খতিব তাজুল ইসলাম
যুক্তরাজ্য থেকে
একটি আইডিয়া আসলো মাথায়! বাংলাদেশে হাজার হাজার কওমি মাদরাসা। সাথে টাইটেল তো কয়েক হাজার হবেই। আরথিক টানাপোড়ন লেগেই আছে। সেখানে স্বচ্ছলতার একটা সুদূরপ্রসারি প্লান করা যেতে পারে।
ইউরোপের সরকার গুলো গরিব পরিবারকে কলেজ ভার্সিটিতে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর জন্য ফান্ড সহযোগিতা দেয়। কলেজ পর্যন্ত পুরাটাই ফ্রি। তবে ইউনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেপর ফান্ড দেয়া হয় তবে তা লোন বা কর্জ হিসাবে।
পরিণত বা কর্ম জীবনে যখন পা রাখে তখন তার রুজির অংশ থেকে লোন বা কর্জ ফেরত দেয়া আরম্ভ করে। রুজি না হলে দিতেই হবে এমন না। তবে সাধারণত তারা কাজ করে এবং দেয় কিছুটা হলেও।
আমাদের কওমি অঙ্গনে যারা লেখাপড়া করেন এবং বিশেষ করে উপরের ক্লাসে যারা পড়েন তাদের জন্য আমার একটা ফরমুলা আছে।
শিক্ষার্থীরা হয়তো রাগ করবেন। তবে বলুনতো দেখি একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে কেমন লাগে?
আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চিন্তিত। সামান্য একটি পরিবার নিয়ে কেমনে চলবেন ফিকিরে অস্থীর! সেখানে এই প্রতিষ্ঠান যে আপনার জন্য পড়ালেখার আয়োজন করলো তারও তো শুকরিয়া আদায় করা লাগবে না?
তাই আমি বলবো আসুন আমরা কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠানের শুকরিয়া আদায় করি।
কিভাবে শুকরিয়া আদায় করবো?
জালালাইন একবছর মিশকাত একবছর আর দাওরা হোক দু’বছরের। মোট চার বছর। না হলে তো তিনবছর তো আছেই। এই মোট চার বা তিনবছরব্যাপী উচ্চতর শিক্ষার স্তরের ছাত্ররা সাধারণত যুবক হয়। যুবকরা যদি বলে যে আমি বসে বসে যাকাত খাবো তা কেমনে হয়?
একজন তরুণের কাছে আমার জিজ্ঞাসা যে বাবা তোমার কাছে যাকাত পছন্দ না নিজের কর্ম’র ফসল ভোগ পছন্দ কর? নিশ্চয়ই সে কর্মকে প্রাধান্য দিবে।
এই তরুণ বয়সে যদি সে তার নিজের উপর আস্থা না নিয়ে আসতে পারে তাহলে পরবর্তী জীবনে কিভাবে আস্থা অর্জন করবে সেটা চিন্তার বিষয়। আস্থার মানে হলো নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখা।
নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর সুযোগের ব্যবহার শুরু। তাই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বলবো, আপনারা উচ্চতর ক্লাসগুলোকে এমনভাবে বিন্যাস করুন যাতে শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজের সুযোগ করে নিতে পারে।
সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস না করে ৪দিন ৫দনি করুন। আপনারা তো আলাদা কোনো গ্রহের না। এই পৃথিবীর একটি অংশের তরুণরা তা পারলে আপনারা কেন পারবেন না?
উচ্চতর ক্লাসের ছাত্ররা নিজ কর্ম‘র অর্থ দিয়ে লেখাপড়া করবে। স্বচ্ছল পরিবার থেকে সাপোর্ট পেয়ে যদি কেউ পরিশোধ করে ভাল কথা। তবে কাজ করুক যাতে কাজের অভ্যাস গড়ে উঠে।
আর যারা পরিবার থেকে সাপোর্ট পাবে না কিংবা উপস্থিত কাজ করতে অক্ষম তাদের জন্য একটা ফর্মুলা হলো তারা প্রতিষ্ঠানের গোরাবা ফান্ড থেকে করজে হাসানা হিসাবে ফান্ড মনজুর করিয়ে এনে একাডেমিক বিভাগের ডিমান্ড পুরা করে দিবে। ক্যাশ টাাকা লেনদেন লাগবে না। শুধু ফরম আর চুক্তি ও আবেনদ পত্রের লেনদেন।
পরবর্তীতে যখন সে টাইটেল পাশ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে তখন তার সেই উপার্জন থেকে সামান্য করে হলেও প্রতিষ্ঠানের দেয়া আর্থিক সুবিধাগুলো ফেরত দিতে শুরু করুক।
অসুস্থ অক্ষম হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সে যদি বলে- আমি তা কেমনে ফেরত দেবো? নিজে খেতে পাবো কিনা আবার করজে হাসানার বোঝা? তাহলে তোমার মত অক্ষম দুর্বল মানসিকতার লোক দিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার কোনো মানে নেই।
জরুরিয়াতে জিন্দেগী যা জানার তা তো তোমার আগেই জানা হয়েগেছে। উচ্চতর ক্লাসে এসে কেন খামাখা ফান্ডের অপচয় করাতে এসেছো?
যে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ রাতকে দিন করে কিংবা দিনকে রাত করে পড়ালেখার পরিবেশ এনে দিয়েছে সে প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার কোনো দায় নেই? আবশ্যই আছে এবং তা পালন করতে হবে।
এভাবে যদি একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার ছাত্র ফারিগীন হোন তাহলে আশা করা যায়, ফারেগীনদের দেয়া তহবিল দিয়ে প্রতিষ্ঠান অনায়াসে চলতে পারে।
গোরাবা ফান্ড বলতে যাকাত মান্নত কিংবা ফিতারার কথা বলছিনা। এই গোরাবা ফান্ড বলতে সহায়তার ফান্ড বুঝাতে চাচ্ছি। একটি প্রতিষ্ঠান সাধারণত সর্বোচ্চ হয়তো ২০-২৫ ভাগ যাকাতের ফান্ড ব্যবহার করে। বাকি জেনারেল ফান্ডই ব্যবহৃত হয়। তাই সেই ফান্ড জেনারেল ফান্ড থেকেই ধরে নেয়া যেতে পারে।
এইধারা শুরু হলে দীনী প্রতিষ্ঠানের কোমর অনেক মজবুত হবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
একজন আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ আলেমে দ্বীনের এমন সংকল্প হওয়া সময়ের দাবি বলে আমি মনে করি। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি তারা তাদের প্রজন্ম থেকে ভবিষ্যত সহযোগিতা কামনা করতে পারে তাহলে আমরা আমাদের এইসমস্ত দ্বীনের ঘাটির জন্য কি কিছু করতে পারবো না?
লন্ডন ১৪মার্চ ২০১৮ লেখক: আলেম চিন্তক ও গবেষক