সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বার বার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি কেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

গত ১৩ মার্চ রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আবারও বাড়ানো হবে বিদ্যুৎসহ জ্বালানির দাম। তিনি বলেছেন, জনগণকে যে দামে জ্বালানি দেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে তা সস্তা। কারণ এ খাতে প্রতি বছর বিপুল ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

তিনি আরও বলেছেন, আর বেশিদিন সস্তায় জ্বালানি দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে এ সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু উল্লেখ করেননি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য যে একেবারেই অযৌক্তিক তা বলছি না। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা তো ভিন্ন। বলছি, মূল্যস্ফীতি হলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। আর এ কারণে কেউ কেউ চলে যাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে।

অবশ্য একথাও ঠিক, বাজার অর্থনীতির বাস্তব কিছু কারণেই এ খাতে অব্যাহতভাবে ভর্তুকি জোগানো থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।

তবে এজন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও অটুট থাকে। আর এক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক প্রশ্ন, যেসব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে, তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় কী?

বিশেষ করে যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবেন, তাদের অবস্থা উত্তরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার মতো সরকারের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি?

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ মার্চ থেকে গ্যাসের এবং ১ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের বর্ধিত দাম কার্যকর হয়। শোনা যাচ্ছে, এত কাছাকাছি সময়ে তেল এবং গ্যাসের দামবৃদ্ধির প্রস্তাব আসায় নড়েচড়ে বসেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও।

বিশেষ করে নির্বাচনী বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দুই জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রভাব বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ তিন বছর আন্তর্জাতিক দরের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করার পর এখন আন্তর্জাতিক বাজারদরের সমান দামে তেল বিক্রি করার প্রস্তাবে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে, ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আগামী এপ্রিলে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে যুক্ত হলে গ্যাসের গড় পাইকারি দাম বেড়ে যাবে। শুল্ক এবং কর মওকুফ করে এই মিশ্রিত গ্যাসের দাম কতটুকু বাড়ানো যাবে সে বিষয়ে চলতি শিগগির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিবে সরকার।

কিন্তু এপ্রিলের মধ্যে গণশুনানি আয়োজন ও শেষ করে দামবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির (এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) জন্য প্রায় অসম্ভব। অবশ্য এ নিয়েও করণীয় ঠিক করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় বলতে হচ্ছে, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচিত বিষয় বা প্রশ্নগুলোর সদুত্তর খুঁজে বের করা দরকার। কারণ বর্তমান বাজারে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে নাভিশ্বাস ওঠছে জনগণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের। এ অবস্থায় সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় যদি বেড়ে ওঠে, তাহলে অনেকের জীবনের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে।

জ্বালানির দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে বাড়বে ব্যবসা পরিচালন ব্যয়। এ অবস্থায় আমাদের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে বলেই ধারণা।

কাঙ্ক্ষিত সময়ে নিম্ন-মধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়াটাও জরুরি বলে মনে করি। আর দেশে নতুন করে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে এ প্রক্রিয়া যে বাধাগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একই সাথে রফতানি আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় যে বেড়ে ওঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যদি তাদের আয় না বাড়ে, তাহলে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। তাই জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত বলে মনে করি।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ