জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ইয়াকুব কলা অনুষদে সর্বোচ্চ সিজিপিএ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী পদক লাভ করেছেন।
তিনি ১৯৯৪ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৯ সালে উত্তর পূর্ব গজালিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল এবং ২০১১ সালে ছারছিনা দারুস সুন্নাহ কামিল মাদরাসা আলিম পাশ করেন।
২০১১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৬ সালে একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষে মোঃ ইয়াকুবের সঙ্গে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু।
আওয়ার ইসলাম : ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পেলেন। কেমন লাগছে?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : আল হামদুলিল্লাহ! খুব ভালো ভাগছে আমার। আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। আল্লাহ আমাকে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ পদক লাভের সুযোগ দান করেছেন।
আওয়ার ইসলাম : এই আনন্দের মুহূর্তে কাকে স্মরণ করবেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : আমি আমার সব প্রিয়জনকেই স্মরণ করবো। বিশেষত আমার মাকে। তিনিই আমার জীবনে প্রথম ও প্রধান শিক্ষক। আমি যতো দিন তার কাছে ছিলাম, ততোদিন আমাকে নিজেই পড়াতেন। দূরে চলে আসার পরও তিনি কখনো দূরত্ব বুঝতে দেন নি। আমার বাবাও আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
আমার শিক্ষকগণ সব সময় আমাকে স্নেহ ও ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। পড়ালেখায় কিভাবে ভালো করা যায় সে পরামর্শ দিয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন। আমি তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
আওয়ার ইসলাম : আপনার শিক্ষকসহ যারা আপনাকে সহযোগিতা করেছেন; তাদের কাউকে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চান কি?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : শিক্ষকদের মধ্যে সবাই তার অবস্থান থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। যখন যে সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে গিয়েছি তারা সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
বন্ধুদের মধ্যে আমি আতাউর রহমানের কথা স্মরণ করবো। আমি লেখাপড়া বিষয়ে তার সঙ্গেই পরামর্শ করতাম। সে যথেষ্ট সহযোগিতা করতো। আজকের খুশির দিনে আমি আমার সব বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জানাতে চাই।
আরেকটি নাম না বললেই নয়। আমাদের বড় ভাই শাহাদাৎ হোসাইন খান। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। প্রত্যেক পরীক্ষার আগে তিনি আমাকে প্রচুর পরিমাণ বই, আর্টিকেলসহ শিক্ষা উপকরণ দিতেন।
এখনও তার অনেক বই আমার কাছে আছে। কোনো প্রয়োজনে তাকে নক করে কখনো নিরাশ হয় নি। আল্লাহ সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।
আওয়ার ইসলাম : আজ যে সম্মান আপনি পেলেন। অর্জনের কোনো পরিকল্পনা কি আপনার পূর্ব থেকে ছিলো? নাকি ভালো লেখাপড়ার কারণে পেয়ে গেলেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : পরিকল্পনা ছাড়া বড় কিছু অর্জন করা যায় না। আমি যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, সেদিনের ডায়েরিতে লিখেছিলাম, আমি প্রধানমন্ত্রী পদক অর্জন করবো।
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
আওয়ার ইসলাম : স্বপ্নপূরণের জন্য কী করেছিলেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : প্রধানত করেছিলাম নিয়মিত লেখাপড়া। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ছেলে। খরচের পুরো টাকা পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন ছিলো। তাই কিছু সময় আমাকে বাইরে দিতে হতো।
সবকিছুর পরও আমি প্রতিদিন লেখাপড়াটা করার চেষ্টা করতাম। এমনও হয়েছে, স্টুডেন্ট পড়িয়ে রাত ১২টায় ফিরেছি। তখন বিছানায় না যেয়ে পড়ার টেবিলে বসেছি।
আর স্যাররা ক্লাসে কি পড়াবেন তার জন্য অপেক্ষা না করে সিলেবাস সম্পন্ন করতাম।
সিলেবাস ধরে সেমিস্টারের শুরু থেকে খাতায় নোট করতাম। এক সাবজেক্টের জন্য কখনো কখনো একশো প্রশ্নের উত্তরও নোট করেছি।
আওয়ার ইসলাম : কখনো কোনো প্রতিকূলতা শিকার হয়েছেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : প্রতিকূলতা সবার জীবনেই আসে। আমি তার শিকার হয়েছি। আগেই বলেছি, আমি একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। শহুরের জীবনের ব্যয় মিটাতে আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এছাড়াও অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম : প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলে কী করতেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : প্রতিকূলতার মুখোমুখী হলে আমার মা, আমার বন্ধুরা ও আমার কাছের মানুষটা আমাকে সাহস দিতো। কোনোভাবে যেনো ভেঙ্গে না পরি সেদিকে খেয়াল রাখতো।
আমিও সাহস হারাতাম না। আমি রাসুল সা. এর সংগ্রামী জীবন থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতাম। আমি ভেবেই নিতাম লেখাপড়া আমার জীবনের অংশ। জীবন রক্ষার্থে প্রতিকূলতা কাটিয়েই আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ার ইসলাম : আপনার অনুজ যারা আপনার স্থানে যেতে আগ্রহী তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : আমি তাদের বলবো, লেখাপড়া সাময়িক কোনো বিষয় না। নিয়মিত লেখাপড়া ছাড়া চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। লেখাপড়া হতে হবে অবশ্যই পরিকল্পিত এবং গোছালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে অনেক উপভোগ্য বিষয় আমাদের চারপাশে ঘোরে। তার পুরোটা উপভোগ করতে চাইলে জীবনের লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। কিছু পেতে হলে অবশ্যই কিছু ত্যাগ করতে হবে।
আওয়ার ইসলাম : আপনার জীবনের পরবর্তী লক্ষ্য কী? এবং তা অর্জনের জন্য কী করছেন?
মুহাম্মদ ইয়াকুব : আমার জীবনের স্বপ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। সেটার জন্য আমি প্রস্তুত হচ্ছি। উচ্চতর লেখাপড়া ও গবেষণার কাজ শুরু করেছি। আর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবে ঢোকার সুযোগ না হয় আমি দেশের বাইরে চলে যাবো।
https://www.facebook.com/awamileague.1949/videos/776382892551571/?t=2201
২৬৫ শিক্ষার্থী পেলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক