মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ
খতিব, শিক্ষক ও কলামিস্ট
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের বয়স প্রায় চল্লিশ৷ চার দশকের একটি প্রতিষ্ঠান৷ এই চার দশকে সফলতা ও ব্যর্থতার নানা গল্প আছে৷ আছে নানা চালচিত্র৷ আছে ত্যাগ৷ ভোগও আছে৷ সততা আছে এবং দুর্নীতির অভিযোগও৷
কর্মদক্ষ লোকদের প্রতি মূল্যায়ণ আছে এবং আছে যোগ্য লোকদের অবজ্ঞা, অবমূল্যায়ণ৷ একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের নানা দিক থাকতেই পারে৷ এই দিক সফলতা ও ব্যর্থতার৷
বিশ্লেষকগণ বলেন, আলেমদের সংগঠন সাংগঠনিক রূপ কম পায়৷ আলেমদের সংগঠনের স্থায়িত্ব কম৷ তবে বেফাক কিছুটা ব্যাতিক্রম৷ চার দশক থেকে টিকে আছে বেফাক৷ পদ পদবী নিয়ে নানা তর্ক বিতর্ক এবং মান ও অভিমান থাকার পরও গত মজলিসে উমূমি উরফে কাউন্সিলে ১১৬ সদস্যর মজলিসে আমেলা গঠিত হয়েছে৷
সভাপতি বা সদর নির্বাচিত করা হয়েছে৷ নির্বাচিত করা হয়েছে নাজেম বা সাধারণ সম্পাদক বা সেক্রেটারি৷ ঘোষিত হয়েছে ১৫ জন সাংগঠনিক সম্পাদক৷ সহ সভাপতিও৷
বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিব থাকেন সাধারণত যারা নিয়মিত বোর্ডে সময় দেন৷ কিন্তু বেফাকের সেই জাতীয় কোনো চেয়ারম্যান ও সচিব আছে কি না আমার জানা নেই৷
তবে অখ্যাত একজনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রাখা হয়েছে৷ তিনি হয়তো খ্যাতিসম্পন্ন কিন্তু জাতি জানতে ব্যর্থ তাঁর পরিচিতি৷ সেই কমিটিতে বেফাকের মহাপরিচালক হলেন সাধারণ সদস্য৷
নবীন অনেকেই সহ সভাপতি এটি বিশেষ বিবেচানায় মনে হয়৷ কাউন্সিলের আগেই চট্রগ্রাম থেকে ঘোষিত হয়েছিলেন সহসভাপতি! কাউন্সিলে তাদের পদ বহাল রাখা হয়েছে৷
মাওলানা আনাছ মাদানী একজন সহসভাপতি৷ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর মতো দেশসেরা যোগ্য আলেম হলেন সাধারণ সদস্য!
কার্যনির্বাহী কমিটি আবার আম ও খাস৷ খাস কেন? তা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন৷ অনেকের জামাতাও সদস্য! এ নিয়ে কথা না বলা ভালো যেহেতু কমিটি গঠন করার আগেই নামগুলো কম্পোজ করা ছিলো৷
ইসলামি কিতাব, বয়ান ও মালফূযাতের অন্যন্য অ্যাপ
কাউন্সিলে বিরিয়ানি খাওয়ালেও ভোটের অধিকার ছিলো না কারোর৷ যেহেতু গণতন্ত্রের পদ্ধতি হারাম বা নাজায়েয বা পশ্চিমা পদ্ধতি তাই সব খাস পদ্ধতি! এইসব খাস পদ্ধতি সব সময় ঠিক নয়৷
বেফাকের ইলহাকভুক্ত মাদরাসাগুলোর লিখিত বা অন্যকোনো পদ্ধতিতে মতামত নেওয়ার পর সদস্য নিলে সমস্যা কম হতো৷ এইবার কমিটি নিয়ে যা হয়েছে তা অতীতে হয় নি৷
মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে পদ দিতে হয় তাই নামটি রাখা হয়েছে আর কি! বাদ যেহেতু দেওয়া যাচ্ছে না তাই রাখা হয়েছে নামে মাত্র! তিনি কত নম্বর সহসভাপতি? নিশ্চয় তিনি দশের পর হবেন৷ লিস্টটি দেখতে হবে৷
এজাতীয় আলোচনা করা নিষেধ৷ ফেবুতে করা ঠিক নয়৷ কিন্তু মিডিয়ায় তো বেফাকের ভেতেরর দুর্নীতির খবরও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে! সাবেক কর্মকর্তাগণ বেফাকের অনিয়মের ভয়াবহ তথ্য দিচ্ছেন৷ সেগুলো কীভাবে ফেরাবেন আপনি?
আমি বেফাক নিয়ে কিছু বললে আমাকে নানা কিছু উপাধী দেওয়া হয় কিন্তু বেফাক নিয়ে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি কীভাবে সামলাবেন আপনি? দুর্নীতি করা এবং এ নিয়ে চুপ করে থাকা সমান অপরাধ৷ অনিয়ম করা ও প্রশ্রয় দেওয়া সমান৷
এ পরিস্থিতিতে বেফাক যা করতে পারে…
১. বেফাকের গঠনতন্ত্র রাজনৈতিক আদলে না হয়ে শিক্ষাবান্ধব হবে৷ কীভাবে হবে তার জন্য বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ, শিক্ষাবিদগণ চিন্তা করে রূপরেখা দেবেন৷
২. সভাপতি ও সম্পাদকের কোনো পদ থাকবে না৷ বোর্ড চলবে পরীক্ষা সংক্রান্ত পদ পদবী দিয়ে৷
সব মাদরাসা সদস্য থাকবে শুধু৷ সেক্রাটারির বেতনও থাকবে না৷ সভাপতির ভাতাও না৷
৩. বেফাকের গবেষণা পরিষদ থাকবে যারা সিলেবাস নিয়ে কাজ করবেন৷
৪. বেফাকের নীতিমালায় ইলহাকভুক্ত মাদরাসার লিখিত প্রস্তাব দেবার সুযোগ থাকবে যা আলোচনা পর্যালোচনা করে শিক্ষা কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে৷
শিক্ষা কমিটি হবে নাযেমে তালীমাত সমন্বয়ে৷
৫. বেফাকের প্রশাসনিক বিন্যাস হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপযোগী৷
৬. বেফাকের একটি শিক্ষামূলক জার্নাল থাকবে যা বাধ্যতামূলক সব মাদরাসাকে ক্রয় করতে হবে৷ সে জার্নালে গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাপা হবে যা হবে শিক্ষা সংক্রান্ত৷
৭. বেফাক চলবে দেওবন্দের মানহাজে৷ ইলহাকভুক্তদের দান অনুদানে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা থাকতে পারে৷ সেই আয় হবে তালেবে ইলমদের শিক্ষাবৃত্তির জন্য৷ কোনো সরকারি দানের দরকার পরবে না তাহলে৷
৮. বেফাকের কাঠামো সংস্কার করা হবে যৌথচিন্তা করে৷ ব্যক্তি বা রাজনৈকি বিবেচনায় নয়৷
৯. বেফাক আরব বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মুআদালা করতে পারে৷
১০. এস এস সি পর্যায় পর্যন্ত সরকারি সিলেবাসের উপযোগী অংশ পাঠ্যভুক্ত করে এসএস সি পরীক্ষার পথ খোলা রাখতে পারে৷
লেখক: পরিচালক, ইবনে খালদুন ইনস্টিটিউট