শাহনূর শাহীন, সাব এডিটর: ২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করে দূর্নীতি দমন কমিশন(দূদক)।
চূড়ান্ত শুনানি ও যুক্তি তর্ক শেষে সম্প্রতি আদালত ওই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে ৮ ফেব্রুয়ারি। এই রায়কে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমেথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রতিদিনের মতো রাত ৯টায় মুগদা অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে রওনা দিয়ে অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান কড়া নজরদাড়িতে যানচলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে।
রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যাও খুব কম। পাশাপাশি যাত্রীও নেই বললেই চলে। সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে দিনের আলো থাকতেই। রাজধানীর বিভিন্নগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের বাড়তি টহল-তল্লাশি, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন প্রশাসনের সতর্ক অবস্থানের কথাই জানান দিচ্ছে।
রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জন নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় সভা বন্ধের খবর পাওয়া গেছে। সর্বোপরি আইনশৃঙ্খলা জনিত অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে লোক জমায়েত সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রোগ্রাম প্রশাসন এবং কিছু কিছু জায়গায় আয়োজক কর্তৃপক্ষ কর্তৃকও স্থগিতের খবর পাওয়া গেছে।
রাস্তা-ঘাট ও চায়ের দোকানে গণআলাপে একটাই প্রশ্ন কী হবে কাল? আদালতের রায়ে কি খালেদা জিয়ার সাজা হবে, নাকি তিনি মুক্তি পাবেন। সাজা হলে বিএনপির ভূমিকা কী হবে কিংবা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে।
বিএনপি সমর্থনকারী বা সমমনা অনেকের মন্তব্য, রায়ে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। তাদের দাবি গণমাধ্যম সূত্র মতে সরকার পক্ষ আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। সুতরাং তিনি মুক্তি পাবেন।
কিন্তু সরকার যদি রায়ে প্রভাব খাটিয়ে খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণার চেষ্টা করেন সেক্ষেত্রে তারা দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকবেন। তবে বিএনপি দলীয় কর্মীরা মনে করছেন একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সর্ব বৃহত রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সরকার এমন আাত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবেন না।
অন্যদিকে সরকার দলীয় সমর্থকরা মনে করছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হন বা যেই হন না কেন কেউ আইনের উর্ধ্বে নন। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও নন, যেমনটা সরকার প্রধান প্রায়ই বলেও থাকেন।
তাদের মতে, আদালতে খালেদা জিয়া দোষী প্রমাণিত হলে সাজা পাবেন। আর আদালত যে রায় ঘোষণা করেন তা সকলকে মেনে নিতে হবে। আদালতের রায় নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। যতি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন তাহলে প্রশাসন তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করবে।
এনিয়ে গুলশানে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি। কোনো দুর্নীতি আমি করিনি।
তিনি বলেন, ন্যায় বিচার হলে আমার কিছু হবে না, আমি বেকসুর খালাস পাব। আর যদি শাসক মহলকে তুষ্ট করার জন্য অন্য কোনো রায় হয়, তাহলে তা কলঙ্কের প্রতীক হয়ে থাকবে।
তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতেই এই মামলায় ‘সাজানো রায়’ দেয়া হচ্ছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খালেদা।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মেজর মো. আখতারুজ্জমান (অব) বুধবার দেশের বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ নিবন্ধে বলেছেন, বিএনপি পরিপক্ব, অভিজ্ঞ ও সময়ের পোড় খাওয়া দেশের অন্যতম একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলের কর্মীরা এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, নেত্রীর প্রতি অবিচল অনুগত ও পূর্ণ আস্থাশীল রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান একইভাবে জনপ্রিয় বিশেষ করে তরুণদের কাছে একজন আইডল নেতা। বিএনপিতে রয়েছে সুস্পষ্ট গঠনতন্ত্র এবং ক্ষমতা ও দায়িত্বের পরিষ্কার বিন্যাস ও বিধান।
নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, যেখানেই থাকুন না চেয়ারপারসনের অবর্তমানে দলের দায়িত্ব পালন করবেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির গঠনতন্ত্রের প্রতি ১০০ ভাগ অনুগত।
এদিকে মেজর আখতারুজ্জামানের এই বিশ্লেষণ ও মিডিয়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সতর্ক বক্তব্যে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন রায়ে যদি খালেদা জিয়ার সাজা ঘোষণা করা হয় বিএনপি সেটা ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে।
সেক্ষেত্রে তারা কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি তৈরির দিকে যাবে না। এবং দলের নেতৃত্বে সূদুর লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর আস্থা রেখে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতাো আশা করছেন সরকার বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ তারা মনে করছেনএকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতৃর বিরুদ্ধে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণিত সিদ্ধান্ত বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
আর সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে বিএনপি নেতার আশা করছেন।
দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয় আদালতের রায়ে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত।
এসএস/