা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কারণ পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত নামাজ-কুরআন পড়ার মতো মৌলিক ইবাদত করা যায় না।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পবিত্র-পুরুষ হযরত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, মিশকাত)
তার মানে যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে পারল, তার ঈমান পরিপূর্ণ, আর যে পবিত্র থাকতে পারল না তার ঈমানও পরিপূর্ণ নয়। পবিত্রতা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। আত্মিক পবিত্রতা এবং বাহ্যিক পবিত্রতা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করা যায় গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে নেক আমলের মাধ্যমে। আর বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা যায় দুনিয়াবী উপায়-উপকরণের মাধ্যমে।
নিয়মিত নামাজ আদায় করলে আত্মিক ও বাহ্যিক দুইদিক দিয়েই পবিত্র থাকা সম্ভব। কারণ নামাজ আদায়ের জন্য অজু করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। অজুতে এমন অঙ্গগুলো ধৌত করা ফরজ করা হয়েছে, যা সাধারণত প্রকাশমান। যেখানে ধুলাবালি লাগা স্বাভাবিক।
দিনে পাঁচবার অজু করলে বাহ্যিক অঙ্গগুলো পরিষ্কার হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে অজু করে পবিত্রতা অর্জনের আদেশ দেন।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল এবং হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ কর এবং পা-গুলো টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল; আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে ও তোমাদের ওপর স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত-৬)
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দর করে অজু করে, তার গুনাহসমূহ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।’ (বুখারি, মুসলিম)
তিনি আরো বলেছেন, ‘জান্নাতের চাবি নামাজ এবং নামাজের চাবি পবিত্রতা।’ (আবু দাউদ, তিরমিযি)
আর সাধারণ পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য প্রথমেই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করতে হয়। প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে পরিবার সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে বেশি বেগ পেতে হবে না।
নিয়মিত গোসল করা, জামা-কাপড় পরিষ্কার রাখা, চুল-দাঁড়ি আঁচড়ানো, নখ কাটা, দাঁত ব্রাশ করা- মিসওয়াক করা, শরীরের পশম পরিষ্কার করা, তেল-ক্রিম ব্যবহার করা, নিজের রুম-পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি ব্যক্তিগত দায়িত্ব।
দেশের সবাই যদি নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে দেশের সিংহভাগই পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এরপর আসে শ্রেণিভেদে বাড়ির আঙিনা, বিদ্যালয়ের আঙিনা, ক্লাস রুম, রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি পরিষ্কার করার বিষয়।
পরিচ্ছন্নতা অর্জনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখ এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক।’ (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত-৪ ও ৫)।
পোশাক-পরিচ্ছদের পাশাপাশি নিজেদের ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রী এবং পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।
পরিচ্ছন্নতা অর্জনের উপরে বর্ণিত অনুষঙ্গগুলো সবই নিজের উপর নির্ভর করে। কেউ যদি শহর-নগর-গ্রামের এখানে সেখানে মলত্যাগ না করেন, বাসা-বাড়ির উপর থেকেই ময়লা-আবর্জনা না ফেলেন, ডাস্টবিনের মুখে বা আশেপাশে না ফেলে ডাস্টবিনের ভেতরে ফেলেন, তাহলে তো পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন হওয়ার সুযোগই পাবে না।
এরপরও যদি কোনো জায়গা অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়, মিলেমিশে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে, গাছের ছায়ায় মলত্যাগ থেকে বিরত থাকবে।’ (মিশকাত)
আসুন আমরা আত্মিক ও বাহ্যিক উভয় ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে ইহ-পরকালীন সফলতা লাভ করি। নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেকে আমাদের এই নয়নাভিরাম বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন রাখি। কারণ, আমরা পরিচ্ছন্ন হলে বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন হবে।
শেষ করছি আওয়ার ইসলামের ‘ধুলোমুক্ত ঢাকা চাই’ কর্মসূচি দিয়ে। ধুলাবালি প্রতিদিন নানারকম রোগবালাই ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের দেহে। আমরা যেখানে চলাচল করি সেটি আমাদেরই জায়গা। এটি পরিচ্ছন্ন করতে হবে আমাদের স্বার্থেই।
আওয়ার ইসলাম যে উদ্যোগ নিয়েছে ধুলামুক্ত ঢাকা চাই কর্মসূচির, যার মাধ্যমে তারা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করবে- নি:সন্দেহে এটি চমৎকার উদ্যোগ। আশা করি পরিচ্ছিন্ন ঢাকা গড়তে এটি দারুন দৃষ্টান্ত হবে।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম