আওয়ার ইসলাম
কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান পারস্পরিক গোলাগুলির সমান্তরালে চলছে দোষারোপের খেলা। দিল্লি-ইসলামাবাদ এক বছরের মধ্যে ৪০০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। উসকানির অভিযোগও করছে উভয় পক্ষই। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি চেনাব অঞ্চলে পাকিস্তান ও ভারত পরস্পরকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলমান গোলাগুলির কারণে জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি ২০টিরও বেশি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কাছাকাছি অঞ্চল থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান দুইবার মুখোমুখি যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৪৭ ও ১৯৬৫ সালে উপমহাদেশের পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সম্প্রতি ওই এলাকায় বেড়েছে গোলাগুলির ঘটনা। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ইউকের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ ফয়সাল ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার জেপি সিংহকে ডেকে পাঠান। ওই সাক্ষাতের পর পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় দখলদার বাহিনী অনর্থক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নিকিয়াল সেক্টরে ১৩ বছরের এক বালককে শহীদ করেছে।’ এই ঘটনায় উদ্বেগ জানান ড. মোহাম্মদ ফয়সাল।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, চলতি বছরে ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা ও কার্যকর সীমানায় চারশ’বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এসব ঘটনায় ১৮ নাগরিক নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি তাদের। অন্যদিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সরকারি তথ্যের বরাতে জানিয়েছে, এই বছরে চারশ’ এগারোটি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে পাকিস্তান। আর এসবের মধ্যে মাত্র আটটি পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের ১৫ কর্পস জোনে ঘটেছে। এসব যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের মধ্যে উত্তর কাশ্মিরের রামপুর এবং উরি এলাকায় ১০৫ মিলিমিটার আর্টিলারি ফিল্ডগান ব্যবহার করেছে ভারত। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ২০০৩ সালের নভেম্বরে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর ওই এলাকায় প্রথমবারের মতো আর্টিলারি ফিল্ডগান ব্যবহার করা হলো। সেনাবাহিনীর শেষ অবলম্বন হিসেবে ব্যবহৃত হয় আর্টিলারি। পদাতিক সেনারা ব্যক্তিগত অস্ত্র ও মর্টার ব্যবহার করে থাকে।
বালাকোট সীমান্তে কয়েক দফা গুলিবিনিময়ের জের ধরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ এক্সপ্রেস ইউকেকে জানিয়েছেন, লাউড স্পিকারে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বলছে ভারত আমাদের অনেক সেনাকে হত্যা করেছে, আমরা প্রতিশোধ নিয়েই তাদের সমাহিত করবো। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা সতর্কতা অনুসরণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে।’