আওয়ার ইসলাম
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর আদালতে খালেদা জিয়াজিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের ২১তম দিন চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন লন্ডন অবস্থানরত খালেদা জিয়া ছেলে তারেক রহমান।
চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দলে এখনও কোনও দৃশ্যমান দ্বন্দ্ব দেখা যায়নি। এমনকী বৈঠকে-রাজপথে সমানভাবেই সিনিয়র নেতাদের সামনের সারিতেই দেখা গেছে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আগামী নির্বাচনকে ঘিরে দলটিতে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযোগ, সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ইস্যুতে নিরসন হলেও ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। একই আশঙ্কা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। একইসঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক সিনিয়র নেতারও ভাষ্য, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। এর ফলে দলটির পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
লাভ-ক্ষতির প্রশ্নে বিএনপি নেতারা আরও সময় নিতে আগ্রহী। তারা বলছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার একদিন পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই ২১ দিনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোনও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আসেনি।
এমনকী এই সময়ের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক বারের বেশি বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বেশিরভাগই গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এছাড়া খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের ও দল-নিরপেক্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছে বিএনপি।
বিএনপির দফতর বলছে, ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর প্রায় সাড়ে চার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আছেন।
লাভ-ক্ষতির প্রশ্নের বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষতি হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, আমাদের প্রিয় মানুষ জেলে। এটাই বড় ক্ষতি। ৭৩ বছর বয়সে তার খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা অনেক কষ্ট করে করতে হয়। তিনি একা নির্জন জীবনযাপন করছেন।
আমাদের সঙ্গে তার দেখা হচ্ছে না, দলকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। দল তার প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছে না। আসলে একজন মুক্ত মানুষ আর বন্দি মানুষের পার্থক্য তো আপনারা বোঝেন। আমরা এখন আর তাকে নিয়মিত পাচ্ছি না। আসলে সব দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছে।’
লাভের বিষয়ে আহমেদ আযম খানের ভাষ্য, ‘তার জেলে যাওয়ার বিষয়টি আমি একটি উদাহরণ দিতে বলতে চাই। তা হলো, একটি বাড়িতে যখন ডাকাত পড়ে, তখন ওই বাড়িতে মানুষের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব থাকলেও ডাকাত তাড়ানোর জন্য সবাই কিন্তু এক হয়ে যায়।
এই জায়গা থেকে তিনি জেলে যাওয়ার কারণে বিএনপির নেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বা মনমালিন্য ছিল, তা ভুলে গিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তির আন্দোলন শামিল হচ্ছে। এখন আর কারও সঙ্গে কারও বিভেদ নেই। সবাই একমত হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে আহমেদ আযম খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে সব দেশ আওয়ামী লীগকে ধিক্কার দিচ্ছে। কিন্তু এই সরকার তো কাউকে কেয়ার করে না। তারা তো নিজেদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে মনে করে। এ মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ৫০ আসনও পাবে না। তবে এগুলো বিএনপির জন্য আপাতত লাভজনক মনে হলেও আমরা তো চায় না নেত্রী জেলে থাকুক। তাই তার জেলে থাকা আমাদের দলের জন্য ক্ষতিকর।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন