আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ওয়াখান এলাকা। এ এলাকাটিকে বিশ্বের সবচেয়ে গভীর পাহারের পাদদেশে ও দূরবর্তী এলাকা হিসেবে গণনা করা হয়। ওই নির্জন এলাকায় কেবল পায়ে হেঁটেই যাওয়া সম্ভব।
মুসলামানদের অনেকগুলো পরিবারের বসবাস সেখানে। বিবিসি ফার্সীর প্রতিনিধি আরশাদ হানরি ও তার দল গিয়েছিলো সেই গহীন পাহড়ি লোকগুলোর কাছে।
ছবি তুলেছে তাদের। গল্প শুনেছেন তাদের থেকে। কেমন আছেন তারা। আসুন দেখি ছবিতেই। বিবিসি উর্দু থেকে ফিচারটি ভাষান্তর করেছেন আবদুল্লাহ তামিম
অন্যান্য স্থানীয় লোকের মতোই এ লোকটি পাহাড়ে গরু, মহিষ ও ভেড়া চড়িয়ে জীবন ধারণ করেন। প্রতি মাসের শেষে বেতন পান।
ওই এলাকায় বিয়ে করার জন্য কোন মেয়ে দেখার আগে অবশ্যই তাকে কোনো কাজ-কর্ম করতে হয়। অকর্মা, কর্ম ছাড়া লোকদের কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। তাই তারা সবাই কমবেশি কাজ করে।
আসলি বিবি। বয়সের ছাপ পড়েনি এখনো। বয়স কিন্তু ৪২। তিনটি সন্তানের জননী তিনি।
এ এলাকায় হাসপাতাল নেই। কোন শিশু জন্ম নিলে অথাবা সমস্যা দেখা দিলে, ১০ ঘণ্টার দূরত্বের একটি হাসপাতালে নিতে হয়।
পুরো আফগানিস্তান জুড়ে নানান সহিংসতা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে ওয়াকানবাসিরা অনেক অনেক দূরে। কিন্তু দূরবর্তী এলাকার কারণে সব ধরনের সুবিধা পওয়া যায় না। যদি সব সুযোগ সুবিধা তারা পেতো তহালে তারাই মনে হয় বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।
১৬বছর-বয়সী এ ছেলেটি ছবি তোলার সময় আমায় ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছিলো। আমাকে বলেছে, জীবনে এ প্রথম কেউ ছবি তুলেছে তার।
ওয়াখান এলাকায় শুধুমাত্র ১৬ টি স্কুল আছে। যেখানে জনসংখ্যা ১১ হাজার বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হাজার হাজার মুসলামান। এ কারণে শিশুরা কয়েক ঘণ্টা হেঁটে স্কুলে যেতে হয়।
৭১ বছরের বুড়ো দাদা। তিনি একটি গেস্ট হাউসের মালিক। বাদাখশান প্রদেশের বেশিরভাগ অতিথি পর্যটন অফিসের গেস্টহাউসে থাকলেও প্রচুর পর্যটক পায় প্রাইভেট গেস্টহাউসের মালিকেরা।
মাত্র ১৩ বছর বয়েসি রিয়াদ। স্কুলে গেলেও তার মন থাকে ক্ষেত কিংবা খামারে। বাবার সাথে কৃষি কাজ করতে ভালোবাসে।
ভালোবাসে খালি মাঠে ঘোড়ার পিছু ছুটতে। বাবারা চায় সন্তানদের লেখা পড়া করাতে কিন্তু তাদের আগ্রহ অত্যন্ত কম।
এ তিনটি মেয়ে এক সাথে স্কুলে যায়। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী এ শিশুরা বুদাগার গ্রামে বসবাস করে। তারা স্কুল থেকে ফিরে এসে তাদের মাদেরকে রান্নাবান্নার কাজে সহযোগিতা করে।
ওরা বেশ স্বাধীন। অংশগ্রহণ করে নিজেদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে। রঙিন পোশাক পরে। ভয়হীন ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক।
জিয়াউদ্দিন বিন বন্দনা আমাদের দেখিয়েছেন আফগানিস্তানের পতাকা। কিছু স্থানীয় লোক কেন্দ্রীয় সরকারকে মানতে চায় না। কারণ সরকার তাদের জন্য কিছুই করে না।
তবে কেউ কেউ আবার জাতীয় পরিচয় নিয়ে গর্বিত।
এ তরুণ আমাদের সফর গাইড। ওয়াখানেই তার বাড়ি। প্রতিদিন সে একহাজার রুপি আয় করে।
এ ব্যক্তি পামির পাহাড় পরিদর্শন করে এমন লোকেদের ঘোড়া ভাড়া দেয়। প্রতিদিন ২৫ ডলারের মত আয় করেন তিনি। পাহাড়ি এলাকায় ঘোড়াই একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় অনেক লোক এভাবে জীবিকা উপার্জনে করে।
১৮ বছর বয়সী আহমেদ রশিদ একজন ছাত্র। সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের ছেলে রশিদ। ওখানের অন্যান্য শিশুদের মত তার মাঠে বাবা মায়ের সাথে কাজ করতে হয় না।
এই ব্যক্তি কল পাজা নামক গ্রামের একটি খামারে কাজ করে, যার জন্য তিনি প্রতি মাসে পাঁচ হাজার আফগানি পাচ্ছেন। এখানে গম প্রধান ফসল, কিন্তু আবহাওয়ার তীব্রতার কারণে, এর গুণগত মান ভাল নয়
চার বছর বয়সী জেহরা এ গ্রামের সীমান্তের একজন অধিবাসী। তার পরিবার স্থানীয় গেস্টহাউসের কাছাকাছি থাকে। বেশিরভাগ সময় তারা পর্যটকদের পথ দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করেন।
এই ছয় বছর বয়সী শিশুটি দুই মাস আগে মুখে আঘাত পেয়েছিল। এই এলাকায় চিকিৎসা অভাব আছে। আফগান সরকার এ অঞ্চলে একটি ক্লিনিক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা হয় নি। যে কারণে আঘাত নিয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাকে।
তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে মরিয়া কেনো আফগান সরকার?