যুবাইর হানীফ : দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর্যন্ত দেওবন্দ প্রান্তরে কোন মাসজিদ ছিল না ৷ ছাত্ররা মহল্লার আশপাশের মাসজিদেগুলোতে নামায আদায় করত৷ পরিস্থিতির ব্যাপক চাহিদা ছিল, দারুল উলুমের ভেতরে মাদরাসার নিজস্ব মসজিদ হোক৷ কিন্তু, মাদরাসার অর্থশূন্যের কারণে দীর্ঘ ৫৩ বছর পর্যন্ত নিজস্ব মসজিদ নির্মাণ হয়নি দেওবন্দ প্রান্তরে।
অবশেষে ১৩২৫ হিজরিতে হাজী ফাসিহুদ্দীন মিরাঠী রহ.-এর আর্থিক সহযোগিতায় সদর গেইটের কাছে কিছু জমি কেনা হয় ৷ পরে ১৩২৭ হিজরিতে রান্দীর বড় ব্যবসায়ী হাজী গোলাম মুহাম্মদ আ'জম রহ. মসজিদ নির্মাণে ১৯ হাজার রূপি দান করেন ৷ওই বছরের ৪ রবিউল আওয়ালে মাসজিদের ভিত্তিস্থাপন করা হয় ৷
একঝাঁক আকাবিরে দেওবন্দের মুবারক হাত ধরে ছাত্রদের সামনে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন হয় ৷তারপর ছাত্ররা স্বানন্দে-স্বেচ্ছায় ইট, মাটি আনয়নের কাজ করতে লাগল৷ শুধু ইট আনা নয়, বলা যায় দেওয়ালের পুরো কাজ ছাত্ররাই সম্পাদন করে৷
শুধু তাই নয়! ছাত্রদের সাথে দারুল উলুমের সকল উস্তাদ, কর্মচারী খুবই আগ্রহ নিয়ে নিজেদের মাথায় ইট বহন করে মসজিদের কাজ করতে থাকেন।
হাকিম মাসউদ আহমদ খলিফায়ে গাঙ্গুহী রহ, মাওলানা আব্দুর রহিম রায়পুরী রহ. , সদরুল মুদাররিসীন শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ., মুহতামিম মাওলানা আহমদ সাহেব রহ. ও ছাত্রদের মতো ইট, কাঁদামাটি বহন করে, মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেন৷
মসজিদটির নির্মাণ কাজ ১৩২৮ হিজরিতে শেষ হয়৷ নাম রাখা হয় “মসজিদে কদিম”। ১৩৪৯ হিজরিতে মসজিদটিতে আরো বেশ কিছু সংস্কারের কাজ করা হয় ৷ মসজিদের আঙ্গিনা বাড়ানো হয়৷
দু্ই তলা বিশিষ্ট এই মসজিদের পূর্বদিকে বাহিরে দেয়ালটি পাথরে নির্মিত৷ যাতে মরমর পাথরে খচিত খুবই দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য করা হয়েছে৷ একটি সুউচ্চ মিনার মসজিদে কদিমের সৌন্দর্য আরও দিগুণ করেছে৷
১৩৭৫ হিজরিতে আঙ্গিনার শেষের দিকে দারুল ইফতা ভবনের নিচে পাথরের হাউজ তৈরি করা হয় ৷
মরমর পাথরে মোড়ানো এই মসজিদদের ভেতরের আয়তন ৪২ বাই ৩৩ স্কয়ার ফিট এবং বাহিরের অংশের অায়তন ১১৮ বাই ৫০ ফিট। ১৯৮০ সালে শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এসব পরিবর্তন আনা হয় ৷
বর্তমানে দারুল উলুমের অধিকাংশ আকাবির এই মসজিদে নিয়মিত নামায আদায় করে থাকেন৷
লেখক : শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ
তথ্যসূত্র : মুখতাসার তারিখে দারুল উলুম দেওবন্দ