আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ।
যিনি ছিলেন একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ ও ইসলামি ব্যক্তিত্ব। বাতিলের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে দেশের আলেম ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন শ্রদ্ধা ও মান্যবর।
খ্যাতিমান এই আলেম রাজনীতিবিদ সম্পর্কে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন তার বাল্যকালের সহপাঠী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব, বিশিষ্ট রাজনীবিদ ও শিক্ষানুরাগী মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক কাউসার লাবীব
মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফের সঙ্গে ঠিক কখন থেকে আপনার পরিচয়?
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে পাকিস্তান আমল থেকে। যখন আমি হিফজুল কুরআন পড়ি। আমরা ইসলামিয়া মাদরাসায় পড়তাম।
সেখান থেকে একসঙ্গে বায়তুল মোকাররম আসতাম। নামাজ পড়তাম। তখন তো কেরাতের খুব প্রচলন ছিল। পল্টন ময়দান ও শুক্রবারে বায়তুল মোকাররমে কেরাত সম্মেলন হতো, সেখানে কেরাত শোনার জন্য প্রায়ই আসা হতো।
তার সঙ্গে কাটানো কিছু স্মৃতিময় সময়ের কথা জানতে চাই।
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: আসলে তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গেলে হাফেজ্জি হুজুরের সন্তানদের একটি বড় বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে হয়- তাদের আচার-আচরণ ও চলা-ফেরায় শারাফাত রয়েছে।
তাদের সবার কুরআন তেলাওয়াত অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও মধুর। শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ রহ. এর সঙ্গে যেহেতু আমার সম্পর্কটা দীর্ঘ দিনের, আমি তাকে দেখেছি, তিনি মানুষকে খুব আপন করে ভালোবাসতেন, কাছে টেনে নিতেন। আর আমাকে তো তিনি ভালোবাসতেন প্রাণভরে ।
আমিও তাকে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে থেকে ভালোবাসতাম।
তার আরেকটিগুণ আমাকে মুগ্ধ করতো, তিনি প্রখর যুক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি তার সপক্ষের বিষয়গুলোকে চমৎকার যুক্তির মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরতেন।
তার সঙ্গে আপনার রাজনৈতিক সম্পর্ক কখন থেকে?
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: পাকিস্তানের পর পরবর্তীতে বাংলাদেশ হওয়ার পরও তার সঙ্গে এবং হাফেজ্জি হুজুরের পরিবারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল অটুট। আর এটা ছিল খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে থেকেই।
এরপর যখন খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা হয় তখন তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে একদম শুরু থেকেই আমি খেলাফত আন্দোলনে যুগ দিই এবং সেখানে তার সঙ্গে কাজ করি।
তার রাজনৈতিক জীবন আপনি কেমন দেখেছেন?
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: তিনি বাতিলের বিরুদ্ধে ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিলেন। বাতিলের সঙ্গে আপোস করতে কখনই তিনি পছন্দ করতেন না।
আপনি জানেন, অপসংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়ার জন্য ‘অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ কমিটি’ নামে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেখানেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
এছাড়া ভণ্ড দেওয়ানবাগীর বিরুদ্ধে চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করিম রহ. এর পাশাপাশি তিনিও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
ইসলামি কিতাব, বয়ান ও মালফূযাতের অন্যন্য অ্যাপ
এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও তিনি দীর্ঘদিন আজান দিয়েছেন। এ আজানের মাধ্যমে তিনি শুধু মানুষকে নামাজের দিকেই ডাকেননি। ইসলামি সমাজ ব্যবস্থারও শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।
আল্লামা আহমাদুল্লাহ আশরাফ রহ. নীতির প্রশ্নে ছিলেন অতুলনীয়। শাসক শ্রেণির কোনো অনৈতিক কাজ কখনই মেনে নিতেন না। হাফেজ্জি হুজুরের ছেলে হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য।
তিনি আপোসহীন মন-মানসিকতা নিয়েই হাফেজ্জি হুজুরের অবর্তমানে খেলাফত আন্দোলন তথা আমিরে শরিয়তের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামের জন্য তিনি আমরণ লড়ে গেছেন।
তার সঙ্গে কাটানো কিছু সময়ের বিশেষ মুহূর্তের কথা যদি বলতেন!
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: তিনি বায়তুল মোকাররমের মিম্বরে বসে উপস্থিত শ্রোতাদের কুরআন তেলাওয়াত শোনাতেন। মানুষও প্রাণ ভরে তার কেরাত শুনতেন।
এটা আমি সেই সময়ের কথা বলছি, যখন কারি বেলায়েতুল্লাহ, শায়েখ ইউসুফ ও কারি হাবিবুল্লাহ বেলালি বায়তুল মোকাররমের মিম্বর কুরআন তেলাওয়াতে জাগিয়ে রাখতেন।
শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ যখন কেরাত পাঠ করতেন, তখন যদি আমি উপস্থিত হতাম, তিনি লোকজনকে সরিয়ে আমাকে আলাদাভাবে সময় দিতেন।
মাঝেমাঝে তার কক্ষে নিয়ে আমার সঙ্গে অনেক ব্যক্তিগত বিষয়, রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করতেন। রাজনৈতিক ময়দানের অস্থিতিশীলতা, ইসলামিক রাজনীতির অপ্রত্যাশিত কিছু বিষয় ও আরো অনেক বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলতেন। ওই সময়গুলোর কথা খুব মনে পড়ে।
আপনার জানা মতে তার কিছু স্বপ্নের কথা জানতে চাই।
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: তার ইচ্ছে ছিল হাফেজ্জি হুজুর যাদের রেখে গেছেন তাদের নিয়ে এক প্লাটফর্মে ইসলামি হুকুমত কায়েম করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার।
এছাড়া তিনি আবহমান অস্থিতিশীলতা থেকেও দেশ ও মুসলমানদের বের করে আনার স্বপ্ন দেখতেন।
সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে বরেণ্য দুই আলেমের বিদায়