রোকন রাইয়ান
নির্বাহী সম্পাদক
নবীজিকে বাস্তবে দেখার সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি মুসলিম হৃদয়ে স্বপ্ন পুষেন স্বপ্নে যেন দেখা দেন পেয়ারা নবী হজরত মুহাম্মদ সা.। যার দর্শন খুলে দেবে হৃদয়ের সব যাতনা। চোখে আনবে পরম তৃপ্তি। আমৃত্যু স্মৃতিতে অমলিন থাকবে সেই দৃশ্য।
নবীজিকে স্বপ্নে দেখা মানুষ বহু। হাজারও অলি আউলিয়া রাসুল সা. এর দিদার পেয়েছেন স্বপ্নে। সেই দর্শন পৃথিবীর তাবত সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে গেছে। কিন্তু রাসুল সা. কে স্বপ্নে দেখার অভিব্যক্তি সাধারণত কেউ প্রকাশ করেন না। কারণ এটি একান্তই এক ব্যক্তিগত ব্যাপার।
তবে তিনজন অধ্যাপকের রাসুলকে স্বপ্নে দেখার কথা তুলে এনেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসী। রাসুল সা. এর পদপ্রান্তে বইতে যা লিপিবদ্ধ হয়েছে। ওই তিন অধ্যাপকেরই অভিব্যক্তি ছিল, আমি রাসুলকে স্বপ্নে দেখেছি, আমার জীবন ভরে গেছে।
হ্যাঁ ভরারই কথা। এমন দর্শন পৃথিবী ত্রিকোলে আর যে নেই। সেটা যে দেখেছেন কেবলমাত্র সেই বুঝতে পারবেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী লিখেছেন, নবীজিকে স্বপ্নে দেখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। নিজের ঘরের মানুষের কথা বাদ দিয়ে তিনজনের কথা বলি।
আ. ন. ম. বজলুর রশীদ, শান্ত ধীর, মিষ্টি কথার মানুষ। শিক্ষকদের পড়িয়েছেন, আর সারা জীবন সাহিত্য সাধনা করেছেন। একদিন ভোর বেলা আমার বাসায় এলেন, বহু দিন আগে, সাল তারিখ আর মনে নেই।
বললেন, আপনাকে একটি দুটি বই উপহার দিতে এসেছি। অবাক হয়ে গেলাম। এত ভাল মানুষও পৃথীবিতে আছে, নিজে বই লিখেছেন, আবার বাড়ি এসে উপহার দিতে এসেছেন। সমাদর করে ঘরে এনে বসালাম।
যা বললেন, আরো অবাক করা। ভুলার মত নয়। আমি নবীজিকে স্বপ্নে দেখলাম, এত সুন্দর মানুষ আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমি ভাষা দিয়ে তাঁর বর্ণনা দিতে অপারগ। তবু লিখেছি, ‘কত যে সুন্দর ছিলে’ আমার জীবনের শ্রেষ্ট ফসল।
নবীজির জন্যে আপনারও মনের কোণে অনেক প্রীতি লক্ষ করেছি যখন আপনি নাত পরিবেশন করেন। আর আপনার আব্বার তো কথাই নেই। তাই এই বইটি নিয়ে এসেছি আপনার হাতে তুলে দেব বলে।
এ তো গেল প্রথম জনের কথা। এবার শুনুন দ্বিতীয় জনের গল্প যিনি রাসুলকে স্বপ্নে দেখে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন- আমার জীবন ভরে গেছে।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম ৫৬-৬০ সনে, পলিটিক্যাল সায়েন্স ছিল আমার সাবসিডিয়ারি। ড. জি. ডব্ল. চৌধুরী আমাদের পড়াতেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ভালো শিক্ষকই শুধু নন, তাঁর ব্যবহারটি ছিল মনে রাখার মতো। বহু বই লিখেছেন এবং দেশে বিদেশে সম্মানও পেয়েছেন প্রচুর।
এক দিন আমাকে ফোন করে বাসায় চলে আসলেন। বললেন, বাবা, তুমি তো আমার ছাত্র, জান আমার জীবনে এক বিষ্ময়কর ব্যাপার ঘটেছে, যা আমি তোমাকে বলার জন্য ছুটে এসেছি। আমি নবীজিকে স্বপ্ন দেখেছি। আমার জীবন ভরে গেছে।
১৯৮৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে আমি অনেক পড়াশুনা করে নবীর উপর একটি বই লিখি। সেই বইটির নাম ‘the prophet Muhammad[sm], his life and etenal message`.
এরপর অনেক দিন তার বাসায় গেছি আমার স্ত্রীকে নিয়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা তাঁকে নাতে রাসূল শুনিয়েছি, আর তিনি সারা মনপ্রাণ ঢেলে নবী প্রেমে উতলা হয়ে যেতেন।
একদিন তাঁর বইটি ছাপা হলো, আমাকে উপহার দিলেন, লিখলেন, Let allah the merciful inspite my very affectionate abbasi and his family with the eternal message of prophet Muhammad[sm].9.7,94.। বছর দেড়েক আগে তাঁর ইন্তেকাল হয়।
এবার শুনুন তৃতীয় জনের গল্প যিনি ছিলেন হিন্দু পণ্ডিত কিন্তু রাসুল সা.কে স্বপ্নে দেখার পর ইসলাম গ্রহণ করে ফেলেন।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখা রোকন রাইয়ানের বই সুখিয়া
ড. ইসলামুল হক ছিলেন একজন আচর্য হিন্দু পণ্ডিত। নবীজি তাকে স্বপ্নে দেখা দেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ইসলাম কবুল করেন। ঢাকায় যথন তিনি এলেন তার বক্তৃতা শুনতে যাই, বেশ কয়েক বছর আগে। দীন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞান আধুনিক ও মন ছুঁয়ে যাওয়া। নবীজির স্পর্শে তিনি ধন্য, তা তার প্রতিটি বাক্যের মধ্যে পরিস্ফুট। তিনিও কিছু দিন আগে ইন্তেকাল করেছেন।
দুনিয়ায় কে ভালো কে মন্দ সেটা বিচার মুশকিল। কে জান্নাতে যাবেন আর কে জাহান্নামে সেটাও আল্লাহর হাতে। তাই মানুষের উপরটা দেখেই সব সময় মন্তব্য করা অনুচিত।
নবীজিকে স্বপ্নে দেখার অনেক আমল রয়েছে। আছে বেশ কিছু বইও। কিন্তু এসব আমল করলেই যে তিনি নবীজিকে স্বপ্নে দেখবেন এর কোনো নির্ভরতা নেই। আবার অনেকে সারাজীবন আল্লাহ রাসুলের নাম নিয়েছেন, বন্দেগী করেছেন তাকেও রাসুল সা. দেখা দিতে নাও পারেন।
প্রকৃত সত্য সেটাই, উপমাহীন এ দর্শনের জন্য পরিচ্ছন্ন মনন, আত্মবিশ্বাসী মানসিকতা ও গ্রহণযোগ্য আমলই জরুরি।
আগামীকাল পড়ুন ড. ইসলামুল হক ইসলামগ্রহণের বৃত্তান্ত