আতাউর রহমান খসরু
বার্তা সম্পাদক
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ১০ম কাউন্সিল।
তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল না হওয়ারও আশঙ্কা করছেন নেতৃবৃন্দ।
বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আশরাফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দেশের যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক নয়। ফলে মফস্বলের মাদরাসার কাউন্সিলরগণ উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া কঠিন।আবার এ পরিস্থিতি আল্লামা আহমদ শফীকে ঢাকায় উপস্থিত করানোও নিরাপদ নয়। এসব বিবেচনায় কাউন্সিল পিছিয়েও যেতে পারে।
তবে কাউন্সিল পেছানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই স্পষ্ট জানিয়েছেন বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।
নির্ধারিত সময় থেকে কয়েক মাস পর হতে যাওয়া এ কাউন্সিল ঘিরে নানামুখি আলোচনা চলছে কওমি অঙ্গনে।
সম্ভাব্য মহাসচিব, সরকারের স্বীকৃতি ও বেফাকের ভূমিকা, শুরা ও আমেলার আয়তন বৃদ্ধি, পরীক্ষা কাঠামোতে পরিবর্তনসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে আলোচনার শীর্ষে।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বেফাক আজ দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি শিক্ষা বোর্ড। এর অধীনে রয়েছে দেশের ১২ হাজার মাদরাসা। মাদরাসার অন্তর্ভূক্তির পরিমাণ বাড়ছে নিয়মিত। বাড়ছে দায়িত্বের পরিধি ও কাজের চাপ। সে হিসেবে অনেকের প্রত্যাশা দায়িত্বশীল স্তরে উদ্যোমী কোনো তরুণ উঠে আসুক। যিনি বেফাকের বিশাল কর্মযজ্ঞ আঞ্জাম দিতে হাঁপিয়ে উঠবেন না।
বইমেলার নতুন সব বই ঘরে বসে পেতে রকমারিতে অর্ডার করুন
এমন সম্ভাবনা কতোটুকু? দাবিটাও বা কতোটা যৌক্তিক? বেফাকের সহ-সভাপতি আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ মনে করেন, ‘তরুণ নেতৃত্ব উঠে আসা ইতিবাচক। তবে বেফাক যেহেতু একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তাই এখানে ধারও (কর্মোদ্যোম) লাগবে, ভারও (বয়স ও অভিজ্ঞতা) লাগবে।
আমি তরুণদের ভেতর এমন কাউকে দেখছি না যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে বড়রা নিশ্চিন্ত হতে পারেন।’
তবে নতুন নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগটা কাউন্সিল ও পরবর্তীতে গঠিত কমিটিতে থাকা উচিৎ বলে তিনি মনে করেন তিনি।
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তা এভাবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব একজন সিনিয়র ব্যক্তি পালন করবেন। কিন্তু তার সহযোগী হবেন তরুণদের মধ্য হতে সবচেয়ে যোগ্য একজন। যে তার পরে এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।’
বেফাক কাউন্সিলে মহাসচিব পদটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। কার্যত তিনিই বেফাক পরিচালনা করে থাকেন। এবারের কাউন্সিলে কে মহাসচিব নির্বাচিত হবেন তা নিয়ে বাড়তি আগ্রহ ও আলোচনা রয়েছে কওমি অঙ্গনে।
সংশ্লিষ্ট মহলে দুটি নামই বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
বেফাকের একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব বানানোর সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছেন। তবে তারা মাওলানা মাহফুজুল হকের সম্ভাবনার কথাও জোর দিয়ে বলেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিবের পদ পালন করে আসছেন। তিনি রাজধানীর বৃহত্তর মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়া সাত মসজিদ মুহাম্মদপুরের প্রিন্সিপাল। এছাড়া প্রতিষ্ঠাকালীন সেক্রেটারি শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর ছেলে।
মহাসচিব পদে আলোচনায় আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া দারুল আরকামের প্রিন্সিপাল মাওলানা সাজিদুর রহমান ও ঢাকার মাখজানুল উলুমের প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলামও।
এদিকে বেফাকের মহাসচিব হওয়ার আলোচনায় শিক্ষাবিদ আলেম মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বেফাকের সাবেক মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ. এর ছেলে। এ হিসেবে অনেকের পছন্দ তার প্রতি।
তাদের বক্তব্য, শিক্ষা দীক্ষা ও কৌশুলি হিসেবে সমাজে তার অন্যরকম অবস্থান রয়েছে। তাকে মহাসচিব বা অন্য কোনো পদে দেখা গেলে খুব অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
তবে কারো কারো অভিমত, তিনি বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মরহুম আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার স্থানেও আসতে পারেন।
তবে মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া রহ. এর পদে মারকাজুশ শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, রাজধানীর জনূরুদ্দীন দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ আবু মুসা, ইসলামবাগ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সায়দাবাদ বায়তুন নুর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মনিরুজ্জামানও আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে একাধিক আলাপে শোনা গেছে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসতে পারে বেফাকের কমিটিতে। এছাড়া সহসভাপতির পদ সম্প্রসারণ হতে পারে বলেও জানা গেছে একাধিক সূত্রে।
কমিটির মহাপরিচালক পদেও রদবদল হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমান মহাপরিচালক মাওলানা যুবায়ের আহমদ চৌধুরীর জায়গায় আলোচনায় আছেন ফরিদাবাদের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা নূরুল আমিন।
মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছিলাম বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচন সামনে এলে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে যথা নিয়মে কাউন্সিলররাই পরবর্তী চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচন করবেন। সেটা আলোচিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেও হতে পারে আবার অন্য কেউ-ও হতে পারেন।’
বেফাকের কাউন্সিল সামনে রেখে তৈরি হওয়া আরেকটি গুঞ্জন হলো হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালকের জন্য চেয়ারম্যান ও ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসার জন্য মহাসচিব পদ বরাদ্দ দেয়া। অর্থাৎ হাটহাজারী মাদরাসার যিনি মহাপরিচালক হবেন তিনিই পদাধিকার বলে বেফাকের চেয়ারম্যান হবেন এবং যিনি ফরিদাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল হবেন তিনিই বেফাকের মহাসচিব হবেন।
প্রতিবেদক বেফাকের উল্লিখিত দু’জন সহসভাপতিসহ একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা খুঁজে পান নি। বরং আল্লামা আনোয়ার শাহ বিষয়টি অযৌক্তিক ও আইনত অসম্ভব বলে দাবি করেছেন।
মাওলানা মুসলেহুদ্দিন রাজু বলেছেন, ‘বিষয়টি হতে গেলে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে করতে হবে। আমি গঠনতন্ত্র সংশোধনের কাজে সম্পৃক্ত আছি। এমন কোনো পরিবর্তন এখানে আসে নি।’
বেফাকের কাউন্সিল ও নেতৃত্ব নিয়ে গুঞ্জন যা-ই হোক সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে এমনটিই আশা করছেন বেফাকের সাথে সম্পৃক্ত সবাই।
দেশের অন্যতম বৃহৎ মাদরাসা মাদারীপুরের জামিয়াতুস সুন্নাহ-এর পরিচালক মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ ফরিদীর প্রত্যাশা বেফাকের নতুন কমিটি ও নেতৃত্ব হবে সব প্রশ্নের উর্ধ্বে। কারণ, বেফাক এ দেশের কওমি অঙ্গনের নেতৃত্ব দানকারী শিক্ষাবোর্ড।
তিনি আরও বলেন, বেফাকের আয়তন বেড়েছে। নতুনভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। অন্তর্ভূক্ত হওয়া মাদরাসাসমূহে যেসব দেশবরেণ্য আলেমগণ করেছেন তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে আমার আশা।
বেফাক কাউন্সিল : কাফিয়া জামাতে বোর্ড পরীক্ষাসহ আসছে ৫ পরিবর্তন