রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম
মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছে সোমবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর-জি লাইসেন্স হস্তান্তর করবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন। লাইসেন্স পাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মোবাইল অপারেটরগুলো চালু করবে চতুর্থ প্রজন্মের এই মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা। সে হিসেবে আজই ৪জি যুগে অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশ।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ফোর-জি লাইসেন্স হস্তান্তরের আয়োজন করা হয়েছে। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের শীর্ষ নির্বাহীদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া হবে। দীর্ঘদিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিটিআরসি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিলামে অপারেটরদের স্পেকটার্ম টেকনোলজি সরবরাহ করে।
ব্যবহারকারীরা যা পেতে চলেছে
আমরা থ্রিজি ও ফোরজি নিয়ে অনেক কথা বলছি। কিন্ত অনেকেই জানেন না থ্রিজি থেকে ফোরজি আসলে মানুষ কি ধরনের উন্নত সেবা পাবে।
থ্রিজিতে এক জিবি ফাইল ডাউনলোড করতে লাগতো ২০ মিনিট সেখানে ফোরজিতে লাগবে মাত্র ৫ মিনিট। অনলাইনে থ্রিজির মাধ্যমে ভিডিও দেখলে বাফারিং হতো, এই সমস্যা এখন আর থাকবে না।
বিশ্বের অনেকে দেশেই ঘরে বসেই অনলাইন সরাসরি ক্লাস করা সম্ভব, আমাদের দেশেও এই সুবিধা আছে। তবে ঢাকার বাহিরে থেকে ইন্টারনেট গতি কম থাকাতে ক্লাস করা সম্ভব ছিল না। ফোরজির কল্যানে এখন এই সমস্যা দূর হবে।
বাংলাদেশে থ্রিজি প্রযুক্তির আরেকটি বড় বাধা- এখানে এই সেবা প্রযুক্তি স্পেকট্রামের যে ব্যান্ডে দেওয়া হয়েছে (২১০০ ব্যান্ড) তার বড় দুর্বলতা হলো এটি পাশাপাশি উঁচু ভবন থাকলে বেজ স্টেশন বা টাওয়ারের মাঝে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়ে যায়। তাই নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায় না। ফলে শহরের বড় বড় ভবনের অলি-গলিতে নেটওয়ার্কও ভালো মেলে না।
ফোরজিতে এখানেই সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হবে। কারণ, অপারেটররা যে কোনো ব্যান্ডেই ফোরজি সেবা দিতে পারবেন। ফলে ভালো নেটওয়ার্কের বড় অগ্রগতি হবে এর মাধ্যমে। কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার– দুই ক্ষেত্রেই তা হবে।
দেশে এখন থ্রিজি প্রযুক্তির ইন্টারনেটের গড় গতি ৩ দশমিক ৭৫ এমবিপিএস। অন্তত টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হিসাব তাই বলছে। থ্রিজি আসার আগে এটি কতো ছিলো? নিশ্চিতভাবে সেটি ছিলো কেবিপিএস গতির মধ্যে। আর ফোরজি হলে গতি অন্তত এমবিপিএসের হিসাবে দশকের ঘরে চলে যাবে। তারপরেও গ্রাহক সন্তুষ্ট নাও হতে পারেন।
দেশে থ্রিজি চালু হওয়ার শুরুর দিকে মোবাইল ইন্টারনেটের সংযোগে প্রতি মাসে ডেটার ব্যবহার ছিলো ৯০ এমবি। আর এখন সেটি সাড়ে ছয়শ এমবি! পাঁচ বছরে ডেটা ব্যবহারের হার শুধু মোবাইল ফোনেই বেড়েছে সাতগুণ। ফোরজি যুগের সাত বছরে এটি আরো সাত থেকে দশগুণ পর্যন্ত বাড়বে বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরো একটি বিষয় হলো ফোরজি চালু হলে যারা ফোরজি ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন তারা মূলত বড় ভলিউমের ইন্টারনেটই ব্যবহার করবেন। এতোদিন তারা থ্রিজি ব্যবহার করতেন। তারা থ্রিজি থেকে ফোরজিতে চলে আসলে থ্রিজি’র স্পেকট্রামের ওপর চাপ কমবে এবং যেখানে ফোরজি নেটওয়ার্ক থাকবে না সেখানে থ্রিজি পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো হবে।
দেশে যতো হ্যান্ডসেট ব্যবহার হচ্ছে তার মাত্র দশ শতাংশের মতো সেটে ফোরজি সেবা গ্রহণ করা সম্ভব। গ্রামীণফোনের সিইও গত সোমবার দাবি করেছেন তাদের গ্রাহকদের ১৪ শতাংশের হাতে ফোরজি সেট রয়েছে।
থ্রিজি যেমন ইন্টারনেটের গতি-ই বাড়ায়নি, সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নতুন নতুন সেবাকে ইন্টারনেটের ওপর তুলে দিয়েছে। ফোরজিতেও দেখবেন অনেক প্রচলিত সেবা ইন্টারনেট-ভিত্তিক হয়ে যাবে। আর পার্থক্যটা বোঝা যাবে তখনই।
থ্রিজি ইন্টারনেট চালু হওয়ার আগেই কি আমরা ভাবতে পেরেছি, আপনার ডিভাইসে কয়েকটি বাটনে চাপ দিলেই বাসার গেটে গাড়ি এসে হাজির হবে? বা অর্ডার করলেই খাবার হাতে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যাবেন কেউ? ড্রাইভার, মিস্ত্রি- কী লাগবে? সব পাবেন এখন অনলাইনে। গোটা ইকোসিস্টেমে এমন হাজার রকমের সেবা যুক্ত হয়ে যাবে ফোরজি’র ছোঁয়ায়।